স্পন্দন স্পন্দিত হবে আজ শিল্পকলা একাডেমিতে
আজ (শুক্রবার) শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চ থেকে যখন ভেসে আসবে ‘স্কুল খুইলাছেরে মাওলা’ কিংবা ‘মন তুই চিনলি নারে’ গান দুটি, তখন কি হঠাৎ করে কারও মনে ফিরোজ সাঁইয়ের চেহারাটা ভেসে উঠবে? মঞ্চের দিকে তাকালে তাঁর ছায়াও দেখা যাবে হয়তো। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের অংশ হয়ে মঞ্চে যাঁরা গান করবেন, তাঁদের মধ্যে থাকবেন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর স্বনামধন্য শিল্পী প্রয়াত ফিরোজ সাঁইয়ের তিন ছেলে নাঈম, নাজিম ও নিয়াজ। শ্মশ্রুমণ্ডিত যে ছেলেকে দেখা যাবে একই সঙ্গে গাইছে, সে–ও কিন্তু স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর বঙ্গ–কঙ্গ বাদক হাবলুর ছেলে আনান। তাঁরাই বাঁচিয়ে রেখেছেন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীকে।
আজ স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭২ সালের এই দিনে গড়ে উঠেছিল দলটি। যাঁরা বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের পথিকৃৎ, তাঁদের অন্যতম এই স্পন্দন। নিউ ইস্কাটনের একটি বাড়ি থেকে সে সময় বের হতো ব্যান্ডটির সুরলহরী। বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামাল, সংগীত শিল্পী মনসুর আহমেদ নীপু, নাসির আহমেদ অপু আর ফিরোজ সাঁই মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্যান্ডটি। সঙ্গে আরও ছিলেন ফিরোজ সাঁইয়ের ছোট ভাই ফেরদৌস, যিনি ফেরদৌস জুনিয়র নামে পরিচিত ছিলেন। কারণ, ফেরদৌস ওয়াহিদ এ দলের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী, যার ‘আগে যদি জানতাম’, ‘এমন একটা মা দে না’ গানে মেতে ছিলেন সে সময়ের তরুণেরা। সে সময় আলাদাভাবে ছিলেন আজম খান। তাঁর ব্যান্ডের নাম ছিল ‘উচ্চারণ’। ছিলেন পিলু মমতাজ, ফকির আলমগীর প্রমুখ। ছিলেন হ্যাপী আখন্দ ও লাকী আখন্দ। আরেকটু আগে থেকেই ছিলেন জিংগা শিল্পীগোষ্ঠীর নাজমা জামান, শায়লা জামানেরা।
স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর হাবলুর খুব ইচ্ছে ছিল, পরবর্তী প্রজন্ম যদি ব্যান্ডটির হাল ধরেন, তাহলে তাঁদের মাধ্যমে টিকে থাকবে স্পন্দন। ২০১৬ সাল থেকে নতুন প্রজন্মই হাল ধরেছে ব্যান্ডটির। হাবলুও কখনো কখনো তাঁদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যান বাজাতে।
ব্যান্ডের ৪৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম আলোয় এসেছিলেন হাবলু, নাজিম ও আনান।
নাজিম বলেন, ‘আমরা তো মিউজিকের মধ্যেই ছিলাম। তবে আলাদাভাবে। আমি প্রথমে প্রস্তাবটা আনানের কাছ থেকেই পাই। স্পন্দনের মতো ব্যান্ডে পরের প্রজন্ম এসে জায়গা করে নেবে, এ ধারণাটা অসাধারণ বলে মনে হয়েছিল। আমরা তিন ভাইয়ের মধ্যে একজন ড্রামস বাজাচ্ছি, একজন গিটার, একজন ভোকাল, আনান গান গাইছে। আমরা চারজন মিলেই তো একটা ব্যান্ড হয়ে যেতে পারি। এরপর হাবলু আংকেলের সঙ্গে বসলাম, ব্যান্ডের ইতিহাস নিয়ে একটু গবেষণা করলাম। তিনি অনেক পরামর্শ দিলেন। তারপর থেকে পুরোনো গান নতুন করে গাইলাম, আনান নতুন কিছু গান তৈরি করল। এভাবেই আমাদের শুরু।’
আনান জানালেন, স্পন্দনের আগের গানগুলোও ছিল মূলত লোকসংগীতনির্ভর। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু লিরিক পাই নুরি পাগল নামের একজন বাউলের কাছ থেকে। তাঁর গানের কথাগুলো আমাকে অনেক আগে থেকেই আকর্ষণ করে। তাঁর গানের আমি ভক্ত। ব্যান্ড করার পর ঠিক করলাম, নুরি পাগলের গানের কথাগুলো নিয়ে নিজেদের মতো সুর করে গান করলে কেমন হয়? একটা গান এমন, ‘শুনোইয়া নাই, মনের কথা কারে বা শোনাই।’ এই গানের কথাগুলো খুব সুন্দর, ‘আমার মনের কথা, শুনলে কইবে যা তা, কত যে তার ব্যথা, হিসাব–নিকাশ নাই।’ আমি নিজেও একটা গান লিখলাম, ‘হিসাবি মহাজন হিসাব নেবে বসিয়া, পাপেরই ভারে সব পুণ্য গেল ধসিয়া।’’
দলটি এখনো নতুন প্রজন্মের হাত ধরে বেঁচে আছে, তা নিয়ে হাবলু খুবই আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘আমরা নাওয়া–খাওয়া ভুলে সংগীত নিয়েই বেঁচে ছিলাম। আমাদের সন্তানেরাও যে সে পথে এসেছে, তাতে আমি খুব খুশি।’