ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৭৪ দেশের ২২০ ছবি দেখানো হবে

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। ছবি:সংগৃহীত
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। ছবি:সংগৃহীত

‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’—এ স্লোগান নিয়ে আজ শনিবার থেকে শুরু হলো অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। সিনেমাপ্রেমীদের জন্য সারা বিশ্বের প্রখ্যাত নির্মাতাদের নতুন নতুন চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ থাকছে এ আয়োজনে।

আজ বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উৎসব উদ্বোধন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বর্তমান দেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা উচিত বলে মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশে অবস্থারত বাংলাদেশিদের নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা উচিত। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মাধ্যমে দেশের নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে হবে। উৎসবে যেসব চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে, তা দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, আগামী ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উৎসর্গ করা হবে ‘মুজিব বর্ষের চলচ্চিত্র উৎসব’ হিসেবে। সেই হিসাবে এখন থেকেই আগামী উৎসবের পরিকল্পনা শুরু হবে বলেও জানান তিনি। উৎসবের আগত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে পরামর্শও চান শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে উৎসবের পরিসর আরও বৃদ্ধি করা হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে প্রতিবছর এই উত্সব করাটাই একটা যুদ্ধ। কেবল দেশের সুস্থ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের দেওয়া কথা রাখতেই যেকোনোভাবেই হোক বছরান্তে আবার ফিরে আসতে হয়। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র আয়োজন-ব্যাপ্তি ও গুণগত মান বিচারে এশিয়ার অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসবে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে এই উৎসব দেশে রুচিসম্পন্ন ও ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ব্যাপক অবদান রাখছে।’

উদ্বোধনী পর্বে মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। উদ্বোধন শেষে প্রদর্শিত হয় ‘উইন্ডো টু দ্য সি’। স্পেন ও গ্রিসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল জিমেনেজ।

ঢাকার সাতটি ভেন্যুতে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত উৎসবে প্রদর্শিত হবে ৭৪টি দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র। এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানোরমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগে দেখানো হবে ছবিগুলো। এবারের উৎসবে বিভিন্ন দেশ থেকে ৯৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ প্রতিপাদ্যে নয় দিনব্যাপী উৎসব শেষ হবে ১৯ জানুয়ারি।

উৎসবের ২২০টির মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য (৭০ মিনিটের বেশি) চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১১৭, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০৩। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আছে ২৬টি, যার মধ্যে ১৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য। উৎসবের ভেন্যুগুলো হচ্ছে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, মধুমিতা সিনেমা হল ও বসুন্ধরা সিটি স্টার সিনেপ্লেক্স। এর মধ্যে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন, গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, মধুমিতা সিনেমা হল ও স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শনীর বিনিময়ে ছবি দেখা যাবে। বাকি ভেন্যুগুলোয় বিনা মূল্যে ছবি দেখা যাবে। এ ছাড়া জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনা দর্শনীতে ছবি দেখতে পারবেন।

এবারের বাংলাদেশ প্যানোরমা বিভাগে দেখানো হবে এন রাশেদ চৌধুরী পরিচালিত মুক্তিপ্রতীক্ষিত ছবি ‘চন্দ্রাবতী কথা’, আশরাফ শিশিরের বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘আমরা একটি সিনেমা বানাবো’, অরুণ চৌধুরীর ‘মায়াবতী’, প্রদীপ ঘোষের ‘শাটল ট্রেন’, ফরিদ আহমেদের ‘টিউনস অব নস্টালজিয়া’, মাসুদ পথিকের ‘মায়া’, প্রসূন রহমানের ‘নিগ্রহকাল’ এবং তানিম রহমানের ‘ন ডরাই’। উৎসব আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ছবিগুলো কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেখানো হবে।

যেসব দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাপান, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ফ্রান্স, ফিলিস্তিন, ভারত, ইরান, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, আরব-আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি সেমিনারের আয়োজন থাকছে উৎসবকে কেন্দ্র করে। ১২ ও ১৩ জানুয়ারি চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকাবিষয়ক ‘ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’ ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জের দ্বিতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতিত্ব করবেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক। এ ছাড়া ১৪ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী সেমিনার ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’, যাতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভিন্ন চলচ্চিত্রের ভাষা থাকার পরও তারা কোথায় একবিন্দুতে মিলছে, এ নিয়ে আলোচনা।

রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট থেকে সৎ চলচ্চিত্র প্রদর্শন সংস্কৃতি বিকাশে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।