অজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কাজল

অজয় ও কাজল
অজয় ও কাজল

তানহাজি ছবির প্রচারে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন কাজল। এই ছবির সঙ্গে কাজলের সম্পর্কটা পারিবারিক। স্বামী অজয় দেবগন ছবিতেও কাজলের স্বামী এবং এই ছবির প্রযোজকও। তাই তানহাজি শুধু সিনেমা নয়, হয়ে উঠেছে কাজলের ঘরের সদস্য। 

ছবির প্রচারণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এক শীতের সকালে দেখা হয় কাজলের সঙ্গে। দেখা হতেই এক গাল হেসে কাজল বললেন, ‘মনে হচ্ছে বাঙালি?’ সম্মতি জানাতেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠেন বলিউডের এই দাপুটে অভিনেত্রী। 

অজয়ের সঙ্গে তানহাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র ছবিতে অভিনয় করেছেন কাজল। এই প্রথম কোনো ঐতিহাসিক ছবিতে কাজ করলেন তিনি। পর্দায় অজয়কে দেখা যাবে ঐতিহাসিক মারাঠি শাসক শিবাজির সেনাপতি ও বীর যোদ্ধা ‘তানহাজি’র চরিত্রে। তানহাজির স্ত্রী সাবিত্রী বাই মালুসরের চরিত্রের জন্য অজয় বেছে নেন কাজলকে। অজয়ের এই স্বপ্নের সিনেমাকে ‘হ্যাঁ’ বলতে বিন্দুমাত্র সময় নেননি এই বলিউড সুন্দরী। কাজল বলেন, ‘আমার অভিনীত “সাবিত্রী” চরিত্রটি খুবই প্রভাবশালী। আমাকে এই ছবির জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়নি। পরিচালক ওম রাউত পাঁচ বছর ধরে এই ছবির ওপর গবেষণা করেছেন। ছবির গল্প ৫০০ বছর আগের ঘটনা ঘিরে। ওই সময়ের কিছু লেখার ওপর ভিত্তি করে পুরো সিনেমার ভিত। ইতিহাস বিকৃত না করে নিজেদের মতো করে ছবিটিকে যত্ন নিয়ে বানানো হয়েছে।’ 

অজয়ের অভিনয়জীবনের ১০০তম ছবি তানহাজি। এই বিশেষ উপলক্ষে কাজল আছেন অজয়ের সঙ্গে। এ নিয়ে তো দারুণ উচ্ছ্বাস এই বাঙালি বলিউড অভিনেত্রীর। এ নিয়ে কাজল বলেন, ‘এ ঘটনা আকস্মিক। অজয়ের এই সফর সত্যি চমকপ্রদ। তানহাজি অজয়ের ১০০ তম ছবি হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি একটি পোস্ট লিখেছিলাম। পোস্টটি লেখার সময় অজয় অভিনীত অজস্র স্মরণীয় ছবি আর চরিত্রের নাম মাথায় ভিড় করে। আর আমি তা লিখতে লিখতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। অজয় দারুণ সব সিনেমা করেছে। ওর এই সফরের সবচেয়ে ভালো দিক এটাই।’

দীর্ঘদিন পর আবার স্বামী অজয়ের সঙ্গে সেটে কাজল। তাঁদের রসায়ন কতটা বদলেছে, তার জবাবে কাজল জানান, ‘আমরা অনস্ক্রিনে বোধ হয় ১০টি ছবি করেছি। আর অফস্ক্রিনেও আমরা অনেক কাজ করেছি (সশব্দে হেসে)। তাই আমরা সব সময় ক্যামেরার সামনে সাবলীল। সেটে অজয় ৫০ শতাংশ অভিনেতা, বাকি ৫০ শতাংশ পরিচালক। খুব সিরিয়াস। আমি চাই যে আমার সব সহ-অভিনেতা যেন অজয়ের মতো হয়।’

ছেলে যুগ ও মেয়ে নাইসার সঙ্গে কাজল–অজয় দম্পতি
ছেলে যুগ ও মেয়ে নাইসার সঙ্গে কাজল–অজয় দম্পতি

এ তো গেল পর্দায় দেবগন দম্পতির রসায়নের কথা। পর্দার বাইরেও তাঁদের জুটি অত্যন্ত সফল। এই সফল দাম্পত্যের রহস্য কাজল জানালেন লাজুক হাসি হেসে, ‘আপনার সবচেয়ে কাছের সম্পর্কগুলোকে আরও গভীরভাবে অনুভব করার জন্য রোজই কিছু না কিছু করতে হয়। অতিরিক্ত কিছু দিতে হয়। এই ধরুন, চারাগাছে রোজ জল দিতে দিতে একসময় তা বড় হয়। গাছটি বড় হওয়ার পরেও কিন্তু নানাভাবে আপনাকে এর যত্ন নিতেই হবে। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই, যত্নশীল থাকতে হবে সব সময়। সম্পর্কের গায়ে রোজ রোজ নতুন নতুন রঙের আঁচড় দিতে হবে। আমরা দুজনই এ বিষয় মাথায় রাখি।’ 

এই আড্ডার মধ্যেই উঠে আসে কাজলের মা অভিনেত্রী তনুজার কথা। কাজলের জীবনে মায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। মা–বাবা বৃদ্ধ হলে অনেকে তাঁদের ছোট বাচ্চার সমতুল্য ভাবেন। আর তা একদম অনুচিত মনে করেন কাজল। বলিউডের এই দাপুটে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি আমার মাকে কখনো শিশুর মতো দেখি না। আমি কখনোই বিশ্বাস করি না যে মা–বাবার বয়স বাড়লে ছোট বাচ্চার মতো হয়ে যায়। তবে আমাদের উচিত তাঁদের যথাযথ খেয়াল রাখা। আমরা তাঁদের যতটা খেয়াল রাখি, তার চেয়ে অনেক বেশি খেয়াল তাঁরা আমাদের ছোটবেলায় রেখেছেন। আমার মা আমাকে বড় করতে যা যা করেছেন, আমি তার ১ শতাংশও করতে পারব না।’ 

দুই দশকের বেশি সময় ধরে বলিউড সরব কাজল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ইন্ডাস্ট্রির বদলে যাওয়া নিয়ে কাজল বলেন, ‘আজও আমি একই রকমভাবে সেটে অত্যন্ত সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত। যদিও ক্যামেরার সামনে কাজ করার ধরন এখন বদলে গেছে। এখন বিশ্ব সিনেমার দরবার সবার কাছে উন্মুক্ত। জার্মান, কোরিয়ান, আইরিশসহ নানা ফিল্ম মানুষ দেখছে। দর্শক বদলেছে, রুচি বদলেছে। এর তালে তালে তারকাখ্যাতির পরিভাষাও বদলেছে। এই সময় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়, তারকা খ্যাতিকে এখন অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। আগে আমরা পর্দায় যে নায়ক-নায়িকাদের দেখতাম, সেই ছবিই আমাদের মাথার মধ্যে থেকে যেত। নায়িকাদের বয়স সেখানেই থমকে যেত। আমরা কখনো সেই নায়িকাদের বড় হয়ে উঠতে দেখিনি। নায়ক-নায়িকাদের ঘিরে এক কল্পনার জগৎ ছিল। এখন আর সেটা নেই।’