তেলের বিজ্ঞাপন করে বিপাকে মিমি

মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

দৃশ্যটা এমন, একটি আয়নার সামনে চুল বাঁধছিলেন কলকাতার বড় পর্দার তারকাশিল্পী ও সাংসদ মিমি। পেছন থেকে এসে মুম্বাইয়ের তারকাশিল্পী বিদ্যা বালান তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘এখনো চুল নিয়ে পড়ে?’ জবাবে মিমি বলছেন, ‘আমি এখন জনপ্রতিনিধি। তাই তাঁর যোগ্য হেয়ারস্টাইল।’

এই বাণিজ্যিক পণ্যের বিজ্ঞাপনে ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয় ব্যবহার করে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ভারতের পশ্চিম বাংলার যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। স্থানীয় আইনজীবীদের মতে, সাংসদদের আদর্শ আচরণবিধিতে ‘স্বার্থের সংঘাত’ সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। তাঁদের মতে, কোনো জনপ্রতিনিধি রাজ্য বা দেশের জন্য তৈরি বিজ্ঞাপনে নিজের নাম ব্যবহার করলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু বাণিজ্যিক সংস্থায় এই পরিচয় ব্যবহার করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন চিত্রে মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইউটিউব থেকে
বিজ্ঞাপন চিত্রে মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইউটিউব থেকে

যথারীতি সুযোগটা নিয়েছেন সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস—তিন বিরোধী দলের অনেক নেতা। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। আসানসোলের সাংসদ সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয় মন্তব্য করেছেন, ‘এভাবে বিজ্ঞাপন করা একেবারেই অনুচিত কাজ। মিমির উচিত এখনই এই ভুল শুধরে নেওয়া।’ হুগলি থেকে নির্বাচিত বিজেপির আরেক সাংসদ অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সরাসরি অভিযোগ তোলেননি। তির্যক মন্তব্য করেছেন। লকেটের ভাষায়, ‘মিমি নিশ্চয়ই সাংসদদের বিধিনিষেধ নিয়ে আইন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত নন। না জেনেই করেছেন।’ কিন্তু একজন সাংসদ হিসেবে মিমির আইনটা জেনে রাখা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন হুগলির সাংসদ। তিনি এও জানান, এর আগে অন্য কোনো তারকা-সাংসদকে ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়ে বিজ্ঞাপনে কাজ করতে দেখেননি তিনি।

তবে বিনোদন জগতের বাইরে বিজেপির নেতারা বিষয়টি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। স্থানীয় বেশ কিছু চ্যানেলে বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু কড়া গলায় বলেছেন, ‘একজন সাংসদ কীভাবে এই ধরনের কাজ করেন! নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে সেই পরিচয় ব্যবহার করে যে তিনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন না, তা কি জানা নেই মিমি চক্রবর্তীর? তিনি আরও বলেন, ‘বুঝে দেখুন, তৃণমূল থেকে কাদের সংসদে পাঠানো হয়েছে।’ সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তী একটু নমনীয়। মিমিকে নয়, বরং দলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘মিমির বয়স কম, অনভিজ্ঞ। দলের উচিত ওর ভুল শুধরে দেওয়া।’

সাংসদ নুসরাত জাহান আর মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
সাংসদ নুসরাত জাহান আর মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বিতর্কের ঢেউ কেন্দ্রীয় পর্যায়েও। নয়াদিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পীযুষকান্তি রায়ের মন্তব্য, ‘এভাবে বিজ্ঞাপনী প্রচার করাটা পুরোপুরি আইনসিদ্ধ হয়নি৷ একজন সাংসদকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, তিনি কখনোই সাধারণ লোকদের মতো ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে চলতে পারেন না৷ বিজ্ঞাপন যদি রাজ্য সরকারের তরফে বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রচারিত হতো, তা হলে অন্য কথা ছিল৷ বিষয়টি যদি সংসদের এথিক্স কমিটির কাছে যায়, তা হলে আমি অবাক হব না।’ সুপ্রিম কোর্টের আর এক আইনজীবী ও বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের কথায়, ‘এই ধরনের বিজ্ঞাপন অবশ্যই আইনবিরোধী৷ মনে রাখতে হবে, একজন সাংসদ আইন প্রণেতা৷ তাঁর প্রোটোকল রয়েছে৷ সেই প্রোটোকল উনি নিজেই ভাঙলেন।’

মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বেশ কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, মিমি তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছেন। মিমির বক্তব্য, তিনি এসব নিয়মকানুন একেবারে জানতেন না। তাঁকে যা পড়তে বলা হয়েছিল, তিনি সেটাই পড়ে দিয়েছেন। তিনি যে বিজ্ঞাপনটি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে তিনি কথা বলে বিতর্কিত অংশটি বাদ দেওয়ার কথা বলবেন।

গত বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে রাজনীতিতে যোগ দেন চিত্রনায়িকা নুসরাত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী। ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন নুসরাত জাহান আর যাদবপুর আসন থেকে মিমি চক্রবর্তী।