তারকাদের 'হাতের পাঁচ'

>তারকাদের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি নির্ভর করে দর্শক–শ্রোতাদের হাতে। দর্শক চাইলে তাঁরা অভিনয়ে সরব থাকতে পারেন বছরের পর বছর। আবার ভক্তরা মুখ ফিরিয়ে নিলে হুট করেই বেকার হয়ে যেতে পারেন অনেকে। তাই বলিউডের তারকারা হাতের পাঁচ হিসেবে নিজেদের নিয়মিত গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে গিয়ে নাম লেখান ব্যবসায়ী হিসেবে। নিজের শীর্ষে থাকার সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যবসায়িক পণ্যের খুব প্রচার করেন। ইদানীং তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক তারকাশিল্পী নিজের সিনেমার চেয়ে বেশি নিজের ব্যবসায়িক পণ্যের প্রচার করছেন। এ তালিকায় নাম আছে সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফ, দীপিকা পাড়ুকোনদের মতো বড় বড় তারকার। চলুন, দেখে নেওয়া যাক অভিনয়ের বাইরে কে কোন ব্যবসায় নিজেদের হাত পাকাচ্ছেন। লিখেছেন দেবারতি ভট্টাচার্য

আনুশকা থেকে নুশ

এ প্রজন্মের তরুণীদের চোখে ফ্যাশনের বেলায় অন্যতম আদর্শ আনুশকা শর্মা। এই বলিউড নায়িকাও তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছেন বাজারে, নাম নুশ। এরই মধ্যে ‘নুশ’ ব্র্যান্ডটি ভারতের ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। ‘শপার্স টপ’-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তিনি নিয়ে এসেছেন এই পোশাকের ব্র্যান্ড। আনুশকার এই দোকানে পাওয়া যায় জমকালো সাবেকি পোশাক, হিট পাশ্চাত্য পোশাক, গয়না ও জুতা। অন্যান্য তারকার ব্র্যান্ডের তুলনায় নুশ একটু বেশি দামি। তবে আনুশকার পোশাক গুণগত মান ও স্টাইলের দিক থেকে সবাইকে টেক্কা দিতে পারে।

সোনম কাপুর

এই মুহূর্তে বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্যাশন আইকন হলেন সোনম কাপুর। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বলিউডের তারকারাও তাঁর ফ্যাশন অনুসরণ করেন। বড় বড় অনুষ্ঠানের লালগালিচায় সোনমের দুরন্ত ফ্যাশন রীতিমতো শাসন করে। বেশ কিছুদিন আগে এই বলিউড সুন্দরী ও তাঁর বোন রিহা কাপুর নিয়ে এসেছেন তাঁদের নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘রিহসন’। দুই বোনের নাম দিয়ে ব্র্যান্ডটির নাম রাখা হয়েছে। শপার্স স্টপের সঙ্গে যৌথভাবে এই দুই বোন শুরু করেছেন ব্র্যান্ডটি। তবে রিহসনের পোশাকের দাম কখনোই আকাশছোঁয়া নয়, এ জন্যই ভারতীয় তরুণদের মধ্যে অল্প সময়ে বেশ খ্যতি কুড়িয়েছে ব্র্যান্ডটি।

সালমান খানের বিইং হিউম্যান

বলিউড তারকা সালমান খানের পাশাপাশি তাঁর ‘বিইং হিউম্যান’ সমানভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাল্লুর নামের বদৌলতে এই ব্র্যান্ড ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, এমনকি বাংলাদেশেও। তরুণদের কাছে এই ব্র্যান্ডের টি–শার্টের বেশ কদর। সালমানের শেষ কয়েকটা ছবি, যেমন টিউবলাইট, ভারত বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও বিইং হিউম্যান কিন্তু দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে। ২০১২ সালে সালমানের নিজস্ব এই ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। সালমানের মুম্বাইভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘বিইং হিউম্যান ফাউন্ডেশন’-এর ছাতার তলায় জন্ম নেয় ব্র্যান্ডটি। বলা হয়ে থাকে, এই ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করে অর্জিত অর্থের পুরোটাই অসহায় ও দুস্থ মানুষের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ব্যয় হয়। সালমানের হাতে গড়া এই ব্র্যান্ডে পাওয়া যাচ্ছে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সাজিয়ে রাখার মতো পোশাক ও অনুষঙ্গ। এমনকি এই ব্র্যান্ডের ই–সাইকেলও আছে।

