জাতীয় কবিতা উৎসবে অংশ নেবেন সাত দেশের কবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। ছবি: সংগৃহীত

তিন দশকের ধারাবাহিকতায় এবারও ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে জাতীয় কবিতা পরিষদের জাতীয় কবিতা উৎসব। ৩৪তম জাতীয় কবিতা উৎসবটি চলবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের অনুষ্ঠানে সাতটি দেশ থেকে কবিরা যোগ দেবেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত। বক্তব্য দেন জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, ৩৪তম জাতীয় কবিতা উৎসবের আহ্বায়ক কবি শিহাব সরকার, কবি কাজী রোজী, কবি দিলারা হাফিজ, কবি আসলাম সানী, কবি আমিনুর রহমান সুলতান। সঞ্চালনা করেন কবি নিপু শাহাদাত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের কবিতা পরিষদ উৎসবের মর্মবাণী হলো কবি সামাদের একটি কবিতার পঙ্‌ক্তি—‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’। উদ্বোধন করবেন দেশের কবি মহাদেব সাহা। উৎসবে যোগ দেবেন সুইডেন, স্পেন, উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, নেপাল ও ভারতে কবিরা। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে জাতীয় সংগীত, একুশের গান এবং উৎসব সংগীতের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হবে।

এই উৎসবে তিনজন ভাষাসংগ্রামী প্রবীণ কবিকে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা’ দেওয়া হবে। তাঁরা হলেন কবি আহমদ রফিক, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। টিএসসির উৎসব কার্যালয়ে চলছে উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম। প্রতিদিনই ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কবিরা নিবন্ধনের মাধ্যমে উৎসবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছেন। ঢাকার কবিদের নিবন্ধন ফি ৩০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরের কবিদের নিবন্ধন ফি ২০০ টাকা। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই নিবন্ধন কার্যক্রম। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে এ কার্যক্রম।

এবারের উৎসবে যুক্ত হয়েছে বছরব্যাপী আয়োজন। দেশব্যাপী নেওয়া হয়েছে ‘মুজিব বর্ষ, কবিতা বর্ষ’ শীর্ষক বছরব্যাপী কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতে ঢাকার পাশাপাশি টুঙ্গিপাড়া, মুজিবনগরসহ কয়েকটি জেলা শহরে ছড়িয়ে যাবে কবিতা উৎসব। সেই সঙ্গে দেশের বাইরে লন্ডন, ম্যানচেস্টার, কলকাতা, শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন ও আগরতলায় অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের অন্তর্ভুক্ত মুজিব বর্ষের আয়োজন। এ আয়োজনে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে কবিতা পরিষদের জেলা ও আন্তর্জাতিক শাখাগুলো।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কবি তারিক সুজাত বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর নানা সংকটকালে কবি, লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের ইতিহাস অম্লান। স্বৈরাচার ও মৌলবাদী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বাংলাদেশের কবি, লেখক এবং মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরও আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছি। এমন বহু সংগ্রামের পর বাঙালির জয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের স্বরূপ ফিরে পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শ বিজয়ী হয়েছে।’

জাতীয় কবিতা পরিষদ রাজপথের অন্তরের আগুন ও বায়ুর সঙ্গে যুক্ত। সমস্ত ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে কবিতা পরিষদ এগিয়ে গেছে—এমন মন্তব্য করেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমরা সামরিক স্বৈরাচার শাসন প্রতিহত করে আজ থেকে ৩৫ বছর আগে কবিতা উৎসবের ডাক দিয়েছিলাম। সে সময় নানা স্লোগানে মুখরিত করে রাখতাম কবিতা উৎসব।’

স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলমুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে জাতীয় কবিতা উৎসব।