'ম্যাকগাইভার' এখন যেমন আছেন

সেকালের ম্যাকগাইভার, একালের রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
সেকালের ম্যাকগাইভার, একালের রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

‘টেলিফোন ধরিনা কবিতা পড়ি না/ রাত জেগে দেখি না ভিসিআর/ আমার দুটি চোখ শুধু তাঁকে খুঁজে ম্যাকগাইভার/ হ্যালো ম্যাকগাইভার, হ্যালো ম্যাকগাইভার...।’ নব্বই দশকে ডলি সায়ন্তনীর গাওয়া আলোচিত গানটি করা হয়েছিল ওই সময়ে তুমুল জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিয়াল ম্যাকগাইভারকে কেন্দ্র করে। একটি বিদেশি সিরিয়াল কতটা জনপ্রিয় হয়েছিল, তার ভালো উদহারণ গানটি। শুধু গান নয়, ওই সময়ে ম্যাকগাইভারের ছবি আঁকা খাতা আর ভিউকার্ড স্টিকার ছড়িয়ে থাকত বাজারময়। বিক্রিও হতো দেদার। বড় হয়ে কী হতে চাও? সে সময় অনেক কিশোরেই এ প্রশ্নের ‘কমন’ উত্তর ছিল ‘ম্যাকগাইভার’।

মার্কিন টিভি সিরিজ ম্যাকগাইভার প্রচারিত হয় ১৯৮৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯২ সালের ২১ মে পর্যন্ত, এবিসি নেটওয়ার্কে। সিরিজটির নায়ক ম্যাকগাইভার অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও নানা কৌশলে পারদর্শী একজন সাবেক সিক্রেট এজেন্ট।

ম্যাকগাইভারের ভূমিকায় অভিনয় করেন রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ম্যাকগাইভারের ভূমিকায় অভিনয় করেন রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ম্যাকগাইভার কম, রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন বেশি

রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন। পর্দায় এই কিঞ্চিৎ অচেনা নামের লোকটাই নিজের নাম ছাপিয়ে হয়ে উঠেছিল সেই চরিত্র। তাই তার নাম বরং ম্যাকগাইভার–ই। ২৩ জানুয়ারি ছিল ‘ম্যাকগাইভার’ তথা রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসনের জন্মবার্ষিকী। ২০২০ সালে ৬৯ বছর পেরিয়ে পা রাখলেন ৭০–এ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনে চেনা সেই ম্যাকগাইভার বদলে গেছেন বেশ খানিকটা। ওজন বেড়েছে শরীরের। তিনি এখন ম্যাকগাইভার কম, রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন বেশি।

‘ম্যাকগাইভার’ যেমন ছিল

এ শিল্পী তাঁর ক্যারিয়ার গড়েছেন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই। নানা সিরিয়াল এবং সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু দুনিয়াজোড়া খ্যাতিটা তাঁর ‘ম্যাকগাইভার’ সিরিজ থেকেই এসেছে। ম্যাকগাইভারের প্রতিটি পর্বের আলাদা নাম ও আলাদা গল্প থাকত। প্রতিটি পর্বে থাকত নতুন নতুন বান্ধবীও। ম্যাকগাইভারের অধিকাংশ কৌশল থাকত বিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে, কখনো রসায়নের, কখনো পদার্থবিদ্যার। মার্কিন টেলিভিশনের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পায় এই টিভি সিরিজ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশেও এই সিরিজ মূল ইংরেজি ভাষাতেই তুমুল জনপ্রিয় ছিল।

ফিরে দেখা শৈশব

রিচার্ড ডিন অ্যান্ডারসন ১৯৫০ সালের ২৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাবা স্টুয়ার্ট অ্যান্ডারসন ও মা জুকেলিন কার্টারের চার সন্তানের মধ্যে সবার বড়। তাঁর বড় হয়ে ওঠা মিনেসোটার রোজভ্যালিতে। সেখানকার আলেক্সজান্ডার র‍্যামসি হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন তিনি। শৈশবে হকি খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলেন ‘ম্যাকগাইভার’। একবার হাত ভেঙে গেলে সেই আশা অপূর্ণ থেকে যায়। এরপর তিন মাসের মধ্যেই অপর হাতটিও ভেঙে হকির স্বপ্ন সেখানেই চুরমার হয়ে যায়।

ম্যাকগাইভারের দৃশ্যে সহশিল্পীর সঙ্গে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ম্যাকগাইভারের দৃশ্যে সহশিল্পীর সঙ্গে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

স্বপ্ন তখন সংগীতকে ঘিরে

এরপর স্কুলে পড়ার সময় তাঁর নতুন স্বপ্ন হয় জ্যাজ মিউজিশিয়ান হওয়ার। স্বপ্ন সত্যি করতে অনেক দিন গানের পেছনে ছুটেছেন তিনি। গান গাইতে গাইতেই আবিষ্কার করেন, তাঁর আগ্রহ আসলে অভিনয়ে। গানবাজনাকে বিদায় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট ক্লাউড স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয়ে পড়াশোনা শুরু করেন রিচার্ড। এরপর ভর্তি হন ওহিও ইউনিভার্সিটিতে। এ সময় হঠাৎই সাইকেলে করে আলাস্কা ঘুরতে চলে যান রিচার্ড। সাইকেল চালানোর লোভেই নাকি শেষ বর্ষে এসে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদায় জানান ম্যাকগাইভার তারকা।

এরপর আরও কত কী

এরপর সামুদ্রিক প্রাণীদের সার্কাস, থিয়েটার থেকে শুরু করে রাস্তায় জাদু দেখানোর কাজও করেছেন তিনি। অনেকটা সময় এখানে-সেখানে ঘুরে শেষ পর্যন্ত ২৬ বছর বয়সে অভিনয়ে নিয়মিত হন। ৩৫ বছর বয়সে ম্যাকগাইভার সিরিজে অ্যাঙ্গাস ম্যাকগাইভার চরিত্রে অভিনয় করে তারকাখ্যাতি পান রিচার্ড।

সর্বশেষ সিনেমা ও অন্যান্য

তাঁর অভিনীত সর্বশেষ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১০ সালে। তবে সিনেমা না করলেও টিভি সিরিজে অভিনয় আর প্রযোজনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। নির্বাহী প্রযোজকও ছিলেন বেশ কয়েকটি টিভি সিরিজে। তিনি শুধু অভিনয়েই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বিভিন্ন সিরিজে তাঁর গাওয়া গানও ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিয়ে করেননি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিয়ে করেননি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

‘ম্যাকগাইভারে’র সামাজিক কর্মকাণ্ড

সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি রয়েছেন নানা ধরনের দাতব্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। পানিদূষণ রোধে তিনি কাজ করছেন। পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত। কাজ করছেন সমাজের অবহেলিত ও অনাথ শিশু–কিশোরদের নিয়ে। স্পেশাল অলিম্পিকেও রয়েছে তাঁর অবদান। তা ছাড়া অসুস্থ ও মৃত্যুপথযাত্রী শিশু–কিশোরদের জন্য মেক-এ-উইশ ফাউন্ডেশনেও তিনি কাজ করছেন নিরলসভাবে।

চিরকুমার ম্যাকগাইভারের অবসর

ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি তিনি। তবে তাঁর বান্ধবী ছিল না, তা নয়। ছিল একাধিক বান্ধবী। তাঁদের মধ্যে কোনো এক বান্ধবীর ঘরে রয়েছে ২০ বছর বয়সী একটি মেয়ে। অবসর সময় তিনি মেয়ের সঙ্গেই কাটাতে বেশি পছন্দ করেন।