আমেরিকার অস্কারের কোরিয়ার ইতিহাস

সেরা নির্মাতার অস্কার হাতে কোরীয় চিত্রপরিচালক বং জুন হো। ছবি: এএফপি
সেরা নির্মাতার অস্কার হাতে কোরীয় চিত্রপরিচালক বং জুন হো। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরীয় সিনেমা ‘প্যারাসাইট’ ইতিহাস গড়ল এবারের ৯২তম অস্কার আসরে। আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাতটায় শুরু হওয়া একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে ‘প্যারাসাইট’ জিতে নিল সেরা চলচ্চিত্র, সেরা নির্মাতা, সেরা আন্তর্জাতিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার। এ ছাড়া অস্কার আসরে বিজয়ীর কাতরে ঘুরেফিরেই আসে স্যাম ম্যান্ডেসের ছবি ‘১৯১৭’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন...হলিউড’ ও ‘জোকার’–এর নাম।

অস্কারের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো ভিনদেশি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র জিতে নিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের পুরস্কারগুলো। মার্কিন চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কার আসরের আয়োজন করে একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সস। তাদের হিসাবে এর আগে ভিনদেশি ভাষায় নির্মিত কোনো সিনেমার এমন জয়জয়কার আগে দেখা যায়নি।

সেরা অভিনেত্রী রেনে জেলওয়েগার ও পার্শ্ব চরিত্রের সেরা অভিনেত্রী লরা ডার্ন। ছবি: এএফপি
সেরা অভিনেত্রী রেনে জেলওয়েগার ও পার্শ্ব চরিত্রের সেরা অভিনেত্রী লরা ডার্ন। ছবি: এএফপি

এবারের অস্কার রাতে শুরু হয় পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার দিয়ে। এ বিভাগে জয়ী হন ব্র্যাড পিট। রাজনৈতিক উপহাস আর ছোটখাটো কৌতুক দিয়ে সন্ধ্যার শুরুতেই তিনি জমিয়ে তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটার। একদিকে এই অভিনেতা কৌতুক দিয়ে ট্রাম্পের দিকে আঙুল তুললেও ‘জোকার’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার অস্কার পাওয়া ‘হোয়াকিন ফিনিক্স’ বেশ কড়া ভাষাতেই যাবতীয় অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন অস্কারমঞ্চে।

সেরা অভিনেতা হোয়াকিন ফিনিক্স। ছবি:এএফপি
সেরা অভিনেতা হোয়াকিন ফিনিক্স। ছবি:এএফপি

এ বছরের আর সব বড় পুরস্কার অনুষ্ঠানের মতো অস্কারেও সেরা অভিনেত্রী বিভাগে জয়ী হয়েছেন ‘জুডি’ ছবিতে নামভূমিকায় অভিনয় করা শিল্পী রেনে জেলওয়েগার। পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার বাড়ি নিয়ে গেছেন ‘ম্যারেজ স্টোরি’ ছবির শিল্পী লরা ডার্ন।

পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা ব্র্যাড পিট। ছবি: এএফপি
পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা ব্র্যাড পিট। ছবি: এএফপি

অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন ৯২তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে জয়ের হাসি হাসবেন স্যাম মেন্ডেস। কারণ, এ বছর গোল্ডেন গ্লোব থেকে শুরু করে বাফটা—বড় বড় পুরস্কার আয়োজনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তাঁর বানানো সিনেমা জয়ের দিক থেকে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ইতিহাস তো অপেক্ষায় ছিল নতুন এক অধ্যায়ের। তাই তো শেষ হাসিটা হাসলেন দক্ষিণ কোরীয় নির্মাতা বং জুন–হো। ধনী–গরিবের সামাজিক বৈষম্য নিয়ে নির্মিত তাঁর ডার্ক কমেডি ছবি ‘প্যারাসাইট’ সবাইকে চমকে দিয়ে জিতে নিলেন সব বড় বিভাগের পুরস্কারগুলো। আর ১৯১৭–এর ভাগ্যে কেবল জুটল কারিগরি বিভাগের তিনটি অস্কার। ‘ফোর্ড ভার্সেস ফেরারি’, ‘জোকার’ ও ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন...হলিউড’—প্রতিটি ছবি দুটি করে অস্কার বাড়ি নিতে পেরেছে। ‘আর টয় স্টোরি ফোর’ জিতে নেয় সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিতের পুরস্কার।

বিজয়ীর তালিকা
সেরা চলচ্চিত্র: প্যারাসাইট
সেরা অভিনেত্রী: রেনে জেলওয়েগার, ‘জুডি’
সেরা অভিনেতা: হোয়াকিন ফিনিক্স, ‘জোকার’
পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রী: লরা ডার্ন, ‘ম্যারেজ স্টোরি’
পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা: ব্র্যাড পিট, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন...হলিউড’
সেরা নির্মাতা: বং জুন হো, ‘প্যারাসাইট’
সেরা চিত্রনাট্য (মৌলিক): ‘প্যারাসাইট’
সেরা চিত্রনাট্য (অ্যাডাপ্টেড): ‘জোজো র‌্যাবিট’
সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র: ‘টয় স্টোরি ফোর’
সেরা তথ্যচিত্র: আমেরিকান ফ্যাক্টরি
সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র (আগের নাম ছিল সেরা ভিনদেশি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র): ‘প্যারাসাইট’, দক্ষিণ কোরিয়া
সেরা সংগীত: লাভ মি আগেইন, ‘রকেটম্যান’, শিল্পী: এলটন জন
সেরা আবহসংগীত: ‘জোকার’
সেরা চিত্রগ্রহণ: ‘১৯১৭’
সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট: ‘১৯১৭’
সেরা সম্পাদনা: ‘ফোর্ড ভার্সেস ফেরারি’
সেরা শব্দ সম্পাদনা: ‘ফোর্ড ভার্সেস ফেরারি’
সেরা শব্দমিশ্রণ: ‘১৯১৭’
সেরা শিল্প নির্দেশনা: ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন...হলিউড’
সেরা পোশাক নকশা: ‘লিটল উইমেন’
সেরা রূপ ও কেশসজ্জা: ‘বম্বশেল’
সেরা লাইভ অ্যাকশন শর্ট: ‘দ্য নেইবার্স উইনডো’
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র: ‘লার্নিং টু স্কেটবোর্ড ইন আ ওয়ারজোন (ইফ ইউ আর আ গার্ল)