তারকা 'একা' মায়েদের কথা

শাবনুর,বাঁধন এবং সোহানা সাবা। ছবি: প্রথম আলো
শাবনুর,বাঁধন এবং সোহানা সাবা। ছবি: প্রথম আলো

বিয়ে করলে দর্শকের আগ্রহে ভাটা পড়ে যাবে, ‘মা হয়েছ তো ক্যারিয়ার শেষ’, আর তারপর যদি বিচ্ছেদ হয়, তাহলে ক্যারিয়ারের কফিনের শেষ পেরেকটাও পড়ল বলে—বিনোদনজগতের ‘নায়িকা’মাত্রই বেঁধে দেওয়া এসব গণ্ডি পেরিয়ে যোগ্যতা, মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে কাজ করে সফলতার সঙ্গে ক্রিজে টিকে আছেন অনেকেই। বাংলাদেশে একা (সিঙ্গেল) মায়ের সংকট প্রকট। আর সেই মা যদি হন ছোট বা বড় পর্দার তারকা, তাহলে তো কথাই নেই!

সমাজ ভালো নেই, ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে থাকবে?
আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী
লাক্স তারকা ও ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ আজমেরী হক বাঁধন দীর্ঘদিন ধরে একা হাতে বড় করছেন কন্যা সায়েরাকে। এখন সায়েরার বয়স ১০ ছুঁইছুঁই। ৮ মাস বয়স থেকেই মেয়েকে নিয়ে শুটিংয়ে যেতেন। আড়াই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাইয়েছেন। বাঁধন প্রথম আলোকে জানান, ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের মানুষ তো বটেই, তাঁর মনোবিজ্ঞানী পর্যন্ত তাঁকে বলেছেন, ‘এই যে বাচ্চা নিয়ে শুটিংয়ে যান, ব্রেস্ট ফিডিং করান, ক্যারিয়ারের ক্ষতি হয় না?’ বাঁধন জানান, সমাজ ভাবে, বাচ্চার সমস্ত দায়িত্ব মায়ের। আবার পেশাগত কাজ, পারিবারিক দায়িত্ব, রান্না—সেখানেও কোনো ছাড় নেই। আর নেই পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ডে-কেয়ার। বাঁধনের ভাষায়, ‘দশটা হাত নেই আমার, দেবী হতে চাই না আমি। নারী দেবী নয়, সে মানুষ।’ সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে তার বাবা, আত্মীয়স্বজন ও সমাজের অন্যরাও যেন দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেন, এটিই তাঁর দাবি। নারীদের কাজ করার জন্য বিনোদনজগৎ কতটা বৈষম্যহীন ও নিরাপদ? এই প্রশ্নের উত্তরে বাঁধন বলেন, ‘সমাজ নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। একটা মেয়েশিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা পায় না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তো সমাজের বাইরে নয়। তাহলে সেটা কীভাবে ঠিকঠাক থাকবে?’ বাঁধন আরও জানান, কেবল ইন্ডাস্ট্রিতে নয়, স্কুল, মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে বিচ্ছেদের পর সাবেক স্বামীর সঙ্গে যেসব জায়গায় গেছেন, সবখানেই যৌন হয়রানি, বাজে প্রস্তাব বা কটুকথা শুনতে হয়েছে। নারীদের উদ্দেশে এই তারকা নারী বলেন, ‘আপনার স্বামী, সন্তান বা ভাই অপরাধী হলে তাঁর পক্ষ নেওয়া বন্ধ করুন। সাহসী আর শক্তিশালী হোন।’

‘মনে হচ্ছে এবার একটু পেছানো দরকার’
সোহানা সাবা, অভিনেত্রী
একা মা হিসেবে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে মোটেও অসুবিধা হয়নি সোহানা সাবার। কারণ, ২০১৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর এক বছর বয়সী পুত্র স্বরবর্ণ মা, নানি, নানা আর মামার সঙ্গে বড় হচ্ছে। নানিকে সে প্রায়ই ‘মা’ ডাকে। আর মাকে মাঝেমধ্যে ডাকে ‘আপু’। মামার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কম্পিউটারে গেম খেলে। আর ল্যাপটপের আড়াল থেকে বলে, ‘আমি তো চাকরি করছি।’ তবে সোহানা সাবার মতে, পরিবারের এ রকম নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন খুব কম নারীই পায়। তাই নিজেকে তিনি রাখলেন ব্যতিক্রমের খাতায়। আর বললেন, ‘এখন কর্মজীবী একা মায়ের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সন্তানের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আমাদের একটু পিছিয়ে যৌথ পরিবারে ফিরে যাওয়া দরকার।’

একা মা হিসেবে আমার কোনো চাপ নেই
শাবনূর, অভিনেত্রী
স্বামীকে বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়েছেন বেশি দিন হয়নি। তবে শাবনূরের দাবি, ২০১৩ সালে ছেলে আইজানের জন্মের পর থেকেই তিনি ‘একা মা’। তাই সেটা এখন আলাদা করে ভাবনার ভেতর নেই। সিডনি থেকে প্রথম আলোকে এই অভিনয়শিল্পী জানান, একা সন্তান মানুষ করা তাঁর কাছে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আর অস্ট্রেলিয়ার সবকিছু এতই নিয়মের মধ্যে যে সিঙ্গেল মাদার নাকি সিঙ্গেল ফাদার—এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না বলেও যোগ করেন তিনি। তাঁর মতে, বাংলাদেশের অনেক মা-ই একা তাঁর সন্তানকে নিয়ে ভালো আছেন। তিনিও খুব নির্ভার হয়েই সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘সারা জীবন ফুরফুরে মেজাজে থাকার চেষ্টা করেছি, এখনো তা-ই। ফিল্মে যেমন, বাস্তবেও তেমন। আমি কোনো কিছুকেই চাপ মনে করি না। সন্তান সন্তানের মতো বেড়ে উঠবে, আমি তার যা কিছু দরকার—পেছন থেকে, সঙ্গে থেকে করে যাচ্ছি, যাব। একা মা হিসেবে কোনো ঝড়ঝাপটা নেই।’