বিশ্বাস করতে চান না মৌসুমী, শাবনাজরা

শাবনূর, সালমান শাহ, শাবনাজ, অমিত হাসান, মৌসুমী, ওমর সানী, পপি
শাবনূর, সালমান শাহ, শাবনাজ, অমিত হাসান, মৌসুমী, ওমর সানী, পপি

এতকাল কেবল জন্মদিন ও প্রয়াণ দিনেই স্মরণ করা হতো সালমান শাহকে। এবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তের জের ধরে সামনে চলে এলেন অকালপ্রয়াত এই ঢালিউড তারকা। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাবনূরকে নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরেই আত্মহত্যা করেছেন সালমান। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সালমান শাহ ও শাবনূরের তৎকালীন সহকর্মীরা।

শাবনাজ, অভিনেত্রী
আমরা এই মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছিলাম। যে প্রতিবেদনটি এসেছে, তা নিয়ে কিছু বলার নেই আমাদের। কিন্তু এর সঙ্গে শাবনূরকে জড়ানোর বিষয়টি আমার কাছে ভালো লাগেনি। আমি সালমানের সঙ্গে তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছি। ১৯৯৪-৯৫ সালের কথা বলছি। আমি তত দিনে বিয়ে করেছি। সালমান আমাকে ভাবি বলে ডাকতেন। তাঁর স্ত্রী সামিরার সঙ্গেও আমার ভালো খাতির ছিল, এখনো আছে। দেখা হয়, কথা হয়। কিন্তু সেই সময়ে সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের প্রেমের বিষয়টি আমি শুনিনি। সামিরাও তখন এ বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। আমি আমার মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। যাহোক, এ ধরনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কথা বলে আর লাভ নেই।

অমিত হাসান, অভিনেতা
কেউ যদি বলে, শাবনূরকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে, আমি বলব সেটা সত্য না। খামোখাই একজন শিল্পীকে এ রকম একটা ঘটনায় জড়ানো হচ্ছে। শাবনূরের সঙ্গে যদি সালমান শাহর গভীর প্রেমের সম্পর্ক থাকত, তাহলে ওই সময় শাবনূর আমার বা অন্য কারও সঙ্গে ছবি সাইন করত না। সালমান অন্য কারও সঙ্গে শাবনূরকে ছবি করতে দিত না। ইন্ডাস্ট্রির নিয়মটা এমনই।
একসঙ্গে কাজ করলে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কাজের জন্যই সেটি তৈরি হয়। দুজনের মধ্যে কাজের বোঝাপড়াটা ভালো থাকলে কাজও ভালো হয়। সেই ভালো বোঝাপড়ার জায়গাটা তাদের দুজনের মধ্যে ছিল। তাই বলে সম্পর্কের কারণে আত্মহত্যা, এটি মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ওই সময় আমরা একসঙ্গে বেশ কয়েকটি কাজ করেছি, তাদের দুজনের মধ্যে এ ধরনের সম্পর্ক দেখিনি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, শাবনূরের ওপর সম্পর্কের দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মৌসুমী, অভিনেত্রী
প্রতিবেদনে যা–ই বলা হোক, আমরা শিল্পীরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখানে শাবনূরকে কেন জড়ানো হচ্ছে, সেটা বুঝলাম না। শাবনূর ও সালমান দুজন কলিগ ছিল। একসঙ্গে কাজ করেছে। বন্ধু ছিল। আমিও তো সালমানের বন্ধু ছিলাম। তাই বলে আমাকে নিয়ে কি টানাটানি হবে? আমরা তো আর সালমানকে ফিরে পাব না। তাঁর রহস্যময় মৃত্যুর সুরাহা করতে দীর্ঘ বছর লেগে গেছে। কেন লেগেছে, এটাও একটা রহস্য। এই প্রতিবেদন নিয়েও অনেক রহস্য থাকতে পারে। তারপর আমরা প্রতিবাদ করছি না। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে জড়িয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ, মানা যাচ্ছে না। তা ছাড়া এ দেশে সালমান শাহর অগণিত ভক্ত আছে। তাঁদের সামনে শাবনূরকে হেয় করা হচ্ছে, দেশবাসীর কাছে হেয় করা হচ্ছে। সালমান–ভক্তদের ঘৃণা ও আক্রোশের শিকার হতে পারেন শাবনূর। এই প্রতিবেদনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমি নিজেও সালমানের লাশ দেখেছি। সে আত্মহত্যা করেছে, আমার সে রকম মনে হয়নি।

ওমর সানী, অভিনেতা
সালমানকে নিয়ে প্রতিবেদন কতটা সত্য, কতটা মিথ্যা, এ নিয়ে আমি বিহ্বল। তবে এটুকু বুঝি, শাবনূর কখনোই চায়নি সালমানের মতো একটি ছেলে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাক। সালমান ও শাবনূরের সম্পর্কটা আমি কাছ থেকে দেখেছি। তারা খুব ভালো বন্ধু ছিল। তবে সালমান আবেগী ছেলে ছিল। মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সে অসম্ভব রকমের মেন্টাল ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। যেহেতু ওই সময়ে আমি তাকে কাছ থেকে দেখেছি, আমার মনে হয়েছে, তার পরিবারের কারণে সে বেশি হতাশ ছিল। শাবনূরের ঘাড়ের ওপর একচেটিয়া দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা ঠিক না। এটা আমি বিশ্বাস করি না।

পপি, অভিনেত্রী
সালমান শাহর প্রস্তাবেই আমি চলচ্চিত্রে কাজ করতে এসেছিলাম। পরপর তাঁর সঙ্গে আমার ছয়টি ছবির চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই তিনি মারা যান। এত বছর পর সালমান শাহর মৃত্যুর প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো, সে–ও শাবনূরকে জড়িয়ে। যে সময়ে সালমান শাহ মারা যান, তার কিছু আগে আমি চলচ্চিত্রে পা রেখেছি। শাবনূর ও সালমান শাহর মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কের বিষয়টি তখন তো আমাদের কানে আসেনি। যাইহোক, মৃত্যুর বহু বছর পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। এ সম্পর্কে এখন আর মন্তব্য করে লাভ নেই, করতেও চাই না। তবে এতটুকুই বলি, শাবনূর ভালো মনের মানুষ, ভালো অভিনয়শিল্পী।