মেয়েটা নিজেকে ভালোবাসে

আরিয়ানা গ্রান্ডে আর বিয়ন্সের মতো তারকারা যখন গ্র্যামির দিকে তাকিয়ে আছেন, লিজো তখন বিমানে উড়ছেন। গ্র্যামি নিয়ে চিন্তা করতে হবে, এমন ভাবনা তখনো মাথায় নেই ৩১ বছর বয়সী এই তারকার। বিমান থেকে নামতেই লিজোর ম্যানেজারের ফোন। এবার গ্র্যামিতে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন পেয়েছে লিজোর গান! কোঁকড়া চুলের র​্যাপ করে বেড়ানো মেয়েটা কবে এত এগিয়ে গেল? সেই গল্পই বলব আজ।

লিজো, নাকি লিসা?

মেলিসা ভিভিয়ান জেফারসন। মাত্র ১০ বছর বয়সের ছোট্ট মেয়েটি জন্মস্থান মিশিগানের ডেট্রয়েট ছেড়ে টেক্সাসে চলে আসে। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি অসম্ভব টান ছিল তাঁর। বিশেষ করে বাঁশি হলে তো কথাই নেই। গাড়িতে, বাড়িতে, পথে— সবখানে ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গী ছিল বাঁশি। তবে শুধু বাঁশি বাজানোর জন্য নয়, র্যাপার হিসেবেও একসময় পরিচিতি পায় সে। ১৪ বছর বয়সে সে বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করে ফেলে গানের দল ‘কর্নো ক্লিক’।

নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন! এতক্ষণ লিজোর ছোটবেলার কথাই বলছিলাম। জনপ্রিয় মার্কিন র​্যাপার জে-জিয়ের ‘ইজো (এইচওভিএ)’–এর অনুকরণে নিজের নাম লিসা থেকে লিজো বানিয়ে ফেলে ছোট্ট মেলিসা। এখন অবশ্য তাঁকে নিজের দেওয়া এই নামেই চেনে মানুষ!

বাবা হারানো মেয়ে

বয়স তখন মাত্র ২১। লিজো তাঁর গানের সবচেয়ে বড় উৎসাহদাতা বাবাকে হারান। সে সময় টানা এক বছর নিজের গাড়িতেই থাকতেন। বাড়িতে ঢুকলেই মনে পড়ে যেত বাবার কথা। হতাশা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে গানটাও ছেড়ে দিতে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ বাড়ির সবচেয়ে ছোট্ট এই মেয়ের মনে হলো, বাবা তো চেয়েছিলেন তাঁর মেয়ে গানই করুক। তাই আবার নতুন করে গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন লিজো। না থেকেও বাবা লিজোকে উৎসাহ দিয়ে যান।

বিউটিফুল অ্যান্ড ফ্যাট

না, অন্যদের চোখে নয়; সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজেকে ‘বিউটিফুল (হেলদি) অ্যান্ড ফ্যাট’ (সুন্দর এবং স্থূলকায়) বলেন লিজো। হুট করে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাননি তিনি। একটু একটু করে সামনে এগিয়েছেন। চলার পথে নিজের দেহগড়ন নিয়ে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি লিজোকে, মানুষ তাকিয়ে থেকেছে। এমন শরীর নিয়ে গান গাইবে কী করে? উপহাস আর নেতিবাচক মন্তব্য শুরু থেকেই ছায়ার মতো সঙ্গে ছিল লিজোর। তবে তিনি থেমে যাননি কখনো। নিজের গানকে শুধু হিপহপ বা র​্যাপের ভেতর আটকাতে চাননি লিজো। পপ, সোল, আরঅ্যান্ডবি, ফাঙ্ক-পপ ঘরানার মিশ্রণ আছে লিজোর গানে। আর সবকিছুর ওপরে, সব ঘরানায় লিজোর কাছে ভালোবাসাটাই বড় হয়ে উঠেছে। 

নিজেকে ভালোবাসাটাই সবার শেখা উচিত বলে মনে করেন এই শিল্পী। বিশেষ করে শিশুদের সব সময় এই বার্তাই শেখানোর পরামর্শ দেন তিনি।

একঝলকে লিজোর গান

লিজোর নাম গানের ভুবনে এসেছে প্রায় ছয় বছর হলো। ২০১৩ সালে মুক্তি পেয়েছে গানের অ্যালবাম লিজোব্যাঙ্গার্স এবং ২০১৫ সালে বিগ গার্ল স্মল ওয়ার্ল্ড । ২০১৪ সালে টাইম সাময়িকীর ‘ফোরটিন মিউজিক আর্টিস্ট টু ওয়াচ’ তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি। তবে লিজোর বর্তমান জনপ্রিয়তা শুরু হয় ২০১৯ সালে প্রকাশিত কজ আই লাভ ইউ অ্যালবামের মধ্য দিয়ে। এবারের গ্র্যামিতে তিনটি পুরস্কার জিতে নেন এই গায়িকা। এ ছাড়া ২০১৯ সালে বছরজুড়েই নানা রকম অর্জন আর স্বীকৃতি জিতেছেন তিনি। গানের পাশাপাশি গত বছর আগলিডলস ও হাসলার্স চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

সাদিয়া ইসলাম