বিইং হিউম্যানের পাশাপাশি সালমান নাম লিখিয়েছেন শরীরচর্চার সরঞ্জাম প্রস্তুত ও আমদানির ব্যবসাতেও। শরীরচর্চার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী সালমানের ব্র্যান্ডটির নাম এসকে–২৭।

পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে দীপিকা

দীপিকা পাড়ুকোন বলিউডের অন্যতম ফ্যাশন আইকন। কান চলচ্চিত্র উৎসবের লালগালিচা থেকে আইফার মঞ্চ—সবখানেই তাঁর দুরন্ত ফ্যাশন সবার নজর কাড়ে। এই বলিউড সুন্দরী তাই অভিনয়ের পাশাপাশি ফ্যাশন দুনিয়ায় হাজির করেছেন তাঁর ব্র্যান্ড ‘অল অ্যাবাউট ইউ’ নিয়ে, যার অর্থ নিজেকে নিজের ইচ্ছেমতো সাজিয়ে তোলো। ভারতীয় ফ্যাশন হাউস মন্ত্র ও ফরাসি ডিজাইন কোম্পানি ‘কার্টিন’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি তাঁর ব্র্যান্ডটি চালু করেছেন। এই বলিউড অভিনেত্রী সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও তাঁর পোশাক সবার নাগালের মধ্যে। পোশাকের পাশাপাশি মানানসই অলংকারও পাওয়া যায় অল অ্যাবাউট ইউতে। ব্র্যান্ডটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পোশাক বিক্রি করে অর্জিত অর্থ দীপিকা মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য দান করেন।

হৃতিক রোশনের এইচআরএক্স

বলিউডের সবচেয়ে ফিট ও সুদর্শন তারকাদের মধ্যে অন্যতম হৃতিক রোশন। সুস্থ ও সুঠাম থাকা তাঁর জীবনের মন্ত্র। তিনি চান, তাঁর মতো সবাই যেন সুস্থ, সুন্দর ও সুঠাম থাকে। এই অনুপ্রেরণা থেকেই ২০১৩ সালে হৃতিক তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘এইচআরএক্স’ নিয়ে বাজারে আসেন। নিজেই নিজের ব্র্যান্ডের মডেল হয়ে এইচআরএক্সকে অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিয়ে যান জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এর ফলে ব্যবসার দিক থেকেও এগিয়ে যায় ব্র্যান্ডটি। মূলত এই ব্র্যান্ড বিক্রি করছে স্পোর্টস ও শরীরচর্চা–সহায়ক নানা সরঞ্জাম, পোশাক, জুতা, টুপি, ব্যাগসহ আরও নানান কিছু।

ক্যাটরিনা কাইফ

ক্যাটরিনা কাইফ নিজে মেকআপ করতে ভালোবাসেন। তাই নিজেকে ‘মেকআপ গার্ল’ বলে মনে করেন এই বলিউড সুন্দরী। চার বছর আগে থেকে এই বলিউড নায়িকা নিজের একটি প্রসাধন সামগ্রীর ব্র্যান্ড চালু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। অবশেষে ‘নাইকা’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্যাটরিনা সৌন্দর্যের বিকিকিনির হাটে নিয়ে এলেন তাঁর বিউটি লাইন ‘কে বাই ক্যাটরিনা’। তবে তিনি মনে করেন, সৌন্দর্য কখনো মেকআপ থেকে আসে না। প্রতিটি নারীর মধ্যে তার নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। মেকআপ সেই সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। নারীর বিভিন্ন মুডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানান রঙের প্রসাধনসামগ্রী নিয়ে এসেছে কে বাই ক্যাটরিনা। সাধ্যের মধ্যে সাধ মেটাতে পারে ক্যাটরিনার বিউটি লাইন।