বার্লিনালে বাংলাদেশের সাদিয়া

বার্লিনালে চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সাদিয়া খালিদ। ছবি: আবদুস সালাম
বার্লিনালে চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সাদিয়া খালিদ। ছবি: আবদুস সালাম

বার্লিনাল ট্যালেন্টস, বিশ্ব চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য একটা স্বপ্নের জায়গা। এ বছর বিশ্বের ৮৬টি দেশের ২২৫ জন চলচ্চিত্রকর্মী সুযোগ পেয়েছেন এই কর্মশালায় অংশ নেওয়ার জন্য। তাঁরই ভেতর একজন সাদিয়া খালিদ। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হয়ে ‘চলচ্চিত্র সমালোচনা’ বিভাগে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন আন্তর্জাতিক এই আয়োজনের।

এখানে চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে অংশ নেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র রিভিউ, ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা—এই তিন বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবির রিভিউ জমা দেন সাদিয়া খালিদ। সম্প্রতি ৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ফিরে তাঁর ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব: টিকে থাকার নীতিমালা’ বিষয়ে একটি লেখা দেন। সেই সঙ্গে নিজের বিশ্লেষণী ক্ষমতার সাক্ষ্য দিতে হলিউডে কীভাবে এশিয়ান ‘অন্য’দের ক্যাটাগরিতে পড়ল, এ বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণী লেখা জুড়ে দেন আবেদনপত্রের সঙ্গে।

এ আয়োজনে ‘চলচ্চিত্র সমালোচক’ হিসেবে অংশগ্রহণ সম্বন্ধে প্রথম আলোকে সাদিয়া খালিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচকের জন্য একটা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, এটা কিন্তু কিছুদিন আগেও ভাবা যেত না। আমাদের নির্মাতারা আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সমর্থ হয়েছেন। নির্মাতা তৈরি হলে তো সমালোচকদের জন্য দরজা খুলে যায়। আর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

কেন? প্রশ্নের উত্তরে এই সমালোচক বলেন, ‘কান, বার্লিন, বুসানসহ আন্তর্জাতিক সমস্ত চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে যাঁরা আসন নেন, তাঁরা তো মার্কিন বা ইউরোপীয়। তাঁরা সেই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই ছবি যাচাই–বাছাই করবেন। এশিয়াকে এশিয়ার বাস্তবতায় দেখার জন্য, বোঝার জন্য, বিচারের জন্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচকের এ রকম প্ল্যাটফর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে তো আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোয় আমাদের ছবির সঠিক মূল্যায়ন হবে না।’

২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপরেস্কির বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন সাদিয়া খালিদ। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই বার্লিনাল ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত চলবে ৭০তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আর আগামী ২২ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারির পর্যন্ত জার্মানির বার্লিনে চলবে বার্লিনাল ট্যালেন্ট—বিশ্ব চলচ্চিত্রকর্মীদের এই মিলনমেলা।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে অন্য বিচারকদের সঙ্গে সাদিয়া খালিদ। ছবি: সংগৃহীত
কান চলচ্চিত্র উৎসবে অন্য বিচারকদের সঙ্গে সাদিয়া খালিদ। ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই সাদিয়া খালিদ ঘুরে এলেন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব কেরালা’ থেকে। সেখানেও এক হাতে কলম আর আরেক হাত গালে রেখে কোন ছবিটা কেমন হলো, তার বিচার করেছেন।

কান আর কেরালার আগেও সাদিয়া খালিদ আরও চারটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেগুলো হলো ইতালির ‘রিলিজিয়ন টুডে ফেস্টিভ্যাল’, ভারতের ‘শিলিগুড়ি শর্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফেস্টিভ্যাল’, নেপালের ‘হিউম্যান রাইটস ফেস্টিভ্যাল’ এবং ২০১৮ সালে ১৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় (ইউসিএলএ) চিত্রনাট্য নিয়ে পড়তে যাওয়ার আগে সাদিয়া খালিদ কাজ করেছেন দ্য ডেইলি স্টারে। লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করেছেন ব্রুইন (ডিবি), এএমবিআই মিডিয়া গ্রুপে। এর মধ্যে জেসিআই ঢাকা কসমোপলিটনের মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন।

৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে ছিলেন সাদিয়া খালিদ। ছবি: সংগৃহীত
৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে ছিলেন সাদিয়া খালিদ। ছবি: সংগৃহীত

অংশগ্রহণকারীদের ভেতর ১২৬ জন নারী আর ১২৩ জন পুরুষ। এই নারীদের ভেতর ১৪ জন দক্ষিণ এশিয়া থেকে, তাঁদের ৭ জন ভারতীয়। পাকিস্তান থেকে অংশগ্রহণকারী আনাম আব্বাস প্রযোজক ও পরিচালক, নিদা এম আহমেদ পরিচালক ও সিনেমাটোগ্রাফার।

যে বিভাগে বিশ্বের এই চলচ্চিত্রকর্মীরা অংশ নেবেন, সেগুলো হলো সমন্বিত উদ্যোগ, ড্রামা সিরিজ, ওয়েব সিরিজ, সিনেমা দর্শন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিল্প, প্রামাণ্যচিত্র, নাটক, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, হরর, ঐতিহাসিক ড্রামা ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এসব বিভাগে তাঁরা নির্মাণ, প্রযোজনা, অভিনয়, চিত্রনাট্য রচনা, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা, প্রডাকশন ডিজাইন, বিক্রি ও বিপণন, স্কোর কম্পোজিশন, শব্দ পরিকল্পনা, চলচ্চিত্র সমালোচনা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন। এ ছাড়া ৪০টি চলচ্চিত্রের প্রজেক্ট ল্যাব প্রেজেন্টেশনে অংশ নেবেন।

এর আগে বাংলাদেশ থেকে রেজওয়ান শাহরিয়ার, রুবাইয়াত হোসেন, কামার আহমাদ, আরিফুর রহমান, হুমাইরা বিলকিস, সৈয়দা নিগার বানু, বারকাত হোসাইন, নার্গিস আক্তার, ইশতিয়াক জিকোসহ ১২ জন অংশগ্রহণ করেন বার্লিনাল ট্যালেন্টসের প্ল্যাটফর্মে।