ঢাকায় শুরু চারুকলার বৃহৎ মিলনমেলা

ঢাকা আর্ট সামিটের উদ্বোধনের পর প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন লিয়াকত আলী, নাদিয়া সামদানী ও কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা আর্ট সামিটের উদ্বোধনের পর প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন লিয়াকত আলী, নাদিয়া সামদানী ও কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো

চিত্রশালাকে আর চেনাই যাচ্ছে না। মাটি, সুরকি, কুটো ও কয়লাসহ প্রাকৃতিক সব উপকরণ দিয়ে সেটার প্রবেশমুখে তৈরি করা হয়েছে প্রাচীন রীতির দেয়াল। সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হয়েছে প্রবেশদ্বার। ঢুকলেই পায়ের নিচে ৪০ কোটি বছরের পুরোনো ব্রাজিলিয়ান ফসিল। বেষ্টনী ও এই পথ তৈরি করেছেন বিখ্যাত আর্জেন্টাইন শিল্পী আদ্রিয়ান ভিলা রোজ। মূলত প্রবেশপথ থেকেই চমক ও ভাবনার খোরাক উপস্থাপন করা হয়েছে ঢাকা আর্ট সামিটে।

আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও চারুকলার বৃহৎ মিলনমেলা ‘ঢাকা আর্ট সামিট-২০২০’। সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ৫ম এ আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আর্ট সামিটের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক সোবহান ও সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা নাদিয়া সামদানী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কে এম খালিদ বলেন, এ আয়োজন বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। এর অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, এই প্রদর্শনী বিশ্বের সঙ্গে আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তুলবে। দক্ষিণ এশিয়ায় চারুকলার অন্যতম বড় আয়োজন হিসেবে আমরা এ প্রদর্শনী নিয়ে গর্ব করতে পারি। শিল্পমনা জাতি হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। ঢাকা আর্ট সামিট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। নাদিয়া সামদানী বলেন, নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যৌথভাবে এ আয়োজন করা হয়। সেভাবেই এ বছর ভূতাত্ত্বিক আন্দোলন, ঔপনিবেশিক আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন নিয়ে কাজ করা পৃথিবীর বিখ্যাত সব চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।

ঢাকা আর্ট সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাদিয়া সামদানী, ফারুক সোবহান, কে এম খালিদ ও লিয়াকত আলী। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা আর্ট সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাদিয়া সামদানী, ফারুক সোবহান, কে এম খালিদ ও লিয়াকত আলী। ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চম এই আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে বিচিত্র সব শিল্পকর্ম দিয়ে। দুনিয়া কাঁপানো সব আন্দোলন ও বিবর্তনের গল্প ছোঁয়া সব শিল্পকর্ম বিছিয়ে রাখা হয়েছে পুরো চিত্রশালা জুড়ে। স্থাপনাশিল্প, ভাস্কর্য, চিত্রকর্ম, ভিডিও প্রদর্শনী, পরিবেশনার মাধ্যমে বলা হয়েছে পৃথিবীর অবক্ষয় ও জানানো হয়েছে তাকে বাঁচানোর আহ্বান।

উদ্বোধনের পর থেকেই দেশ-বিদেশের শিল্পী ও চারুকলার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে চিত্রশালা। দিনের প্রথম পারফরম্যান্সে জাতীয় চিত্রশালার ৬নং গ্যালারিতে অংশ নেন আরিফুল কবির। দ্বিতীয় তলার লবিতে ছিল অটোবং এনকাঙ্গার লাইভ আর্ট ‘ল্যান্ডভার্সন’। চিত্রশালা মিলনায়তনে ছিল ‘ডিজাইন ইন এরা অব ক্লাইমেট-ক্যাটাসট্রপি’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা। এতে অংশ নেন স্থপতি নিনা পেইম, স্থপতি শিন আন্ডারসন, স্থাপত্যকলা তাত্ত্বিক হুরারিয়া জাবিন, শিক্ষা সংস্কারক ও প্রকৌশলী সোনম ওয়াংচুক ও আগা খান পুরস্কারজয়ী স্থপতি সাইফুল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নকশাকার প্রেম কৃষ্ণমূর্তি।

পর্দাটি তৈরি হয়েছে মসলা লং দিয়ে। ছবি: প্রথম আলো
পর্দাটি তৈরি হয়েছে মসলা লং দিয়ে। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের শিল্পকলার শিক্ষাগুরুদের শিল্পকর্ম নিয়ে রাখা হয়েছে একটি বড় প্রদর্শনী। চিত্রকর বিশ্বজিৎ গোস্বামীর কিউরেশন ও তত্ত্বাবধানে ‘রুটস’ বা শেকড় শিরোনামের এ প্রদর্শনী থেকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পসাধক এস এম সুলতান, শিল্পী কামরুল হাসান, রশিদ চৌধুরী, রফিকুন নবী, ফরিদা জামানসহ দেশের চিত্রকলার শিক্ষাদানে অসামান্য অবদান রাখা শিল্পীদের জীবনাচরণ জানা ও দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সামিটে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ১২টি আর্টিস্ট গ্রুপ। এগুলোর মধ্যে আর্টপ্রো, ব্যাক আর্ট, চারুপীঠ, আকালিকো, গিদরি বাউলি, হিলস আর্টিস্ট গ্রুপ, যথাশিল্প, সাঁকো, শনি মঙ্গল আড্ডা অন্যতম।

পর্দাটি তৈরি হয়েছে মসলা লং দিয়ে। ছবি: প্রথম আলো
পর্দাটি তৈরি হয়েছে মসলা লং দিয়ে। ছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডেলফিনা ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে এবারের সামিটেও দেওয়া হবে সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড। বাংলাদেশের ২২ থেকে ৪০ বছর বয়সী উদীয়মান ও প্রতিভাবান তরুণ শিল্পীরা পাবেন এ পুরস্কার। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের সংক্ষিপ্ত তালিকা। সন্ধ্যায় পুরস্কারজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এ অ্যাওয়ার্ডের আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ড প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন ডেলফিনা ফাউন্ডেশনের পরিচালক এরন সেজার।

ঢাকা আর্ট সামিটের একটি গ্যালারি। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা আর্ট সামিটের একটি গ্যালারি। ছবি: প্রথম আলো

সুইজারল্যান্ডের গ্যালারি নকশাকারেরা সাজিয়েছেন এবারের আর্ট সামিট। সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত সাজ-সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে পরিবেশসম্মত কাগজ, বাঁশ, বেত ও কাঠ। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সবাইকে সচেতন করতে এ উদ্যোগ। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা ঘুরে আসা যাবে এ প্রদর্শনী। ঢাকা আর্ট সামিট ২০২০ আয়োজনে সহায়তা করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সঙ্গে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সামিটের টাইটেল স্পন্সর গোল্ডেন হার্ভেস্ট।