একজন সুবর্ণার সন্ধানে সালাহউদ্দিন জাকী

একজন ‘গুড্ডি’র সুবর্ণার সন্ধানে সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। ছবি: সংগৃহীত
একজন ‘গুড্ডি’র সুবর্ণার সন্ধানে সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। ছবি: সংগৃহীত

উত্তরাধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে ১৯৮০ সালে ঢাকায় যে চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, সেটা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’। প্রধান চরিত্রটি চিত্রায়িত হয়েছে একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার বেকার জীবন ও তার অভিলাষী প্রেম নিয়ে। সদ্য স্বাধীন দেশের চলচ্চিত্রে এমন সমসাময়িক গল্প ও তার গান চমকে দেয় সবাইকে। প্রচলিত কাঠামো কিছুটা অনুসরণ করেও ছবিটি পরিপূর্ণ ছিল শক্তিশালী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শিল্পসুষমায়। ৪০ বছর পর সেই পরিচালক বানাচ্ছেন নতুন চলচ্চিত্র—‘ক্রান্তিকাল’।

সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী জানালেন, সম্পূর্ণ নতুন গল্প বলতে চান তিনি, যেটা মোটেও ‘ঘুড্ডি’র সিকুয়েল নয়। সম্পূর্ণ নতুন যাত্রা। কিন্তু নির্যাস বা ছোঁয়া তো থাকবেই নবচিন্তায়। নির্মাতার ভাষায়, এর ‘মাটি’ একই। তবে ছবিটি বানাতে গিয়ে তিনি অনুভব করেছেন ‘ঘুড্ডি’র শিল্পীদের, যেখানে প্রায় সবাই প্রথমবার চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। বড় পর্দায় একেবারেই নতুন মুখ ছিলেন। তিনি চাইছেন এমন শিল্পী নিতে, যাঁরা নবীন, কিন্তু প্রতিভাবান। যাঁরা কখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি। সালাহউদ্দিন জাকী বললেন, ‘আমি খুঁজছি সুবর্ণা মুস্তাফার মতো নায়িকা। নতুন সেই মেয়েটি মাইম কিংবা নৃত্যে পটু হলে ভালো, সংলাপ কম থাকবে, প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার, শহুরে বা সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিচ্ছবি থাকবে যার ভেতর। হতে হবে চটপটে ও ছটফটে।’

‘ঘুড্ডি’ যথেষ্ট দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। এখনো আলোচনা হয় ছবিটি নিয়ে। অনেকেই বলছেন, ঘুড্ডির সিকুয়েল বানাবেন জাকী। কিন্তু সে পথে কেন গেলেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৪০ বছর আগের গল্প সেটি। এখন আরও কিছু খোঁজার আছে, অনেক প্রশ্ন করার আছে। এটি হবে সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে। এবারের উপস্থাপনা এপিসোডিক্যাল, নন-লিনিয়ার। খণ্ডচিত্র গেঁথে একটি অবয়ব তৈরি করা হবে। পৃথিবীর বেশির ভাগ ছবিই দুটি বাক্যে এগোয়। হয় “আমি তোমাকে ভালোবাসি”, অথবা “আমি তোমাকে ঘৃণা করি”। আমি থাকব দুই বাক্যের মাঝখানে, যেখানে অনেক ছোট ছোট পর্ব বা গল্প থাকবে, যা একটা সময় এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবে।’ এখানে মূল চরিত্র হবে সহজ, সরল কিন্তু প্রত্যয়ী।

‘ঘুড্ডি’ ছবিতে সুবর্ণা মুস্তাফা। ছবি: সংগৃহীত
‘ঘুড্ডি’ ছবিতে সুবর্ণা মুস্তাফা। ছবি: সংগৃহীত

নতুন ছবির কাজ শুরু হতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। এখনো চলছে শিল্পী বাছাইয়ের কাজ। ছবিটি প্রযোজনা করবেন জসিম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পরিচালক যেভাবে চান, সেভাবে শিল্পী যাচাই-বাছাই করতে বেশ সময় লাগবে। আমরা আশা করছি, মে মাসে কাজ শুরু করতে পারব।’

‘ঘুড্ডি’ ছবির একটি দৃশ্যে সুবর্ণা মুস্তাফা ও রাইসুল ইসলাম আসাদ। ছবি: সংগৃহীত
‘ঘুড্ডি’ ছবির একটি দৃশ্যে সুবর্ণা মুস্তাফা ও রাইসুল ইসলাম আসাদ। ছবি: সংগৃহীত

‘ঘুড্ডি’ মুক্তি পায় ১৯৮০ সালের ১৯ ডিসেম্বর। এতে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা ও রাইসুল ইসলাম আসাদ, ফরিদ আলী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, তারিক আনাম খান, নায়লা আজাদ, সৈয়দ হাসান ইমাম প্রমুখ। ছবিতে ঘুড্ডির বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু হিসেবে দেখা যায় শিল্পী হ্যাপী আখান্দ্‌কে। তিনি ‘কে বাঁশি বাজায় রে’ গানটি পরিবেশন করেন ছবির একটি দৃশ্যে। ছবিতে গান ও আবহ সংগীতের মার্জিত ব্যবহার, চিত্রধারণে ক্যামেরার নান্দনিকতা সে সময় প্রচলিত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রকে ঝাঁকুনি দিয়েছিল। ৪০ বছর পর একই নির্মাতার ছবি দেখার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকবে চলচ্চিত্র অঙ্গন ও দর্শকেরা, সে কথা আলাদা করে বলতে হয় না।