কোরিয়ান ভাই: বাংলায় গান গাই

‘কোরিয়ান ভাই’ জোসেফ কিম—বাংলায় কথা বলেন, বাংলায় গান করেন। ছবি: খালেদ সরকার
‘কোরিয়ান ভাই’ জোসেফ কিম—বাংলায় কথা বলেন, বাংলায় গান করেন। ছবি: খালেদ সরকার

গত বছরের কথা। একটা অনুষ্ঠানে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ কানে এল আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি’ গানটি। কিন্তু গান যিনি গাইছেন, তাঁর দিকে তাকিয়েই গান শোনার আগ্রহ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল। গান শেষেই মানুষটির পরিচয় পেলাম। সবাই ‘কোরিয়ান ভাই, কোরিয়ান ভাই’ বলে তাঁকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। এই কোরিয়ান ভাইটা আবার কে? 

জোসেফ কিম। দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজু শহরে জন্ম। রাজধানী সিউল থেকে ১ ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত ওনজু শহর। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখা নিয়ে মোটেও চিন্তিত ছিলেন না জোসেফ। স্বপ্নকে তাড়া করে বেড়ানোই ছিল তাঁর স্বভাব। জোসেফের ইচ্ছা ছিল কৌতুকশিল্পী হওয়ার। সারা দিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন আর খাতায় লিখে রাখতেন জোকস। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সেই স্বপ্নই শক্তপোক্তভাবে ধরে ছিল তাঁকে। 

জোসেফের সঙ্গে দেখা করে মনে হলো, যে হাসিখুশি মানুষটাকে মঞ্চে গাইতে দেখা যায়, আমার পাশে সেই মানুষই বসে আছেন। মঞ্চের ‘কোরিয়ান ভাই’ আর মঞ্চের বাইরের জোসেফ কিমের মধ্যে খুব একটা তফাত নেই। গল্পে গল্পে জানতে চাইলাম বাংলাদেশে কেমন লাগে। বাংলাটাই–বা শিখলেন কীভাবে। সহজ উত্তর, ‘রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরাদরি করতে করতেই শেখার শুরু। বিদেশি দেখে অনেকেই ভাড়া বেশি চেয়ে বসে, কোন গন্তব্যে যাব, সেটাও অনেক সময় বুঝতে পারেন না।’ এরপর মানুষের সঙ্গে মিশতে গিয়ে জোসেফ ভাঙা ভাঙা বাংলা বলা শুরু করলেন। এখন বেশ ভালোই বলতে পারেন তিনি। বাংলায় গানও গান। সেই গানের আবার আলাদা শ্রোতাও আছে। 

জোসেফ বাংলাদেশে আসেন ২০১১ সালে। ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যলয়ের অর্থনীতি বিভাগে। এর মধ্যে অবশ্য তাঁকে দুই বছরের কোরীয় সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে কোরিয়ায় থাকতে হয়েছিল। বাংলা ভাষা নিয়ে জোসেফ কিমের ভালো লাগার কথা জানতে চাই। তিনি বলেন, ‘ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ব্যাপারটি অসাধারণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। এ কারণেই বাংলা ভাষা আমার ভালো লাগে। আমি যখন আমার দেশের বন্ধুদের কাছে বলি ‘বাংলাদেশ’ মানে হচ্ছে বাংলা+দেশ। বাংলা এ দেশের মানুষের ভাষা। যেহেতু তাদের দেশের নামের মধ্যেও বাংলা আছে, তার মানে এর গুরুত্ব বুঝতেই পারছ।’

 এ বছরের একুশে ফেব্রুয়ারিতে জোসেফ পরিকল্পনা করছেন একটি ভিডিও তৈরি করার। বলে রাখা ভালো, জোসেফ কিম কিন্তু ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয়। ‘কোরিয়ান ভাই’ নামে জোসেফের একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে, যেখানে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার। প্রায়ই তিনি সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তোলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে যাওয়া, বাংলাদেশি বিয়ে, গানসহ বিভিন্ন উৎসব ঘুরে ঘুরে বানান ভিডিওগুলো। সেই ভিডিওতে বাংলাদেশেরই নানা রূপ, নানা উপলক্ষ তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি অহরহই কোরীয় গানের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে বাংলা গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দেন দর্শকদের। জোসেফের প্রিয় কয়েকটি বাংলা গান হচ্ছে মিনারের ‘আহা রে’, তাহসানের ‘আলো আলো’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি’। তিনি ভীষণভাবে পছন্দ করেন মিনার–তাহসানকে। বাংলা শেখার জন্য নাটক দেখতেন ‘কোরিয়ান ভাই’। আর সেই থেকেই তাঁর ভালো লাগে যায় মেহ্​জাবীন, মিম, পিয়া বিপাশাকে। 

কোরিয়ান ভাই পড়ালেখার পাশাপাশিই দুই বছর আগে ঢাকায় চালু করেছিলেন একটি রেস্তোরাঁ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ঘাটপাড়ের এই রেস্তোরাঁর নাম কে-কাপবব।