কমানোর বদলে বাড়ানো হয়েছে

বিএফডিসির শুটিংয়ের কারিগরি যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার ভাড়ার হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালকেরা। ছবি: প্রথম আলো
বিএফডিসির শুটিংয়ের কারিগরি যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার ভাড়ার হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালকেরা। ছবি: প্রথম আলো

কম টাকায় চলচ্চিত্র বানানোর জন্য বিএফডিসির শুটিংয়ের কারিগরি যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার ভাড়ার হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক–পরিচালকেরা। কিন্তু গত বছরের ২১ নভেম্বর এফডিসির নতুন ভাড়ার তালিকায় উল্টা ঘটনা ঘটেছে। কমানো হয়নি; বরং প্রায় সবকিছুই বেড়েছে। কোনো কোনোটিতে ভাড়া কয়েক গুণ বেড়েছে। এই নতুন ভাড়ার তালিকা ১৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে চলচ্চিত্র প্রযোজকদের মধ্যে।

চলচ্চিত্র নির্মাণসংশ্লিষ্ট সবকিছুতেই প্রতি শিফটে টুকটাক বাড়লেও অনেক যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার ভাড়া বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে প্রশাসনিক ভবনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের রুম ও কনফারেন্স রুমের শুটিং ভাড়া ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। ভিআইপি প্রজেকশন হলের ভাড়া ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে। একই হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ব্যতীত চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অন্য সব অনুষ্ঠান করতে গেলে ২১ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হবে। ডিটিএস ভবনের হলরুমে বিএফডিসিতে নির্মিত সিনেমা প্রদর্শনীর জন্য ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। এফডিসির বাইরে নির্মিত চলচ্চিত্রের জন্য ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। কালার ল্যাবে শুটিং ভাড়া ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। দেশের মধ্যে এফডিসির সব ধরনের ক্যামেরা ভাড়া অল্প কিছু বাড়লেও শুটিং করতে দেশের বাইরে নিতে রেড ড্রাগনের ভাড়া ১ হাজার ৩০০ থেকে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা, সনি ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা, রেড স্কারলেটের ভাড়া ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। মেকআপ রুমের ভাড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা হয়েছে। সেন্সর বোর্ডে ছবি জমা দিতে বিএফডিসির অনাপত্তিপত্র লাগে। বিএফডিসির বাইরে শুটিংকৃত ছবির জন্য অনাপত্তিপত্র বাবদ ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে নতুন তালিকায় ১ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

ভাড়া বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে চাইছেন না প্রযোজক–পরিচালকেরা। তাঁদের কথা, এমনিতেই সিনেমা চলছে না। লোকসানের জন্য প্রযোজকেরা আর ফিরছেন না প্রযোজনায়। এর মধ্যে বাড়তি ভাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণে আরও নিরুত্সাহিত করবে। প্রযোজক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে আমরা তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছিলাম এফডিসির সবকিছুতেই ভাড়ার হার অর্ধেক কমানোর জন্য। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখছি কমানো তো দূরের কথা, আগে যে ভাড়ার হার ছিল তা থেকে সবকিছুতেই কমবেশি বেড়েছে। কোনো কোনো যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার ভাড়া কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। এটি প্রযোজকদের জন্য অমানবিক। চলচ্চিত্রের এখন দুঃসময়। আমরা চেয়েছি ভাড়া কমিয়ে উত্পাদন বাড়াতে।’

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিচালক নেতা সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘এফডিসির চাইতে বাইরে কম খরচে ছবি নির্মাণ করা যায়। ভাড়া কমলে সবাই এফডিসিমুখী হবেন। কিন্তু এখন উল্টা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এটি আমরা মানব না।’

এখন সমিতির নেতারা চাইছেন বর্তমান ভাড়ার তালিকা বাতিল করে আগের যে ভাড়ার হার ধার্য ছিল, তা থেকেও অর্ধেক কমাতে। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার তথ্যমন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও তথ্যসচিবের সঙ্গে সভা করেছেন প্রযোজক সমিতির নেতারা। তাঁরা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে ভাড়া বাড়ার বিষয়টি অবগত করেছেন। পাশাপাশি বর্তমান ভাড়ার তালিকা বাতিল করে আগের ভাড়ার হারকেও অর্ধেক করার জন্য নতুনভাবে আবেদন করেছেন।

এ ব্যাপারে শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি লিখিত আকারে দিলে মন্ত্রী আমাদের বলেছেন, বাড়তি ভাড়া থাকবে না। তথ্যমন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি ভালোভাবেই দেখবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’

এদিকে প্রযোজক সমিতির ভাড়া কমানোর আবেদনটি পুনর্বিবেচনা করতে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিএফডিসিতে পাঠানো হয়েছেন বলে জানান তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগের উপসচিব নজরুল ইমলাম। তিনি বলেন, ‘প্রযোজক সমিতির নেতাদের আবেদনটি বিএফডিসিতে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে একটা কমিটি আছে। আবেদনটি বিবেচনা করার জন্য বসবে তারা। এরপর ভালো–মন্দের সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে পাঠলেই আমরা স্বাক্ষর করে দেব। আশা করছি, প্রযোজকদের জন্য ভালো কিছু হবে।’

এদিকে বিএফডিসির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন জানান, এখনো তাঁরা ওই আবেদনটি হাতে পাননি। তিনি বলেন, ‘হয়তো আজ–কালের মধ্যেই পেয়ে যাব। পেলে এ–সংক্রান্ত আমাদের কমিটি আগের ভাড়ার তালিকার সঙ্গে বর্তমান ভাড়ার তালিকা মিলিয়ে বিবেচনা করবে। এরপর মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে পাঠালে তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন।’