'মানবতার জয়গান ধ্বনিত হোক সর্বদিকে'

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে সম্মেলক সংগীত পরিবেশন করছেন জাতীয় ও স্থানীয় শিল্পীরা। গতকাল সিরাজগঞ্জ  সরকারি কলেজ মাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে সম্মেলক সংগীত পরিবেশন করছেন জাতীয় ও স্থানীয় শিল্পীরা। গতকাল সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

‘আজ যখন আমরা পালন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং আগামী বছর উদ্যাপন করব মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী, তখন জাতির অর্জনে আমরা যেমন আনন্দিত হই, তেমনি শঙ্কিত হই পথভ্রষ্টতা, অনাচার ও অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তে। আমরা গৌরবময় অতীত থেকে নিতে চাই আগামীর সংগ্রামের দীক্ষা। বিদ্যমান বাস্তবতায় দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক উজ্জীবনের সাধনায় আরও নিবিড় ও বিস্তৃত সৃজনমুখরতা আমাদের কাম্য। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস কিংবা ধর্মান্ধতার কাছে অবনত হওয়ার প্রচেষ্টা রুখে দাঁড়াতে হবে। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বাণীমন্ত্র নিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ দৃঢ়বদ্ধ করে আমরা মোকাবিলা করব হিংসার উন্মত্ততা। রবীন্দ্রনাথের বাণীমন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এবং বাংলাদেশের স্বপ্ন একসূত্রে গেঁথে মানবতার জয়গান ধ্বনিত হোক সর্বদিকে।’ জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের তিন দিনব্যাপী ৩৯তম বার্ষিক অধিবেশনের ঘোষণাপত্রে এসব কথা বলা হয়।

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, একদা এই অঞ্চলজুড়ে ছিল রবীন্দ্র পরিক্রমণ। তাঁর মানস গঠন ও সৃজনধারায় যোগ করেছিল নতুন মাত্রা। বাঙালির নিজেকে চেনা ও আত্মপরিচয়ে সংহত হওয়ার আন্দোলন জাতীয় মুক্তির মহাপ্লাবনে রূপ নিল ১৯৭১ সালে। বঙ্গবন্ধুর অনন্য নেতৃত্বে বহু আত্মদানের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ। বাঙালির এই অভিযাত্রায় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পথের সাথি, শক্তি ও প্রেরণার উৎস।

সরোয়ার আলী সভাপতিত্বে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন লাইসা আহমেদ লিসা। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুব্রত মজুমদার।

সুব্রত মজুমদার বলেন, ‘স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা সুস্থ বাঙালি চর্চার সুযোগ পেয়েছি। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ তার একটি অংশ। বর্তমানে অতি লোভ আমাদের সমাজকে ধ্বংস করছে।’

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী। এবারের রবীন্দ্রপদক দেওয়া হয় বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফাহমিদা খাতুনকে। অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকায় তাঁর পক্ষে পদক গ্রহণ করেন উত্তরা শাখার সহসভাপতি প্রকাশ দত্ত।

সম্মেলন উপলক্ষে রোববার সকালে এক বিশাল শোভাযাত্রা হয়। শোভাযাত্রা শেষে সিরাজগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে পৌর শহরের শহীদ এম মুনসুর আলী অডিটরিয়ামে আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান। বক্তৃতা করেন সংগঠক ও অতিথিরা।

সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে প্রদীপ প্রজ্বালন, সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি, নৃত্যানুষ্ঠান ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।