ছোট পর্দার নির্মাতাদের হাতে বড় পর্দার ভবিষ্যৎ

জ্বীন ছবিতে পূজা চেরি ও সজল। ছবিটির নির্মাতা নাদের চৌধুরী ছোট পর্দায় কাজ করতেন। ছবি: সংগৃহীত
জ্বীন ছবিতে পূজা চেরি ও সজল। ছবিটির নির্মাতা নাদের চৌধুরী ছোট পর্দায় কাজ করতেন। ছবি: সংগৃহীত

ছোট পর্দার নির্মাতার সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। অবজ্ঞাভরে সেটিকে ‘নাটক’ বলতেন এফডিসিকেন্দ্রিক বড় পর্দার কোনো কোনো নির্মাতা। সিনেমা বানাতে হলে বছরের পর বছর কাজ করতে হবে বড় পর্দার নির্মাতাদের সহকারী হিসেবে। এই চিত্র বদলে গেছে এখন। বড় পর্দার ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে ছোট পর্দার নির্মাতাদের হাতে।

বেশি দিন আগের কথা নয়। বছর দুই আগেও এফডিসিতে অবজ্ঞার উক্তিগুলো শোনা যেত। কিন্তু সেই ছোট পর্দার নির্মাতারাই এখন বড় পর্দার হাল ধরেছেন। পিছিয়ে পড়েছেন এফডিসিকেন্দ্রিক নির্মাতারা। কয়েক বছর ধরে ঢাকায় মুক্তি পাওয়া বেশির ভাগ ছবিই ছোট পর্দার নির্মাতাদের বানানো। সেই তালিকায় আছে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের স্বপ্নজাল, মোস্তফা সরয়ার ফারুরীর ডুব, অরুণ চৌধুরীর মায়াবতী, দীপংকর দীপনের ঢাকা অ্যাটাক, শামীম আহমেদের বসগিরি, রায়হান রাফির পোড়ামন টু এবং দহন, অনম বিশ্বাসের দেবী, তৌকীর আহমেদের ফাগুন হাওয়ায়, গোলাম সোহরাব দোদুলের সাপলুডু, মুহাম্মদ মোস্তফা কামালের সম্রাট ও যদি একদিন, তানিম রহমানের ন ডরাই, সাইফ চন্দনের আব্বাস, নিয়ামুল মুক্তার কাঠবিড়ালী ইত্যাদি।

অনেক দিন হলো এফডিসি কেন্দ্রিক ছবির নির্মাতাদের ছবি নেই আলোচনায়। যে দু–একটি ছবিতে শাকিব খান অভিনয় করছেন, সেগুলো নিয়ে কিছুটা আগ্রহ থাকে। তবে সম্প্রতি কাজী হায়াত পরিচালিত বীর ছবিটি হতাশ করেছে।

সামনে ছোট পর্দা থেকে আসা একঝাঁক নির্মাতার হাতে বড় বড় ছবির কাজ। কারও শুটিং শেষ। সেই তালিকায় আছে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পাপপুণ্য, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নো ল্যান্ডস ম্যান, মাসুদ হাসানের উনপঞ্চাশ বাতাস, দীপংকর দীপনের অপারেশন সুন্দরবন, ফয়সাল আহমেদ ও সানি সানোয়ারের মিশন এক্সট্রিম, মিশন এক্সট্রিম টু, রায়হান রাফির ইত্তেফাক, পরাণ ও স্বপ্নবাজি, এম এ রাহিমের শান, মাহমুদ দিদারের বিউটি সার্কাস, সাইফ চন্দনের ওস্তাদ, শামীম আহমেদের বিক্ষোভ, নঈম ইমতিয়াজের গাঙচিল ও জ্যাম এবং নাদের চৌধুরীর জ্বীন। এ ছাড়া মেজবাউর রহমান, চয়নিকা চৌধুরী, অঞ্জন আইচ, হৃদি হকসহ অনেকই ছবি নির্মাণ করছেন।

ছোট পর্দার নির্মাতাদের সিনেমাকে ‘নাটক’ বা ‘টেলিছবি’ নামে ডাকা হয় কেন? এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি গিয়াস উদ্দিন সেলিম। তবে তাঁদের দল যে ভারী হচ্ছে, ছবি আলোচিত হচ্ছে—এ বিষয়ে তিনি একমত। তিনি বলেন, ‘ছোট পর্দা থেকে সিনেমায় আসা নির্মাতার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, কাজ আলোচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ছোট পর্দায় অনুশীলনের ফল এটি।’
ছোট পর্দার নির্মাতাদের অবজ্ঞা করা প্রসঙ্গটি স্বীকার করে বড় পর্দার নির্মাতা মালেক আফসারী বলেন, ‘ছোট পর্দার নির্মাতাদের সিনেমা হয় না—এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ, এখন তো তাঁরাই বেশি ছবি নির্মাণ করছেন। সামনে তাঁরাই রাজত্ব করবে। এফডিসিকেন্দ্রিক পরিচালকেরা কয়টা ছবি বানাচ্ছেন?’
উল্লেখ্য, ছোট পর্দা থেকে আসা নির্মাতাদের ছবি শুধু দেশের প্রেক্ষাগৃহের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক নানা প্রতিযোগিতায় লড়াই করে সেগুলো। সেসব ছবি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনাও হচ্ছে। মালেক আফসারী বলেন, ‘এফডিসির মধ্যে বসে “বাবা হত্যা”র প্রতিশোধের গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর কথা যাঁরা এ যুগে এসেও ভাবছেন, তাঁদের সিনেমা এখন আর দর্শক খাবে না।’