তিন সপ্তাহে নতুন ছবি মাত্র একটি
নতুন বছরের শুরুটা জুতসই হলো না চলচ্চিত্রের জন্য। প্রেক্ষাগৃহে পুরোনো ছবি দেখানোর মধ্য দিয়ে বছরটি শুরু হলো। প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। দ্বিতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি মাত্র একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। আর তৃতীয় সপ্তাহে এখনো নতুন কোনো ছবি মুক্তির খবর পাওয়া যায়নি। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন সিনেমা হলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, নতুন ছবি মুক্তি না পেলে সিনেমা হল কমতে থাকবে দিন দিন। আয় নেমে দাঁড়িয়েছে একেবারে তলানিতে। লোকসানের মুখে প্রেক্ষাগৃহ মালিকেরা।
রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলে বছরের শুরুতে দেখানো হয় পুরোনো ছবি। আর গত শুক্রবার থেকে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশগ্রহণ করা ছবিগুলো। মধুমিতা মুভিজের কর্ণধার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানান, রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্র দেখানো হবে মধুমিতায়। প্রতিদিন চারটি করে প্রদর্শনী হবে। আগামী সপ্তাহে নিয়ামুল মুক্তা পরিচালিত কাঠবিড়ালি ছবিটি দেখানো হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘খুবই বাজে অবস্থা, সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটা সপ্তাহে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হলে মোটামুটি বেঁচে থাকা যায়। সেখানে এখন সপ্তাহে আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজারে চলে এসেছে। বিশ্বাস করতে পারেন? আয়ের অবস্থা পুরো তলানিতে। এভাবে টিকে থাকা যাবে না।’
রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলে গত সপ্তাহে চলেছে চলচ্চিত্র কণ্ঠ। ছবিটি আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তি পায় গত ৮ নভেম্বর। এ সপ্তাহে চলছে গতকাল মুক্তি পাওয়া একমাত্র ছবি এম সাখাওয়াত হোসেনের জয়নগরের জমিদার ছবিটি। বলাকা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক এস এম শাহীন বলেন, ‘হঠাৎ করে ছবি মুক্তি পাচ্ছে। প্রচার কম। ভালো নায়ক–নায়িকা নাই। সবকিছু নিয়ে চলছে মোটামুটি। সিনেমা মুক্তি না পেলে তো হল চালানো যাচ্ছে না।’
শ্যামলী প্রেক্ষাগৃহে গত শুক্রবার থেকে দেখানো হচ্ছে নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান অভিনীত অরুণ চৌধুরীর ছবি মায়াবতী। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পায়। নতুন ভালো ছবি মুক্তি না পাওয়ায় শ্যামলী হলে পুরোনো ছবিই দেখাতে হচ্ছে। শ্যামলী সিনেপ্লেক্সের হাউস ম্যানেজার আহসান উল্লাহ বলেন, ‘এখন মায়াবতী সিনেমা চালাচ্ছি। বছরের শুরুতেই এমন অবস্থা হলে প্রেক্ষাগৃহ চলবে কীভাবে? এগুলো নিয়ে কেউ–ই ভাবছে না। আগামী সপ্তাহে যদি রবিবার আমদনির মাধ্যমে মুক্তি পায়, তাহলে চালাব। তা না হলে কাঠবিড়ালি ছবিটি চালাব। ভারতীয় সিনেমাগুলোও নানা কারণে আটকে থাকে। সিনেমাই তো তৈরি হচ্ছে না।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহ অর্থাৎ ১৭ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য এখনো কোনো ছবির আবেদন জমা হয়নি। একটি ছবির আবেদন আছে কাঠবিড়ালি নামে। তবে ছবিটি গত বছর ডিসেম্বর মাসেই মুক্তি পেয়েছে। তাই গতকাল পর্যন্ত তৃতীয় সপ্তাহে নতুন কোনো ছবি মুক্তির খবর নেই। আর পরের সপ্তাহ ২৪ জানুয়ারি আমদানির মাধ্যমে ভারতীয় ছবি অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের হুল্লোড়–এর মুক্তির আবেদন করা হয়েছে। মাসের শেষ শুক্রবার ৩১ জানুয়ারিতেও মুক্তির জন্য কোনো ছবির আবেদন জমা পড়েনি।
আমদানির মাধ্যমে বছরের শুরুতেই ৩ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান ও ভারতীয় অভিনয়শিল্পী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবি রবিবার–এর। অতনু ঘোষ পরিচালিত ছবিটি বাংলাদেশে আনছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট। এখনো আটকে আছে ছবিটি। ১৭ জানুয়ারি তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তি পাবে কি না, এমন প্রশ্নে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অনন্য মামুন বলেন, ‘ছবিটি মুক্তির জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি পত্র পেয়েছি। এখন সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেব। তারপর মুক্তির তারিখ ঠিক হবে।’
বছরের প্রথম মাসের দুই সপ্তাহে মাত্র একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। অন্যদিকে আমদানির মাধ্যমে কলকাতার বাংলা ছবি আসতেও দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। হলমালিকদের চালাতে হচ্ছে পুরোনো ছবি। এতে বিপাকে পড়েছেন হলমালিকেরা। হল মালিক সমিতির সংগঠন বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সরকার কেন ভারতীয় ছবি সরাসরি আনার সুযোগ দিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। কলকাতার বাংলা ছবি সাপটা চুক্তিতে আসছে কেন, হলিউডের ছবির মতো সরাসরি কেন আনা যাচ্ছে না? সাপটার নিয়মনীতির জন্য দীর্ঘ সময় লাগছে ছবি আনতে। রবিবার ছবিটি কলকাতায় পূজায় মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি এখনো মুক্তি দেওয়া গেল না। তথ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এখন যদি বাস্তবায়ন করেন তাহলে হলগুলো বেঁচে যায়। এখন ৫০ থেকে ৬০টি হল বেঁচে আছে। সবগুলো হলের বিক্রি নিচের দিকে। এটা ভয়াবহ অবস্থা। এখান থেকে উদ্ধার না হলে হল বন্ধ হয়ে যাবে। লোকাল ইন্ডাস্ট্রি ছবি দিতে পারছে না। তাহলে হল বাঁচবে কী করে?’