ইনস্টা নামের গ্রামে দেশি তারারা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছ। ইনস্টাগ্রামে উপস্থিত হয়ে ফ্যাশন, বিনোদন, খাওয়াদাওয়া, জীবনযাপন, বেড়ানো থেকে শুরু করে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রভাব ফেলেন তারকারা। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের শুভেচ্ছা দূত বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তারকাদের অনুসারীর সংখ্যাকে  গুরুত্ব দেয়। সেটা আবার হয়ে ওঠে তারকাদের আয়ের উৎস।

যাঁদের আছে ১০ লাখ ‘অনুসারী’

এই তালিকায় নাম আছে মেহ্জাবীন চৌধুরী, নুসরাত ফারিয়া, তানজিন তিশা, বিদ্যা সিনহা মিম, তাহসান খান, পড়শী, শেহতাজ মনিরা হাশেম, টয়া, সিয়াম আহমেদ, পূর্ণিমা, জয়া আহসান, সাবিলা নূর, মোশাররফ করিমসহ অনেকের। 

মেহ্জাবীনের ‘জীবনের বই’ ইনস্টাগ্রাম

ছোট পর্দার জনপ্রিয় তারকা মেহ্জাবীন ইনস্টাগ্রামে ঘর বেঁধেছিলেন (পড়ুন অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন) বেশ কয়েক বছর আগে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই গ্রামকে ব্যবহার করেছেন কেবল নিজের ছবি সংরক্ষণ করার স্থান হিসেবে। কারণ, তত দিন পর্যন্ত তাঁর অ্যাকাউন্ট ছিল প্রাইভেট। তারপর অন্য তারকাদের দেখে তিনিও নিজের অ্যাকাউন্ট ‘পাবলিক’ করলেন। ভাগ্যিস করলেন, নতুবা ২৫ লাখ ভক্তকে ‘কনফার্ম’ করার জন্যই লোক ভাড়া করতে হতো মেহ্জাবীনের। অথবা, সব কাজ ফেলে বসে বসে কেবল অনুসারী হওয়ার আবেদনে সাড়া দিতে হতো। মেহ্জাবীনের বক্তব্য, ‘ফেসবুক থেকে ইনস্টাগ্রামই আমাকে বেশি টানে। একবার আমার ইনস্টাগ্রামে ঢুঁ দিলেই ভক্তরা আমাকে জেনে যাবেন। তাই আমি বলি, ইনস্টাগ্রাম আমার জীবনের বই।’

খেলার মাঠ এখন মুঠোফোনেই!

২৪ লাখ অনুসারীর ‘মালিক’ নুসরাত ফারিয়া নাকি ‘ইনস্টাগ্রামিং’ শুরু করেছিলেন খুবই খেলাচ্ছলে। ফেসবুক একঘেয়ে লাগছিল। আর ছবি তুলতে দারুণ লাগে তাঁর। দুয়ের চমৎকার সমাধান দিল ইনস্টাগ্রাম। প্রথম দিন থেকেই প্রেমে পড়লেন ইনস্টাগ্রামের। ফেসবুক বা টুইটারে অনেক কিছু শেয়ার না করলেও ইনস্টায় সব থাকে। এটি নাকি তাঁর প্রিয় ‘খেলার মাঠ’। চমৎকার অবসর কাটানোর জন্য এই গ্রামের বিকল্প নেই বলেও মত দেন জনপ্রিয় এই তারকা। 

এক বছরেই ২২ লাখ

২ মাসে ৪ লাখ আর বছর পেরোতে না–পেরোতেই ২২ লাখ অনুসারী তানজিন তিশার। জীবনে যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, ইনস্টাগ্রাম ছাড়া যেন দিন অপূর্ণ থেকে যায় ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনয়শিল্পীর। ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউব নয়—কাজ ভক্তদের কেমন লাগল, সেটি জানতে নির্ভর করেন ইনস্টাগ্রামের হ্যাশট্যাগের ওপর। ভক্তদের মোটেই হতাশ করেন না তিনি। প্রতিদিন সকালে তানজিন তিশার ইনস্টা দেয়ালে চোখ বোলালে নতুন কিছু না কিছু পাবেনই ভক্তরা। তানজিন তিশার ফেসবুক অ্যাডমিনরা চালালেও ইনস্টাগ্রামের কলকাঠি নিজেই নাড়েন তিশা।

