ফিরেছে পুরোনো নাটক, ফিরেছেন পুরোনো শিল্পী

‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের নাট্য আয়োজন’–এ মামুনুর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত
‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের নাট্য আয়োজন’–এ মামুনুর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

নিখাদ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এক আয়োজন। আড়ম্বর তো বটেই। তাঁকে ঘিরে প্রাণচঞ্চল শিল্পকলা একাডেমি। সব আয়োজনের তিনিই ছিলেন মধ্যমণি। তিনি নাটকের মানুষ, মামুনুর রশীদ। চার বছর পরপর অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ারে আসে তাঁর জন্মদিন।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার ছিল নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা মামুনুর রশীদের ১৮তম জন্মদিন। বয়সের হিসাবে তিনি ৭২ পূর্ণ করলেন। এ উপলক্ষে তাঁর গড়া নাটকের দল আরণ্যক ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আয়োজন করে ছয় দিনের উৎসব ‘দ্রোহ দাহ স্বপ্নের নাট্য আয়োজন’। এ ছয় দিন তাঁর লেখা, নির্দেশিত ও অভিনীত নাটকগুলো দেখল দর্শক। শুধু নাটক নয়, ঢোল বাদ্য, নাচ, গানে মুখরিত ছিল প্রতিদিনের আয়োজন। এ উৎসবে ফিরেছে পুরোনো নাটক, ফিরেছেন পুরোনো শিল্পীরা।

শুরুর দিন এসেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাট্য সমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর একটি বাক্যে পাওয়া যায় ছয় দিনের আয়োজনের যৌক্তিকতা। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা সৌভাগ্যবান। কারণ, আপনারা মামুনকে পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে নাটক নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে আমরা জড়িয়ে নিয়েছি। এতে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত যোগদান আমাদের দায়বদ্ধ করেছে।’ পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন এক বক্তৃতা দিতে। শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘নাট্যচর্চা সাধ, নাকি স্বপ্ন’ বিষয়ে বক্তৃতায় মামুনুর রশীদ ছাড়াও আরও দেখা গেছে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, লেখক–প্রকাশক আবুল হাসনাত, সাংসদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যজন মান্নান হীরা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হারুন-অর-রশীদ। পরে দুপুরের পর মামুনুর রশীদ শোনালেন তাঁর বেড়ে ওঠার গল্প।

২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই জমজমাট শিল্পকলা একাডেমি। মামুনুর রশীদকে শুভেচ্ছা জানাতে এদিন কে এসেছেন, সে তালিকা করার চেয়ে বরং সহজ হয় কে আসেননি সেদিন। টেলিভিশন নাটকসংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজনে ফুল আর শুভেচ্ছায় সিক্ত হন মামুনুর রশীদ। বিকেল সাড়ে চারটায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আলোচনা  করেন ‘মামুনুর রশীদের নাট্যভাবনা ও আমাদের নাট্যচর্চা’ বিষয়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ছিল জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে বক্তৃতানুষ্ঠান ‘অভিনন্দন, জীবন ও শিল্পের মামুনুর রশীদ’। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন ঢাকার বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এসেছিলেন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শিল্পী ও সাংসদ সুবর্ণা মুস্তফা, গোলাম কুদ্দুছ প্রমুখ। আলোচনা হয় ছোট পরিসরে। কেননা, দর্শক এবং স্বয়ং মামুনুর রশীদ অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর নতুন নাটকের জন্য। এদিন তিনি পরিবেশন করেন সাম্প্রতিক লেখা ও নির্দেশিত নাটক কহে ফেসবুক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাট্য রচনার দিক থেকে মামুনুর রশীদ কতটা এগিয়েছেন বা এখন কোথায় আছে, তার প্রমাণ মিলেছে এ নাটকে। ১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় আবারও দেখা গেল এ নাটক। ২ মার্চ একই সময়ে ছিল বাঙলা থিয়েটারের নাটক চের সাইকেল, ৩ মার্চ আরণ্যকের নাটক সঙক্রান্তি। সেসব প্রদর্শনীতে গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে, জন্মদিনকে উদ্‌যাপন করতে মঞ্চে ফিরেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান, শামীম জামানের মতো পর্দার তারকারা।