রণবীর ছায়ার মতো কপিলকে অনুসরণ করত: কবির খান

কবির খান
কবির খান
>কবির খান মানেই বক্স অফিসে চূড়ান্ত সফলতা। একাধিক সফল ছবির কারিগর তিনি। সালমান খান এবং কবিরের জুটি সবসময় পর্দায় ঝড় তুলেছে। কবির পরিচালিত এক থা টাইগার, বজরঙ্গী ভাইজান, টিউবলাইট ছবিতে কাজ করেছেন বলিউডের ভাইজান। এই সব ক’টি ছবি বক্স অফিস কাঁপিয়েছে, প্রশংসা কুড়িয়েছে সমালোচকদের। এবার ডিজিটাল দুনিয়ায় পা রাখলেন জনপ্রিয় এই পরিচালক। ওয়েব প্লাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও-তে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কবিরের প্রথম ওয়েব সিরিজ দ্য ফরগটেন আর্মি। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে বলিউডের খ্যাতনামা পরিচালকের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

দেবারতি ভট্টাচার্য: ২০ বছর আগে আপনি ‘দ্য ফরগটেন আর্মি’-র ওপর একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন। আপনার পরিচালনার হাতেখড়ি এই তথ্যচিত্র দিয়েই। ২০ বছর পর আবার এই প্রযোজনা দিয়েই ডিজিটাল দুনিয়ায় অভিষেক হচ্ছে আপনার। একে কি তাহলে আপনার স্বপ্নের প্রজেক্ট বলা যায়?

কবির খান: অবশ্যই এটা আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট। আমি তখন ২৫ বছরের তরুণ। সবে ফিল্ম স্কুলে পড়াশোনা করছি। দুই ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা লক্ষী সায়ল ও গুরুবক্স সিং ধীলনকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানানোর সুযোগ পাই। আমি যখন তথ্যচিত্রটা বানিয়েছিলাম তখন তাঁদের বয়স ৮৬ বছর। আমি টানা তিন মাস তাঁদের সঙ্গে নানা জায়গায় গেছি। মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর, সেখান থেকে বার্মা হয়ে ভারতে এসেছিলাম। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় আজাদ হিন্দ ফৌজের সেই পথকে আমরা আবার আবিষ্কার করেছিলাম। এই ইতিহাস যাঁরা নির্মাণ করেছিলেন তাঁদের মুখ থেকেই আমি সেই ইতিহাস শুনেছিলাম। এটা আমার কাছে ছিল এক ঐতিহাসিক সফর। ওই কাজটাই আমাকে চিত্রনির্মাতা হতে উদ্বুদ্ধ করে। সে সময় খুবই সফল হয়েছিল আমার কাজটি। তবে আমি চেয়েছিলাম আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে আরো সুন্দর করে এটা পরিবেশন করতে। এখন তো ডিজিটাল মাধ্যমের জনপ্রিয়তা ক্রমশ উর্দ্ধমুখী। তাই অবশেষে এই মাধ্যমকেই বেছে নিলাম। 

দেবারতি: আপনি বানানো সেটের চেয়ে সত্যিকারের লোকেশনে শুটিং করতে ভালবাসেন। এই ওয়েব সিরিজের জন্যও কি সত্যিকারের লোকেশন বেছে নিয়েছিলেন?

কবির: একদম ঠিক। আমি সবসময় রিয়েল লোকেশনে শুট করে এসেছি। সেটের মধ্যে শুটিং হলে আমি ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। কাজের সূত্রে আমি ৮০টা দেশে গিয়েছি। দ্য ফরগটেন আর্মি-র শুটিংয়ের জন্য বার্মার জঙ্গল আর পাহাড়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বার্মায় গিয়ে শুটিং করতে পারব না। তাই থাইল্যান্ড ও বার্মার সীমান্তকে বেছে নিয়েছিলাম। থাইল্যান্ডের কোয়াই নদীর তীরে আমাদের শুটিং হয়েছে। আমরা এমন জায়গায় শুটিং করেছি যেখানে পাহাড়ও আছে। আমাদের এক ঘণ্টা সময় লাগত পায়ে হেঁটে পাহাড়ে চড়তে। 

দেবারতি: আর কিছু দিন পর আপনার আরেকটা স্বপ্নের প্রজেক্ট ৮৩ ছবিটা আসতে চলেছে। এই ছবির একের পর এক নতুন স্থিরচিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। ৮৩ ছবির চরিত্রগুলোর জন্য শিল্পী নির্বাচন আপনার কাছে কতটা কঠিন ছিল?

কবির: এই ছবির কাস্টিং সত্যিই আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই ছবিতে শিল্পীদের শুধু তাঁদের অভিনীত চরিত্রের মতো দেখলেই হবে না, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সেই ক্রিকেটারদের মতো করে ক্রিকেট খেলতেও হবে। শ্রীকান্তের চরিত্রে যে অভিনয় করেছে, তাকে শ্রীকান্তের মতো খেলতেও হয়েছে। আর এটা ছিল কাস্টিংয়ের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। ৮৩ ছবির অভিনেতারা এত ভালো ক্রিকেট খেলছে যে তাঁরা অনায়াসে আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) খেলতে পারবে। 

দেবারতি: ৮৩-র অন্যতম সেরা প্রাপ্তি কি রণবীর সিং?

কবির: তা বলতে পারেন। রণবীর অত্যন্ত এনার্জেটিক ও পরিশ্রমী। কপিল দেবের সঙ্গে তাঁর দিল্লির বাড়িতে রণবীর তিন দিন কাটিয়েছে। রণবীর ছায়ার মতো কপিলকে অনুসরণ করত। এমনকি কপিল দেবের বিজনেস মিটিংয়েও হাজির থাকত। সে মিটিং রুমের এক কোণায় গিয়ে বসে থাকত।

দেবারতি: কপিল দেবের স্ত্রী রোমির চরিত্রে দীপিকাকে দেখা যাবে। এ প্রসঙ্গে কী বলতে চান?

কবির: এই ছবিতে দীপিকার চরিত্রটি ছোট। তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীপিকা ওর চরিত্র যথাযথভাবে পালন করেছে। 

দেবারতি: ওয়েব সিরিজের কুরুচিকর ভাষা ও দৃশ্য নিয়ে হামেশাই প্রশ্ন ওঠে। আপনি কী মনে করেন আদৌ এসবের প্রয়োজন আছে? 

কবির: আমি সেলফ সেন্সরশিপে বিশ্বাস করি। জোর করে কুরুচিকর শব্দ বা দৃশ্য ঢোকানোর প্রয়োজন নেই। যদি চিত্রনাট্যে সত্যি এর প্রয়োজন থাকে তবে তা রাখা যেতে পারে।