বেকার হয়ে যাচ্ছেন টেলিভিশন নাটকের মানুষেরা

অল্প কজন শিল্পী নিয়ে চলছে একটি নাটকের শুটিংয়ের প্রস্তুতি।  ছবি: সংগৃহীত
অল্প কজন শিল্পী নিয়ে চলছে একটি নাটকের শুটিংয়ের প্রস্তুতি। ছবি: সংগৃহীত

একে একে বেকারত্বের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন নাটকের মানুষেরা। দিন দিন ভারী হচ্ছে সেই দল। এতগুলো টেলিভিশন, এত এত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, তবু কাজ পাচ্ছেন না তাঁদের বেশির ভাগ। টিকে থাকতে নানা প্রস্তাব ও ধারণা উপস্থাপন করেও সেসব বাস্তবায়ন করতে পারছে না নাটকের সংগঠনগুলো।

গত বছরের এপ্রিলে হলো টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নির্বাচন। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের তেমন কোনো কাজ নজরে আসেনি কারও। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাংগঠনিক কিছু কাজ করছি বটে, কিন্তু আমাদের অবস্থা ভয়াবহ। সংগঠনের বেশির ভাগ প্রযোজক বেকার। হাতে গোনা ১০ থেকে ১৫ ভাগ প্রযোজনা করছেন। বাকিরা অনেক দিন ধরেই বেকার বসে আছেন। অনেকে পেশা বদলে অন্য কিছু করার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থা প্রায় সব সংগঠনে।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘সংগঠনের ৭০ থেকে ৮০ জন নির্মাতা মোটামুটি কাজ করেন। এর মধ্যে নিয়মিত কাজ করছেন ৩০ থেকে ৪০ জন। বাকিরা বেশির ভাগই কর্মহীন। অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’ সংগঠনের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, অলিক যে ৭০ থেকে ৮০ জনের কথা বলেছেন, তাঁরা বছরে হাতে গোনা দুই থেকে চারটি নাটক বানাচ্ছেন। মোটাদাগে নির্মাতাদের ৮৫ ভাগই বেকার। এ সংখ্যা আরও বড় হচ্ছে।

টেলিভিশনের পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নির্মাতাদের কাজের সুযোগ বাড়ার পরও কেন এত নির্মাতা বেকার? লাভলু বলেন, ‘নির্মাতাদের সবাই যে একই রকম মেধাবী, তা কিন্তু নয়। এটাও সত্য যে অনেক মেধাবী নির্মাতা নাটক বানানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ নাটকে যাঁরা অর্থলগ্নি করছেন, তাঁরা অনলাইনে কাটতি বেশি, এমন তারকাদের দিয়ে নাটক করাচ্ছেন। সেসব তারকার সঙ্গে যেসব নির্মাতার সম্পর্ক ভালো, তাঁরাই নিয়মিত কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।’
বিভিন্ন আড্ডায় অনেক নির্মাতা ও প্রযোজককে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, নাট্যাঙ্গনের অভিনেতাদের শিডিউল পাওয়া কঠিন। তারকারা কি সত্যিই নির্মাতা ও প্রযোজকদের মতো বেকার হয়ে যাচ্ছেন? অ্যাক্টরস ইকুইটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘এখন হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পী ছাড়া বেশির ভাগ অভিনেতার হাতে কাজ নেই বললেই চলে। এই বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে। এই কর্মহীনতা অনেক অভিনয়শিল্পীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে।’

অভিনয়শিল্পী সংঘের তথ্যমতে, তাদের ১ হাজার ১০০ সদস্যের ৩ থেকে ৪ শতাংশ শিল্পী নিয়মিত কাজ করছেন, ৩০ শতাংশ মাসে ৫ থেকে ১৫ দিন কাজ করেন। বাকি ৬৫ শতাংশ শিল্পীর হাতে কাজ নেই। তাঁরা একেবারেই বেকার দিন যাপন করছেন। যে কারণে অনেক সম্ভাবনাময় দক্ষ শিল্পী অনেক অভিজ্ঞতা নিয়েও বেকার বসে আছেন। অভিনেতা আবুল হায়াত মনে করেন, এসব সমস্যা সমাধানে টিভিসহ সব সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। টিভিগুলো পে-চ্যানেল করতে হবে। এ জন্য সরকারকেও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।