শেকড়ের নাম কবিতা

>ছোটবেলা থেকে, ঠিক কতটা ছোটবেলা থেকে তা আর মনে করতে পারলেন না শারমিন লাকি। কেবল বললেন, যখন থেকে তাঁর অক্ষরজ্ঞান হয়েছে, তখন থেকেই পড়তে খুব ভালো লাগত তাঁর। সে হোক অ, আ, ক, খ কিংবা গল্প, গদ্য বা কবিতা। পড়তে পড়তেই একদিন হয়ে গেছেন আবৃত্তিকার, উপস্থাপক ও আরও অনেক কিছু। এই শিল্পীর পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আরও কিছু বিশেষ দিনের নতুন কাজ নিয়ে লিখেছেন জিনাত শারমিন
শারমিন লাকি। ছবি: আনন্দ
শারমিন লাকি। ছবি: আনন্দ

টেলিভিশনে ৯ বছর ধরে সিদ্দিকা কবিরস রেসিপির জনপ্রিয় এ উপস্থাপকের শুরুটা হয়েছিল কবিতা দিয়ে। আর সেই শুরু যে জম্পেশ হয়েছিল, তা শারমিন লাকির গুরুদের নাম শুনলেই দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। নরেন বিশ্বাস, কামরুল হাসান মঞ্জু, আসাদুজ্জামান নূর, মনিরুজ্জামান, বিপ্লব বালা, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ ঘোষসহ আরও অনেকেই তাঁর শিক্ষক। তা ছাড়া কাজী সচ্যসাচী, গোলাম মুস্তাফা, শম্ভু মিত্র, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী আরিফ, সৈয়দ আশরাফ, হাসান আরিফ, শিমুল মুস্তাফা, আহকাম উল্লাহ, প্রজ্ঞা লাবণী, প্রদীপ ঘোষ, খসরু চৌধুরী, মাহিদুল ইসলাম মাহি, রূপা চক্রবর্তী, কেয়া চৌধুরী, সুবর্ণা মুস্তাফা, ক্যামেলিয়া মুস্তাফা, নিমা রহমান, ডালিয়াসহ আরও অনেককে তিনি গুরু মেনে নিয়মিত তাঁদের আবৃত্তিচর্চা শোনেন। তারপর রাজধানীর ব্যস্ততম জীবনযাত্রা দূরত্ব এনেছিল চিরচেনা কবিতার সঙ্গে। 

ফিরছেন সেই শিকড়ের কাছে, কবিতার কাছে
দীর্ঘদিন পর আবারও আবৃত্তিচর্চায় ফিরছেন শারমিন লাকি। আবৃত্তিচর্চার দল গড়েছেন, নাম দিয়েছেন ‘তাইরে নাইরে না’। গতকাল মঙ্গলবার পঞ্চকন্যা বাচিক র​্যাপোর্টিয়ার (repertoire) বাংলাদেশ টেলিভিশনের পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের বিশেষ আয়োজনে অংশ নিলেন। সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও এনটিভির পর্দায় দেখা যাবে পঞ্চকন্যার বিশেষ পরিবেশনা। এদিন তাঁরা ভাষার কবিতা পাঠ করবেন। এ ছাড়া রয়েছে চিঠি, ছড়াপাঠ, বৃন্দ আবৃত্তি। বলবেন মাতৃভাষার গল্প, গাইবেন ভাষার গান। ২৯ ফেব্রুয়ারি, চার বছর পরের অতিরিক্ত দিনটাকেও স্মরণীয় রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। সেদিন ঢাকার বনানীর যাত্রাবিরতিতে ২০০ টাকা সম্মানীর বিনিময়ে দেখা যাবে ‘পঞ্চকন্যা’র বিশেষ আয়োজন। শিল্পকলার মঞ্চে রীতিমতো শব্দ,আলো, সেট ডিজাইন করে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও আছে। বোঝাই যাচ্ছে, যেনতেনভাবে ফিরছেন না লাকি। সেই সঙ্গে মূল সংগঠন তাইরে নাইরে নার কাজ তো থাকছেই। তাঁর ফেরা যেন বলে দেয়, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’। সেভাবেই ফিরছেন তিনি।

কারা এই পঞ্চকন্যা
পঞ্চকন্যার একজন তো জানেনই, শারমিন লাকি। বাকি চারজন হলেন আবৃত্তি প্রশিক্ষক তামান্না তিথি, সঙ্গীতা চৌধুরী, নাজনীন নাজ ও কাজী বুশরা। তাঁরা প্রত্যেকেই অভিনয় আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে নিজ গুণে আলোকিত করেছেন চারপাশ। তাই তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে ‘লাকি’ মনে করছেন লাকি।

 কবিতায় ফিরে যেমন লাগছে
কেমন লাগছে কবিতায় ফিরে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় প্রথম ও শেষবারের মতো থেমে গেলেন চটপটে, কথায় খই ফোটানো এ শিল্পী। কীভাবে সেই অনুভবকে শব্দে, বাক্যে গাঁথবেন, এক মুহূর্তের জন্য যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। তারপরই বললেন, ‘যেন ঘরে ফিরে এসেছি। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে, আমার জানা নেই।’ এত সব যৌথ কাজের ভেতরেও নিজের একক কাজের সুখবর জানাতে ভুললেন না তিনি। সিলং কবিতা প্রহরে পাঠ করেছিলেন হেলাল হাফিজের বিখ্যাত কবিতা ‘যাতায়াত’। শারমিন লাকির কণ্ঠে ‘কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো’ এখন পর্যন্ত দেখা হয়েছে ৬২ হাজারেরও বেশিবার।

 কবিতার দিন ফিরে আসছে
কথায় কথায় শারমিন লাকি বললেন, ‘সুন্দর করে কথা বলতে পারাটা অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আবৃত্তিচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি জানালেন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের অধীনে ৩৮৪টি সংগঠন থেকে পাঁচ হাজারের বেশি আবৃত্তিশিল্পী কাজ করছেন। তিনি আরও বললেন, ‘ভালো কাজ আমাদের চারপাশে হরহামেশাই হচ্ছে। দর্শক, শ্রোতারা যেন কাজগুলোর সঙ্গে থাকেন।’