ইনস্টাগ্রামের ভক্তরা পরিশীলিত

১৭ লাখ অনুসারী নিয়ে তাহসান খানের নাম পুরুষ তারকাদের তালিকায় সবার ওপরে। অবশ্য সেটিকে বিশেষ কিছু বা আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই তাহসানের। কারণটা বললেন এভাবে, ‘আমরা তো ইনস্টাগ্রামের তারকা নই যে এ নিয়ে বিশেষ কোনো অনুভূতি হবে। ইনস্টাগ্রাম আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই তারকা ছিলাম। ভক্তদের অফলাইন, অনলাইন সব ভালোবাসাই আমাকে তারকা করেছে। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ তাহসান এ–ও জানান, যত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আছে, তার ভেতর ইনস্টাগ্রামের অধিবাসীদের তাঁর সবচেয়ে পরিশীলিত মনে হয়।

‘আসল’ সিয়াম আহমেদ

‘নায়ক’ সিয়াম আহমেদকে আপনারা কত রূপে দেখেন। কিন্তু ‘আসল’ সিয়াম আহমেদকে জানতে হলে যেতে হবে সিয়ামের ইনস্টাগ্রামের ঠিকানায়। ফোন ধরে কারণ জানতেই বললেন, ইনস্টাগ্রাম তাঁর সেই জায়গা, যেখানে তিনি কোনো অভিনয় বা ‘মেকি ব্যক্তিত্ব’ নয়, নিজের সত্যিকারের জীবনকে দেখাতে চান। বললেন, ‘ভক্তদের সঙ্গে তো আর প্রতারণা চলে না!’

তারকাদের টাকা দেয় ইনস্টাগ্রাম?

হলিউড, বলিউডের অনেক তারকার আয়ের একটা বড় অংশ জোগান দিচ্ছে ইনস্টাগ্রাম। স্পন্সরড পোস্ট, নিজেদের ছবি বিক্রি, বিজ্ঞাপন, সিনেমা বা অন্যের কোনো কিছুর প্রচার বা নিজের ব্যবসার প্রচারণা—অনেকভাবেই আয় করা সম্ভব ইনস্টাগ্রাম থেকে। তবে আমাদের দেশে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি সেই সংস্কৃতি। তবে সিয়াম আহমেদ যেসব পণ্যের শুভেচ্ছা দূত, সেগুলোর ছবি, ভিডিও নিজে দায়িত্ব নিয়েই পোস্ট করেন বলে আমাদের জানান। বললেন, ‘ভক্তরাও তো জানতে চায়, আমি কোন পণ্যগুলোয় বিশ্বাস রাখি।’ আবার নিজের ছবির প্রচারণার জন্যও ব্যবহার করেন এই মাধ্যম। তানজিন তিশাও তা-ই করেন। বললেন, ‘সে ক্ষেত্রে হয়তো একটু বেশি পারিশ্রমিক নিই। কাজ আর প্রচারণা মিলিয়ে।’ অন্যদিকে কেউ কোনো উপহার দিলে তিশার ভালো লাগলে তা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে জানিয়ে দেন ভক্তদের। বললেন, ‘আমাকে দিয়ে যদি কারও উপকার হয়, ক্ষতি কী।’ তিশার মতে, এটা জীবনের অংশ। এমন না যে ইনস্টাগ্রাম থেকে তিনি ব্যবসা করেন। মেহ্জাবীনেরও একই মত। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, বা যে বিজ্ঞাপন বা নাটক করলেন, অথবা যে পণ্যের দূত হিসেবে নিয়োজিত আছেন, নিজ দায়িত্বে সেগুলোর প্রচারণা চালান। এটাকে নিজের কাজের অংশ বলেই মনে করেন তিনি।