বুকে ব্যথা উঠেছিল বিমানবন্দরে

তাপস পাল। ছবি: ফেসবুক থেকে
তাপস পাল। ছবি: ফেসবুক থেকে

এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা তাপস পাল। বেশ কয়েক বছর ধরে স্নায়ু ও রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। চলছিল নিয়মিত চিকিৎসাও। গত ২৮ জানুয়ারি মুম্বাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পয়লা ফেব্রুয়ারি যাওয়ার কথা ছিল মেয়ে সোহিনী পালের কাছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মেয়ের কাছে আর যাওয়া হয়নি। বিমান ধরার আগেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি, বাতিল হয় ভ্রমণ। তাঁকে ভর্তি করানো হয় মুম্বাইয়ের জুহুর হলিক্রস হাসপাতালে।

সেদিন থেকেই তাঁকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। কিছুটা সুস্থ হলে ৬ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। গতকাল সোমবার তাঁর কলকাতা ফিরে আসার কথা ছিল। সে জন্যই গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। বিমানে ওঠার মুহূর্তে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিনেতা। সেখান থেকে সরাসরি হাসপাতালে, আবার ভেন্টিলেশনে। শুরুতে সামান্য সাড়া দিচ্ছিলেন, তবে অবস্থার অবনতি শুরু হয় ক্রমেই। সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ৩৬ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে আরও জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ মুম্বাই থেকে কলকাতায় নেওয়া হবে অভিনেতার মরদেহ। আগামীকাল বুধবার রাখা হবে রবীন্দ্রসদনে। এ দিনই কেওড়াতলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হবে অভিনেতা তাপস পালের।

মাধুরীর সঙ্গে তাপস পাল। ছবি: ফেসবুক থেকে
মাধুরীর সঙ্গে তাপস পাল। ছবি: ফেসবুক থেকে

১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম নেন তাপস পাল। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। কলেজে পড়াকালীন নজরে পড়েন পরিচালক তরুণ মজুমদারের। মাত্র ২২ বছর বয়সে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘দাদার কীর্তি’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। সেই তালিকাও দীর্ঘ। ‘সাহেব’, ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, ‘পারাবত প্রিয়া’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’সহ অনেক অনেক ছবি।

‘সাহেব’ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান ১৯৮১ সালে। বাংলার পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবিতেও। মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ‘অবোধ’ ছবিতে। কৃষ্ণনগর লোকসভা থেকে তৃণমূল লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।

তাপস পালের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র জগতে। শোক প্রকাশ করেছেন বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত। টুইটে মাধুরী লিখেছেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছি। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকাহত। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’

তাপস পাল। ছবি: ফেসবুক থেকে
তাপস পাল। ছবি: ফেসবুক থেকে

কলকাতার নায়ক দেব টুইটে লিখেছেন, ‘খবরটা পেয়ে আমি খুব শোকাহত। বাংলা সিনেমায় তাপস দার অবদান ভোলার নয়!’ নুসরাত জাহান টুইটে লিখেছেন, ‘সুপারস্টার ও দারুণ এক অভিনেতাকে হারালাম। সুযোগ পেয়েছিলাম ওনার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি!’ অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক লিখেছেন, ‘বড়ই অসময়ে চলে গেল। ও আমার ভাইয়ের মতো ছিল।’ চিরঞ্জিৎ লিখেছেন, ‘ছোট ভাইকে হারালাম। ফিরতে পারল না তাপস। ঘরের ছেলে চলে গেল, একটা যুগের শেষ হলো৷’ দেবশ্রী লিখেছেন, ‘একসঙ্গে এত কাজ করছি, অকালে চলে গেল।’

তাপস পালের প্রয়াণের খবর সহজভাবে নিতে পারেননি তাঁর একসময়ের বিখ্যাত সহশিল্পী দেবশ্রী রায়। খবর শুনে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। একসময় পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সিনেমায় জুটি মানেই তাপস পাল ও দেবশ্রী রায়। একের পর এক ছবি সুপারহিট ছিল তাঁদের। ‘সাথীহারা’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘সুরের আকাশে’-এর মতো অনেক ছবিতেই তাপস পাল ও দেবশ্রী জুটি যেন বাঙালির কাছে প্রেমের সংজ্ঞার মতো।