'সেরা বাংলাবিদ' পাবে ১০ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি

বাংলা ভাষাকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে চতুর্থবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে চ্যানেল আইয়ের রিয়্যালিটি শো ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’। ‘বাংলায় জাগো ভরপুর’ স্লোগান সামনে রেখে প্রতিবছরই শুদ্ধ বাংলার চর্চাকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে ইস্পাহানি মির্জাপুর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তাদের উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে শুদ্ধ বাংলা, বানান ও ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়া। এই প্রতিযোগিতায় শুদ্ধ বাংলা ভাষার ব্যবহার, বানানচর্চা, শুদ্ধ উচ্চারণ ও ব্যাকরণের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায় শেষে চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। যে দেশসেরা বাংলাবিদ হবে সে জিতে নিবে ১০ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি।

প্রতিযোগিতার বিস্তারিত জানাতে আজ মঙ্গলবার চ্যানেল আই ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন এম এম ইস্পাহানি লিমিটেডের পরিচালক জাহিদা ইস্পাহানি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ইমেরিটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে মেধা ও মননের শ্রেষ্ঠ মিশেলের মানুষদের খুঁজে বের করা, যারা বাংলা ভাষা, বানান এবং বাংলা শব্দের ব্যবহারে দক্ষতা দেখাতে পারবে। মেধা ও মননভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন বাছাইপ্রক্রিয়া পার হয়ে যারা সত্যিকার ভাষা লড়াকু হতে চায়, তাদের এই প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন করার জন্য সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে, এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী পাবে যথাক্রমে ৩ লাখ টাকা ও ২ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি এবং প্রথম স্থান অধিকারীসহ সেরা দশজন প্রতিযোগী পাবে ১টি ল্যাপটপসহ ব্যক্তিগত লাইব্রেরি করার জন্য ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের বাংলা বই ও বইয়ের আলমারি।

এবারের প্রতিযোগিতায় খেলার ধারণ, স্টুডিও পরিধি বৃদ্ধি এবং পর্বসংখ্যা বাড়ানো হবে। এবারও প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক হিসেবে বাংলাবিদে থাকছেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর এবং অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার। এই প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ভাষা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেছেন, ‘আমাদের দেশ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের ভাষা সবকিছুই অনেক গৌরবের, অনেক অহংকারের এ কথাগুলো আমরা প্রতিনিয়তই বলে থাকি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সেগুলো নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য কে কতটুকু চেষ্টা করি? তবে কি দেশ ও ভাষার জন্য এই ভালোবাসার কথা শুধু বলার জন্যই বলা? নতুন প্রজন্ম যদি বাংলা ভাষার গুরুত্ব নতুন প্রজন্ম এবং দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত সব বাঙালির সামনে তুলে ধরতে পারেন তবেই সার্থক হবে আমাদের এই আয়োজনের। মূলত এই ধারা বজায় রাখতেই ইস্পাহানি আয়োজিত ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’ প্রতিযোগিতায় চতুর্থবারের মতো আয়োজনে তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো চ্যানেল আই।

ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘আশা করি আগের তিন বর্ষের তুলনায় অনেক বড় পরিসরে এবং সুন্দরভাবে আয়োজিত হবে অনুষ্ঠানটি।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘আশা করছি পরবর্তী প্রজন্ম যেন বাংলাকে ধারণ করতে পারে হৃদয়ে এবং মস্তিষ্কে।’
অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাকে ছড়িয়ে দেওয়া চারদিকে। কারণ, এই বাংলার জন্যই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।’

প্রাথমিকভাবে এ বছর দেশের সব বিভাগের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। আটটি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি কুমিল্লা শহরে এবারও প্রাথমিক বাছাইপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ও নির্বাচিত সেরা ছাত্রছাত্রীদের মূল পর্বে নিয়ে আসা হবে। বিভাগীয় সেরা প্রতিযোগীরা ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদের স্টুডিও রাউন্ডে অংশ নিয়ে বাংলায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে লড়বে, যা পরবর্তী সময়ে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় প্রদর্শিত হবে। ২০টি পর্বের আকর্ষণীয় এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ীদের নির্বাচন করা হবে। চতুর্থ বর্ষের জন্য নিবন্ধন শুরু হয়েছে ২১ জানুয়ারি। চলবে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে এই প্রতিযোগিতায় বিগত বছরগুলোতে যারা অংশ নিয়ে ২০তম স্থান পর্যন্ত আসতে পেরেছে, তারা আবেদন করতে পারবে না।

ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ প্রথম বর্ষ ২০১৭ প্রতিযোগিতায় সেরা বাংলাবিদের পুরস্কার জিতে নিয়েছিল রাজধানী ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত সায়েম, দ্বিতীয় বর্ষ ২০১৮ সেরা বাংলাবিদের পুরস্কার জিতেছিল চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেবস্মিতা সাহা এবং তৃতীয় বর্ষ ২০১৯ সেরা বাংলাবিদ হয়েছিল বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী পি কে এম শাজেদুর রহমান।