খালেদা আক্তার কল্পনার খবর নেয় না কেউ

খালেদা আক্তার কল্পনা
খালেদা আক্তার কল্পনা

চলচ্চিত্রজগতে ৩৭ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। একটা সময় শিডিউল ব্যস্ততায় হাতে অবসর সময় থাকত না। বছরের বেশির ভাগ সময় চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন খালেদা আক্তার কল্পনা। অভিনয় দিয়ে যেমন দর্শকদের মন জয় করেছেন, তেমনি সম্মাননা হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। গুণী এ অভিনেত্রীর আক্ষেপ, এখন খবর রাখে না কেউ।

ইদানীং শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা নিতে বছরে দুবার ভারতে যেতে হয়। আর্থিকভাবে অনেক অনিশ্চয়তায় আছেন। জানতে চাইলে খালেদা আক্তার কল্পনা বলেন, ‘এই মুহূর্তে চলতে ফিরতে, সংসার চালাতে বড় হিমশিম খাচ্ছি। কেউ অভিনয়ের জন্য ডাকছে না। কাজ দিচ্ছে না। অসুস্থ শরীর নিয়ে আগে কাজ করেছি। এখন সুস্থ হয়ে কোনো কাজ পাচ্ছি না। এই বয়সে এসে কতজনকে ফোন দিয়ে কাজ চাওয়া যায়। ভালো নেই আমি।’

খালেদা আক্তার কল্পনা
খালেদা আক্তার কল্পনা

সব জায়গায় ধরাধরির ব্যাপার
আগে থেকেই লেখালেখির অভ্যাস ছিল খালেদা আক্তার কল্পনার। নাট্যজন আতিকুল হক চৌধুরী তাঁর লেখার খুবই প্রশংসা করেছিলেন। সেদিন যেন এই নাট্যজনের কাছে বড় একটি উপহার পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন আর্থিক সংকট উত্তরণে নাটক লিখে কিছুটা টাকা রোজগারের কথা। অনেক চিত্রনাট্য, গল্প লেখা রয়েছে। নির্মাতাদের চিত্রনাট্য পাঠিয়ে খুব একটা সাড়া পাননি। খালেদা আক্তার কল্পনা বলেন, চিত্রনাট্য লিখে কী হবে? ফিল্মের লোক হিসেবে আমাদের নানান দোষ। আমরা লেখাপড়া জানি না, কথা বলতে পারি না, আমরা অভিনয় জানি না, আমরা সমাজে মিশতে পারি না, আমাদের কোনো গুণ নাই, আমরা বেগুন। লেখব শুনলেই অনেক মিডিয়ার লোকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাব দেখা যায়। মিডিয়ার সব জায়গায় ধরাধরির একটা ব্যাপার থাকে। ফোনে যোগাযোগ রাখা, হাই–হ্যালোর মাধ্যমে একটা সম্পর্ক রাখা। এসব আগেও পারি নাই এখনো পারি না।’

কিছু উদার মানুষ নেই?
‘বিভিন্ন পেশার মানুষদের মধ্যে মানবতা থাকে। একে অন্যের জন্য সহানুভূতি থাকে। এটা আমাদের সিনেমা ও মিডিয়ার লোকদের মধ্যে থাকে না।’ বললেন খালেদা আক্তার কল্পনা। এই অভিনেত্রী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের মিডিয়ার মানুষগুলোর মানসিকতা অতটা উদার নয়। আমরা একটু বয়স হলেই একা হয়ে যাই। আমাদের কি কিছু হৃদয়বান মানুষ থাকতে পারে না? যাঁরা একটু ভাববেন, অমুক অভিনয়শিল্পীকে দেখি না, তাঁদের নাটকে বা সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ দিই। একটু খোঁজখবর নিলেও বেকার যাঁরা অর্থকষ্টে আছেন, তাঁরা একটি কাজের সুযোগ পান। একটু ভালো থাকেন।’

খালেদা আক্তার কল্পনা
খালেদা আক্তার কল্পনা

সরকারি অনুদান নিয়ে নানান কথা
খালেদা আক্তার কল্পনা জানালেন, ‘সরকারের কাছে থেকে অর্থ নেওয়ার পর অনেকেই বলেছেন আমি কেন সাহায্য নিই? আমাকে কেন সাহায্য দেন। হ্যাঁ, যাঁরা বলেন ঠিকই বলেন। আমি নিজেও এই অর্থ নিতে চাই না। আমি সুস্থ আছি, অভিনয় পারি কিন্তু কোনো কাজ নেই। আমি অভিনয় পারি, সবাই জানে এবং চেনে, কিন্তু কেউ নিচ্ছে না। নিলে তো কিছু টাকা পেতাম।’

খবর নেয় না কেউ
প্রবীণ অভিনয়শিল্পীদের খবর নেওয়ার কেউ নেই। চলচ্চিত্রশিল্পী বা সংশ্লিষ্ট কেউই দায়িত্ব মনে করছে না। অনেকেই মুখে অনেক বড় বড় কথা বলে হাততালি পায় কিন্তু কাজের বেলায় নেই, বললেন খালেদা আক্তার কল্পনা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি পাঁচ শতাধিক ছবিতে কাজ করেছি। অসংখ্য নাটক করেছি। গুণী নির্মাতা–অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছি। সবাই অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন আমাকে কাজ খুঁজতে হয়। কেমন আছি কেউ খবর নেয় না। আমি আর্থিকভাবে ভালো নেই। আমি কাজ করতে চাই। আমার জাতীয় পুরস্কার কি মূল্যহীন? অভিনয় দিয়েই তো পেয়েছি। এখন আমি সুস্থ, ভালো আছি—সাহায্য নয়, আমি কাজ করতে চাই।’