এবার সিরাজগঞ্জে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান। ছবি: ফেসবুক থেকে
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান। ছবি: ফেসবুক থেকে

সিরাজগঞ্জ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য অঞ্চল। এবারে সিরাজগঞ্জের সরকারি কলেজ মাঠে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজন করতে যাচ্ছে তাদের ‘উনচল্লিশতম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন ২০২০’। সারা দেশে সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশ সাধনের জন্য বছরব্যাপী কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ৬ মার্চ শুক্রবার শুরু হবে তিন দিনের এই সম্মেলন এবং শেষ হবে ৮ মার্চ। এ উপলক্ষে ৬ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী আয়োজন।

এই আয়োজনে তিন দিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ভাষাসংগ্রামী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সৈনিক কামাল লোহানী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক সুব্রত মজুমদার। ‘গুণীজনের রবিরশ্মি’ শীর্ষক সুবচন, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য, গানে সাজানো এই সম্মেলনের এ উদ্বোধনী আয়োজনে প্রদান করা হবে ‘রবীন্দ্রপদক ২০২০’। এবারের রবীন্দ্রপদক পাচ্ছেন দেশের প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফাহমিদা খাতুন।

আজ বুধবার জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর শঙ্করেরর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের রমেশ চন্দ্র দত্ত মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান। লিখিত বক্তব্য পড়েন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সহসভাপতি আবুল হাসনাত, শিল্পী মিতা হক, সোহরাব হোসেন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ দত্ত, সদস্য আবুল ফারাহ পলাশ, রশিদ আল হেলাল, মামুনুর রশীদ প্রমুখ।

৬ মার্চ শুক্রবার শুরু হবে তিন দিনের এই সম্মেলন এবং শেষ হবে ৮ মার্চ
৬ মার্চ শুক্রবার শুরু হবে তিন দিনের এই সম্মেলন এবং শেষ হবে ৮ মার্চ

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম জানান, এবারের আয়োজনে বোধনসংগীত হিসেবে থাকছে কবিগুরুর ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়’ শিরোনামের গানটি। এতে অংশ নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্র আদর্শের ৭ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী এবং সংগঠক। তিন দিনের এই অধিবেশন সাজানো হয়েছে ‘গুণীজনের রবিরশ্মি’ শীর্ষক সুবচন, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। আয়োজনের দ্বিতীয় দিন বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। এবারের বিষয়: ‘রবীন্দ্রনাথের নাট্যভাবনা এবং এই সময়’। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেবেন আবুল হাসনাত ও অধ্যাপক শফি আহমেদ। থাকছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী ও পরিষদের শাখাগুলোর এ-যাবৎকালে পরিচালিত কার্যক্রমের উপস্থাপনা। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে প্রকাশিত হবে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা প্রবন্ধের সংকলন ‘সংগীত সংস্কৃতি’। এ উনচত্বারিংশ বার্ষিক অধিবেশনের সহায়তা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, সিটি ব্যাংক লি., সিএইচটি, টিভিএস, লাম এন্টারপ্রাইজ, আকিজ প্লাস্টিক প্রমুখ প্রতিষ্ঠান।

সভাপতির বক্তব্যে আতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ে এই সম্মেলন করছি, যখন পৃথিবীময় অস্থিরতা। সারা বিশ্বে এখন সংরক্ষণবাদী, অতি জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব, যেসব বিষয় নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুবই চিন্তিত ছিলেন। এ ছাড়া এই সম্মেলনটি করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের ঠিক দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর এক লেখায় বলেছিলেন, “আমরা এমন একজন মানুষের খোঁজ করছি, যার মাঝে বাঙালির সবকিছু জানা যাবে।” আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু আমাদের সেই মানুষ। সুতরাং আমাদের সভ্যতার এই সংকটকালে এই দুই বাঙালি আমাদের জন্য এখনো খুব প্রাসঙ্গিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেরও দিন। তাই সম্মেলনের এ দিনে বাঙালির শ্রেষ্ঠ এই দুই সন্তানকে স্মরণ করব। এ জন্য আমাদের এদিনের আয়োজনে পরিবেশিত হবে মুক্তিযুদ্ধের গান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বদেশ পর্যায়ের গান ও প্রার্থনা পর্যায়ের গান।’

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। ছবি: ফেসবুক থেকে
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। ছবি: ফেসবুক থেকে

অন্য বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ শুরু হচ্ছে ১৭ মার্চ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তাঁর স্বপ্ন ‘অসাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিমুক্ত’ বাংলাদেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ যখন অগ্রযাত্রার জন্য উন্মুখ, তখন সমাজ যেন সেই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানবিক সমাজ গঠনে এগিয়ে যেতে পারছে না। তারা আরও বলেন, দুঃখ-বিপর্যয়ের আগ্রাসী তিমির যখন আমাদের গ্রাস করতে উদ্যত হয়, তখন বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আমরা সর্বান্তকরণে তিমিরবিনাশী জ্যোতির্ময় সত্তার আবির্ভাব কামনা করি। আমাদের প্রত্যাশা সংগীত ও সংস্কৃতির কল্যাণ স্পর্শে গোটা জাতি জেগে উঠবে আলোকিত সত্তা নিয়ে। আমরা সেই জাগরণের জয়ধ্বনি দিই। আশা করি, সেই জ্যোতির্ময় অভ্যুদয়ে আমাদের বিপদ দূর হবে, নবপ্রভাতের সূচনা করে।

১৯৭৮ সালে জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ নামে একটি সংগঠন যাত্রা শুরু করে। ১৯৮১ সালে বিভাগীয় রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতা ও সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের আয়োজন করে জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ। পরের বছর দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্যে বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ। সংগঠনের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে ‘বাঙালির আপন সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসার’। নাম পরিবর্তন হলেও অব্যাহত আছে প্রয়াত স্মরণীয় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী জাহিদুর রহিমের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি-ফলক’ পুরস্কার প্রতিযোগিতার আয়োজন।