২২০টি চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ‘উইন্ডো টু দ্য সি’র একটি দৃশ্য। ছবি:সংগৃহীত
উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ‘উইন্ডো টু দ্য সি’র একটি দৃশ্য। ছবি:সংগৃহীত

পৌষের শেষবেলায় শীতের আমেজের সঙ্গেই ঢাকা মাতবে চলচ্চিত্র উৎসবে। বড় পর্দায় দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ থাকছে এ উৎসবে। ১১ জানুয়ারি শুরু হবে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০২০’। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান নিয়ে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।

ইতিমধ্যে উৎসবের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। উৎসবে দেখানো হবে—এমন চলচ্চিত্রগুলোর বিষয়ে সেন্সর বোর্ডের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। চলছে উদ্বোধনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে বরাবরের মতোই এবারের উৎসবেও এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানোরমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগে ৭৪টি দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন আয়োজকেরা। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন উৎসব কমিটির চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল, উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল, উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য মফিদুল হক, উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ, উৎসব কমিটির প্রধান প্রোগ্রামার জওরে জামানি, উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য নাজমুল এ কলিমুল্লা প্রমুখ।

ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ। ছবি: প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল জানান, আগামী শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ‘উইন্ডো টু দ্য সি’। স্পেন ও গ্রিসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল জিমেনেজ। তিনি উৎসবে উপস্থিত থাকবেন এবং এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগে জুরির দায়িত্ব পালন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে।

এবারের উৎসবে দেখানো হবে মোট ২২০টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য (৭০ মিনিটের বেশি) চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১১৭, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০৩। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আছে ২৬টি, যার মধ্যে ১৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য।

উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর স্থান
জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, মধুমিতা সিনেমা হল ও স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি ও সীমান্ত স্কয়ার।

এবারের উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে (এশিয়ান কমপিটিশন) এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ১৯টি চলচ্চিত্র নিয়ে গঠিত (ন্যূনতম ৭০ মিনিট ব্যাপ্তির ফিকশন ফিল্ম) প্রতিযোগিতা বিভাগ সেরা চলচ্চিত্র নির্ধারণে থাকবে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ড। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও এক লাখ টাকা। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার জন্য পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আয়োজকদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আয়োজকদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো

উৎসবে পোলিস নির্মাতা দম্পতি জোয়ানা কস-ক্রাউজে ও ক্রিজস্টফ ক্রাউজের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চারটি চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে রেট্রোস্পেটিভ বিভাগ। ক্রাউজে দম্পতির চলচ্চিত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো চরিত্র ও দৃশ্যের সমন্বয়ে একটি মানবিক গল্প বলা। ১২০টির বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন তাঁরা। এই বিভাগে জোয়ানা কস-ক্রাউজে ও ক্রিজস্টফ ক্রাউজের চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে বাংলাদেশের আটটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রচার-প্রসার ও আন্তর্জাতিক বাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে উৎসব কমিটি এই বিভাগ পুনরায় সংযোজন করেছে। এই বিভাগে বাংলাদেশের নির্মাতাদের নির্মিত বাছাইকৃত ১০টি চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার সুযোগ পাবে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচক ফেডারেশন-ফিপ্রেসি বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে সমালোচক পুরস্কার দেবে। ফিপ্রেসির তিন সদস্যবিশিষ্ট জুরিবোর্ড নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো থেকে ‘শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র’ জন্য একটি পুরস্কার প্রদান করবে। পুরস্কার হিসেবে থাকছে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট।

সিনেমা অব দ্য ওর্য়াল্ড এই বিভাগে বিভিন্ন দেশের সমকালীন সেরা ৪৯টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এই বিভাগের জন্য দর্শক জরিপে একটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হবে। চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার থাকবে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট।

চিলড্রেনস বিভাগে ১৫টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। বরাবরের মতো এবারও সব শিশুর জন্য এই প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এই বিভাগের চলচ্চিত্রগুলো দেখার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। এই বিভাগ থেকে একটি চলচ্চিত্র ‘বেস্ট জুভেনাইল অডিয়েন্স বাদল রহমান অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য মনোনীত হবে। এই পুরস্কার হিসেবে থাকছে সনদ ও ক্রেস্ট।

স্পিরিচুয়াল ফিল্মস বিভাগে ৩৮টি ছবি প্রদর্শিত হবে। মূলত ধর্মীয় বিশ্বাস, অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মানবতাবাদী চলচ্চিত্র এ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ বিভাগের ছবিগুলোর মাধ্যমে আন্তধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরিই আয়োজকদের প্রধান উদ্দেশ্য। এ বিভাগের জন্য ইন্টারফেইথ জুরি একটি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র ও একটি শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র নির্ধারণ করবে। পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি সার্টিফিকেট ও একটি ক্রেস্ট।

উইমেন ফিল্ম মেকারস সেশনে দেশ ও বিদেশের নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র নিয়ে এই বিভাগ সাজানো হয়েছে। এতে দেশি-বিদেশি ২৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একটি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র ও একটি শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হবে। পুরস্কার হিসেবে থাকছে সনদ ও ক্রেস্ট।

শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মস বিভাগে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নবীন ও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। এতে দেশি-বিদেশি ৫৮টি ছবি প্রদর্শিত হবে। এতে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই বিভাগ উৎসবে উন্মুক্ত করা হয়েছে।