রবীন্দ্রনাথের নাটকে মানবিকতার স্থান
রবীন্দ্রসংগীতের প্রচল কোনো আসর নয়, নয় কোনো মনমাতানো বিচিত্র বাংলা গানের অনুষ্ঠান; রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্রে রেখে বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা আর মানস গঠনের পথরচনার এক অনিন্দ্য আয়োজন। সূচনা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে স্বনামখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী জাহিদুর রহিম নামাঙ্কিত স্মৃতি পরিষদের মাধ্যমে। তিন বছর পর জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ নাম ধরে বাঙালির আপন সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসারের ক্রিয়াকাণ্ডে বহু পথ পাড়ি দিয়ে স্বমহিমায় ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে এই উদ্যোগ। এরই ৩৯তম বার্ষিক অধিবেশন বসেছে রবীন্দ্রস্মৃতিধন্য সিরাজগঞ্জে।
সকালের সোনারোদে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা শিল্পী ও সংগঠকদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রীতিসম্মেলনে জড়ো হয়েছিলেন তাঁরা।
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৩৯তম বার্ষিক অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠের মঞ্চে বিকেলের অধিবেশনে ‘রবীন্দ্রনাথের নাট্যভাবনা ও আমাদের এই সময়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। তিনি তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ‘সব ধরনের মৌলবাদ ও অন্ধ আনুগত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি ছিলেন যুক্তি ও মানবতার পক্ষ।’ রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দেশে বর্তমানে নাট্যরচনার বন্ধ্যত্ব কিছুটা ঘোচানো যেতে পারে রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাসের মানসম্পন্ন নাট্যরূপ দিয়ে। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলব, খেদোক্তি না করে আমাদের রবীন্দ্রনাটকের চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে, তবেই এ সময়ের একজন অনন্যসাধারণ নাট্যকার হিসেবে আমরা রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করতে পারব।’
প্রবন্ধের আলোচক লেখক আবুল হাসনাত বলেন, রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে বিচরণ করেননি। নাটকে অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাটকে মানবিকতাকে স্থান দিয়েছেন। বাংলা নাটকের সীমাবদ্ধতা ঘুচিয়ে সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষও রবীন্দ্রনাথের নাটকে উপেক্ষিত হয়নি।
অধ্যাপক শফি আহমেদ তাঁর আলোচনায় বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি সব সময়ের জন্যই প্রাসঙ্গিক। দূর থেকেই রবীন্দ্রনাথের আলোয় আলোকিত হওয়া যায়। সভাপতির বক্তব্যে আতিউর রহমান রবীন্দ্রনাথের সব সৃষ্টিকে আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান। সন্ধ্যার পর দেশের খ্যাতিমান এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের নানা জনপ্রিয় গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
সম্মেলনে আজ রোববার দেওয়া হবে ‘রবীন্দ্র পদক ২০২০’। এবার এ পদক পাচ্ছেন দেশের প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফাহমিদা খাতুন