যৌথ প্রযোজনা: নতুন বছরেও সাড়া নেই

রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট ছবির দৃশ্যে মাহিয়া মাহি ও অঙ্কুশ।  ছবি: সংগৃহীত
রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট ছবির দৃশ্যে মাহিয়া মাহি ও অঙ্কুশ। ছবি: সংগৃহীত

ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ছে কলকাতা ও ঢাকার যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সংশোধিত নতুন নীতিমালা ঘোষণা হয়। এরপর থেকে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ কমতে শুরু করে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে নতুন নীতিমালায় একটি ছবিও মুক্তি পায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছরেও যৌথ প্রযোজনার ছবির তৈরি নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।

নতুন নীতিমালায় ছবি তৈরি না হওয়ার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নীতিমালার কিছু শর্ত। যা ছবি তৈরিতে মানতে পারছেন না প্রযোজক ও পরিচালকেরা। রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট, আশিকী, শিকারী, নবাব, বাদশা, বস ২, নূরজাহানসহ বেশ কিছু যৌথ প্রযোজনা ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘আমরা গত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ ১৩টি যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করেছি। ছবিগুলো আয়ও করেছে বেশ। কিন্তু নতুন নীতিমালা আসার পর গত দুই বছরে আর যৌথ প্রযোজনা নিয়ে কাজ করিনি। বর্তমান নীতিমালা সঠিকভাবে মেনে কোনোভাবে ছবি নির্মাণ সম্ভব না।’

এই কর্মকতা জানান, ২০১৮ সালে নতুন নীতিমালায় অনুমোদন নিয়ে প্রেম আমার ২ ও সুলতান—দ্য সেভিয়ার নামে দুটি ছবি নির্মাণ শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ছবি তৈরির মাঝপথে গিয়ে নীতিমালা মেনে তাঁদের নির্মাণ সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত কলকাতার একক ছবি হিসেবে তৈরি হয়েছে ছবিটি। পরবর্তী সময়ে এই দুটি ছবি আমদানির মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশে।

এ ছাড়া বেঙ্গল ক্রিয়েশনস ও ভারতের নাথিং বিয়ন্ডের যৌথ প্রযোজনায় ২০১৮ সালে বালিঘর নামে আরেকটি ছবিও নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ছবিটিও আর তৈরি হয়নি। আর ২০১৯ সালে দিন দ্য ডে ও ফুড়ুৎ নামে মাত্র দুটি ছবির চিত্রনাট্য যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন বছরে এখনো যৌথ প্রযোজনার কোনো ছবির চিত্রনাট্য অনুমোদনের আবেদন পড়েনি এই কমিটির হাতে।

নুসরাত ফারিয়া
নুসরাত ফারিয়া

বিএফডিসির পরিচালক (উৎপাদন) ও ব্যস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং যৌথ প্রযোজনার চিত্রনাট্য প্রাথমিক যাচাই–বাছাই কমিটির সভাপতি নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, ‘গত বছরে দুটি চিত্রনাট্যের অনুমোদন দিয়েছি। এ বছর কোনো চিত্রনাট্য এখনো জমা পড়েনি।’
সংশোধিত নীতিমালা আসার পর যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ কমে গেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। গত সপ্তাহে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিংয়ে বসেন প্রদর্শক সমিতি ও প্রযোজক সমিতির নেতারা। তাঁরা নীতিমালার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছেন মন্ত্রীর সঙ্গে। প্রযোজক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, ‘নতুন নীতিমালা বেশি কঠিন হয়ে গেছে। এই নীতিমালা মেনে দুই দেশের কোনো প্রযোজকই কাজ করতে চাইছেন না। ২০১৫ সালের পর কয়েক বছর যৌথ প্রযোজনার ছবির কারণে বেশ চাঙা হয়েছিল চলচ্চিত্রাঙ্গন। গত দুই বছর তেমন কোনো যৌথ প্রযোজনার ছবি নেই। এখন নীতিমালা সহজ হলে সিনেমা নির্মাণ বাড়বে। সিনেমা হলও বাঁচবে। তবে যৌথ প্রযোজনার নামে প্রতারণা যেন না হয়, সেই বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে। গত সপ্তাহে আমরা তথ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, নীতিমালা কমিটির সঙ্গে মিটিং করে একটা ব্যবস্থা নেবেন।’

যৌথ প্রযোজনার একাধিক ছবিতে কলকাতা থেকে প্রযোজনায় ছিল এস কে মুভিজ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশোক ধানুকা বলেন, ‘নতুন নীতিমালা সহজ না করা পর্যন্ত কাজ করা যাবে না। সবশেষ ভাইজান এলো রে, চালবাজ ও তুই শুধু আমার—এই তিনটি ছবি করতে খুব ঝামেলায় পড়েছিলাম। আর ঝামেলায় পড়তে চাইছি না। পরিবেশ তৈরি না হলে আপাতত কাজ করব না।’

এ ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র শাখার উপসচিব সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘নীতিমালা কমিটির এখনো এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত আলাপ–আলোচনা হয়নি।’