বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে 'কৃষ্ণচূড়া দিন'
মাঘের এক সন্ধ্যায় বাড়িটির সামনে পৌঁছাই। ওপাশ থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘আমাদের ছেলেরা ভেতরে নিয়ে যাবে।’
পলেস্তারা খসে পড়া পুরোনো ধাঁচের বাড়ি ‘পাথারিয়া হাউস’। আধো আলো আধো অন্ধকারে দুই পায়ের মাঝ দিয়ে ফস করে বেরিয়ে গেল একটি বিড়াল। দুই রুমের বাড়িতে ছোট্ট সংসার দোলা ও নেহালের। খুনসুটি, আলাপ আর বিশ্বাসের ওপর ভর করে সামনে দৌড়ে চলে তারা। হঠাৎ সেখানে হাজির হয় দোলার শৈশবের বন্ধু ভূমি। কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে অসুবিধা হচ্ছে কদিনের জন্য। অগত্যা বন্ধুর বাসাতেই হাজির। দোলাও অসম্ভব পছন্দ করে বন্ধুকে। তাই কদিন নয়, বরং বেশ কিছুদিন থাকলেই দোলার ভালো লাগে। স্বামী আর বন্ধুকে নিয়ে বেশ ভালো চলছিল দোলার। হঠাৎ একদিন মন খারাপ বন্ধুর। বাইরে থেকে এসে বন্ধুর মন খারাপ দেখে দোলারও খারাপ লাগে। ভূমির কাছে এর কারণ জানতে চায় দোলা। ভূমি বলতে পারে না। কান্নায় মুখ লুকায়। কেবল এইটুকুই বলে, ‘এ আমি বলতে পারব না দোলা।’
কী সেই কথা? যা দোলার কাছে ভূমি বলতে পারছে না। এই প্রশ্ন যেমন দোলার, তেমনি আমার মতো দর্শকেরও। মগবাজার গাবতলার পাথারিয়া হাউসে নাটকের দল প্রাঙ্গণেমোরের মহড়া চলছে নতুন নাটক কৃষ্ণচূড়া দিন-এর। মহড়া দেখতে মাঘের শীত শীত সন্ধ্যায় হাজির সেখানে। এই প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় রচয়িতা ও নির্দেশক নূনা আফরোজের কাছে। বললেন, উত্তরটা জানার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি মহিলা সমিতি মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির প্রথম রজনী। ওই দিনই জানা যাবে কী সেই কথা? পরের দিন থাকছে আরও একটি প্রদর্শনী। তবে নাটক নিয়ে জানতে বাধা নেই। তিনি বলে চলেন নাটক নিয়ে। বলে রাখা ভালো, নাটকের দোলা চরিত্রে চৈতালী চৈতি আর নেহালের চরিত্রটি করেছেন দুজন তৌহিদ বিপ্লব ও সুজন গুপ্ত। আর দোলার বন্ধু ভূমির চরিত্রে অভিনয় করেছেন রচয়িতা ও নির্দেশক নূনা আফরোজ নিজেই। নাটক নিয়ে বললেন, ‘এই গল্পটি মাথায় আসার কারণ ছিল আমার এক বান্ধবী দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সময় আমার মনে হয়েছিল, পৃথিবীটা ফাঁকা হয়ে গেছে। এই বোধটুকু থেকেই নাটকটি লেখা।’
নূনা আফরোজ আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এই নাটকের মাধ্যমে সবাই সবার ছোটবেলার স্কুল–কলেজের বন্ধুকে মিস করবেন ভীষণভাবে। থিয়েটারে সাধারণত যে ধরনের নাটক হয়, সেই তুলনায় এই নাটকের গল্পটি হয়তো একটু টেলিভিশন ঘরানার, তবে থিয়েটারের মানুষ হিসেবে আমি সব সময়ই বিশ্বাস করি, নাটকটি নাটক হয়ে উঠল কি না এবং দর্শক সাদরে গ্রহণ করল কি না, তবেই আমরা সার্থক। দুই বান্ধবীর আন্তমনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া নিয়ে কৃষ্ণচূড়া দিন নাটকটি দর্শকের ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।’
নাটকটিতে থাকবে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার। নূনা আফরোজ বলেন, ‘নাটকটিতে থিয়েট্রিক্যালি মাল্টিমিডিয়া ও মঞ্চ এই দুইয়ের একটি সম্মিলন ঘটাতে চেয়েছি। তবে অবশ্যই পরিমিতি রেখে। সময় পাল্টেছে, নাটকে নানা ধরনের নিরীক্ষা আমরা করতে চাই। একদম সৎ জায়গা থেকে যা দেখাতে চেয়েছি, সেটুকুই ব্যবহার করেছি।’
নাটকটি লেখা, নির্দেশনা, সেট ও কস্টিউম নূনা আফরোজের। আলো ও সংগীত রামিজ রাজুর। আমাদের কথা শেষ হয়। পাথারিয়া হাউস থেকে বের হই। যাওয়ার সময়ে একটি জিনিসে চোখ আটকে যায়। এতক্ষণ ধরে দোলা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চৈতি। তাঁর চোখের কোণে পানি। তবে কি অভিনয় ঠিক অভিনয় নয়, সত্যি সত্যিই অনুভূতিগুলো এসে ধরা দেয়? হয়তো।