'আনকাট' ছাড়পত্র পেল কামারের 'নীল মুকুট'

সেটে শুটিংয়ের প্রিভিউ দেখছেন কামার আহমাদ সাইমন, পাশে প্রযোজক সারা আফরীন। ছবি: সংগৃহীত
সেটে শুটিংয়ের প্রিভিউ দেখছেন কামার আহমাদ সাইমন, পাশে প্রযোজক সারা আফরীন। ছবি: সংগৃহীত

নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার খুশির দিনই বটে। আজ দুপুরেই তিনি শুনলেন সুসংবাদ। দেশের মানুষকে তাঁর তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘নীল মুকুট’ দেখাতে আর কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক কয়েকটি ছবি সেন্সর বোর্ডে আটকে গিয়েছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই একটু চিন্তিত ছিলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ডকে “নীল মুকুট” আনকাট ছাড়ার জন্য।’

মাত্র ১০ দিনের মাথায় বিনা কর্তনে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে কামার আহমাদ সাইমনের নতুন ছবি ‘নীল মুকুট’। কিছুদিন আগেই কামার আহমাদ প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কোনো উৎসবে দেখানোর আগে দেশেই মুক্তি দেবেন ‘নীল মুকুট’। আজ তাই সেন্সর ছাড়পত্র হাতে পেয়ে দারুণ খুশি তিনি।

ছবির বিষয় নিয়ে কি একটু আভাস দেওয়া যায়? ফোনের ওপাশ থেকে কামার আহমাদ বললেন, ‘না, একদম না। কিছুতেই বলতে চাই না। এটা আমার একধরনের এক্সপেরিমেন্ট। কিছু জানলেই দর্শক নিজের মতো একটা কিছু ভেবে, পূর্বধারণা নিয়ে ছবিটা দেখতে যাবে। কোনো ক্লু ছাড়া দর্শক ছবিটা দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটা দেখতে চাই।’

কবে নাগাদ দেশের মানুষ দেখবে এই ছবি—এমন প্রশ্নের উত্তরে এই নির্মাতা জানালেন, সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে যতক্ষণ লাগে। তবে তাঁর আশা, মাসখানেকের ভেতরেই ছবিটা পৌঁছাবেন দর্শকদের কাছে।

আউটডোর শুটিংয়ে ক্যামেরায় কামার আহমাদ সাইমন, শব্দে সুকান্ত মজুমদার (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত
আউটডোর শুটিংয়ে ক্যামেরায় কামার আহমাদ সাইমন, শব্দে সুকান্ত মজুমদার (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমাটি কি ফিকশন আর নন-ফিকশনের খেলা? উত্তর যা এল, তা খানিকটা প্রত্যাশিতই, ‘যখন ফুটেজ নিয়েছি, তখন “নীল মুকুট” নন–ফিকশন ছিল। যখন সম্পাদনা করেছি, তখন ফিকশন হিসেবেই করেছি। দিন শেষে “নীল মুকুট” কেবলই সিনেমা। দর্শক এটাকে সিনেমা হিসেবেই দেখবে।’

কামারের প্রথম ছবি ‘শুনতে কি পাও!’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্যারিসের সিনেমা দ্যু রিলে গ্রাপি ও মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণশঙ্খসহ ১০টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছবিটি পুরস্কার পেয়েছিল। দেখানো হয়েছিল অর্ধশতাধিক উৎসবে।

আলোচনায় ছিল ‘শিকলবাহা’। এই ছবির চিত্রনাট্যের জন্য ইতিমধ্যে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পেয়েছেন সম্মানজনক ডব্লিউসিএফ। ‘অন্যদিন’–এর চিত্রনাট্যের জন্য সম্মানিত হয়েছেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মঞ্চ লোকার্নোর পিয়াতজা গ্রান্দায়। পেয়েছেন ওপেন ডোর্সের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, আর্তে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ। কানের লা এতেলিয়ার থেকে প্রযোজক সারা আফরীনসহ কামার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ‘অন্যদিন’–এর জন্য, যেখানে উৎসব কর্তৃপক্ষের নিমন্ত্রণ ছাড়া নিজে থেকে কোনো নির্মাতা আবেদনই করতে পারেন না।

সেই বিচারে ‘নীল মুকুট’ একেবারেই আলোচনার বাইরে নতুন ছবি। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা কামার আহমাদ বলেন, ‘প্লেনে যাচ্ছিলাম, “শিকলবাহা” বা “অন্যদিন”-এর কোনো একটা কাজে ইউরোপ যাত্রাই ছিলাম। একটা কান্না আমাকে খুব ভাবিয়েছিল। প্লেনের লম্বা সময়টা কাটিয়েছি কয়েকটা সিকোয়েন্স লিখে। তারপর শুরু হলো “নীল মুকুট”–এর শুটিং। কিন্তু সম্পাদনার টেবিলে গিয়ে “নীল মুকুট”–এর ফুটেজের সঙ্গে প্রথম দেখাতেই প্রেম হয়ে গেল। বছরজুড়ে অন্য দুই কাজের ফাঁকে ফাঁকে “নীল মুকুট”–এর সঙ্গে বসবাস। একসময় অপরিকল্পিতভাবে সবার আগে জন্ম নিল “নীল মুকুট”।’

বনানীর নিজের বাসায় কামার আহমাদ সাইমন। ছবি: প্রথম আলো
বনানীর নিজের বাসায় কামার আহমাদ সাইমন। ছবি: প্রথম আলো

উৎসবের আগেই সিনেমাটি দেশে মুক্তি দেওয়া প্রসঙ্গে কামার বলেন, ‘উৎসবে বা উৎসবের বাইরে নানান আয়োজনে বিদেশে আমার ছবি তো নিয়মিতই দেখাচ্ছে। প্যারিসের শতবর্ষী লুক্সার থিয়েটার থেকে জর্জ পম্পিদ্যু সেন্টারে বা জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের ফিল্ম মিউজিয়ামে। কিন্তু একটু লক্ষ করলে দেখবেন, ‘মাটির ময়না’র পর তারেক মাসুদের ‘অন্তর্যাত্রা’, ‘নরসুন্দর’ বা ‘রানওয়ে’—কোনোটাই বিদেশি উৎসবে তেমন একটা যায়নি। কারণ, তাঁর কাছে ছবিটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, উৎসবটা না।

তবে কি উৎসব গুরুত্বপূর্ণ নয়? দ্বিমত পোষণ করে নির্মাতা বললেন, ‘নির্মাতার জন্য উৎসব অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু শুধু উৎসবের জন্য তো ছবি নয়। এই আলোচনাটা তোলা আমাদের সময়ে জরুরি মনে করেছি। যেহেতু “নীল মুকুট”–এর সব কাজ শেষ, তাই আগেই ঠিক করেছিলাম, কোনো উৎসবের আগে দেশেই ছবিটা মুক্তি দেব।’