পাঁচ ব্যান্ডের গানের মিছিল

>ভিড়ের মধ্যে যেতে হবে না। কাটতে হবে না টিকিট। আপাতত করোনোভাইরাসের আতঙ্কে যাঁরা জনসমাগম এড়াতে চাইছেন, তাঁরা যদি হন রক, মেটাল আর হেভিমেটাল বা হার্ড রকের শ্রোতা, তাহলে উৎকণ্ঠার এই সময়ে প্রিয় কয়েকটি ব্যান্ডের নতুন গানগুলো হতে পারে স্বস্তির রসদ। কিছুদিন হলো গানের কয়েকটি দল নতুন গান ছেড়েছে শ্রোতাদের জন্য। এইসব গান ও গানের ভিডিও নিয়ে এখন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা।
অ্যাভোয়েড রাফা। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাভোয়েড রাফা। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাভোয়েড রাফা
অ্যাভোয়েড রাফাকে এড়ানো যাবে না

রক সংগীতের শ্রোতাদের কাছে রাফা জনপ্রিয় এক নাম। হেভি রক মেটাল, থ্রাশ মেটাল, প্রগ্রেসিভ মেটালসহ বিভিন্ন ঘরানার গান করে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন রাফা। গড়েছেন নিজের দল অ্যাভোয়েড রাফা। যখন অন্য ব্যান্ডগুলো অ্যালবাম বের করার বিষয়ে কিছুটা নিষ্ক্রিয়, সেই জায়গা থেকে ব্যতিক্রম অ্যাভোয়েড রাফা। প্রায় তিন বছর পর শ্রোতাদের জন্য অনেক চমকে ভরপুর একটি অ্যালবাম আনতে যাচ্ছে এই দল। কয়েক মাসের মধ্যেই নাকি অ্যালবামের কাজ শেষ হবে।

নাম এখনো ঠিক না হলেও বেশির ভাগ গানের কাজই শেষ হয়েছে বলে জানালেন দলটির হর্তাকর্তা রাফা। বললেন, এই অ্যালবামের গানগুলো হবে ইলেকট্রা রক ঘরানার। এ ছাড়া অ্যালবামের সব গান একসঙ্গেই প্রকাশ করা হবে। আপাতত রাফা শুধু বললেন এই অ্যালবামের একটি গানের কথা, নাম ‘নিয়ম’। রাফা বলেন, নিয়ম না মেনে সিস্টেমকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই—এ কথা বোঝানোর জন্যই নিয়ম গানটা করা। জানালেন, অ্যালবামের প্রতিটি গান এভাবেই কোনো না কোনো অর্থ আর উদ্দেশ্য নিয়ে আসতে যাচ্ছে শিগগিরই।

ছবি: সুমন ইউসুফ
ছবি: সুমন ইউসুফ

আভাস

গান খুঁজছে আভাস

শিরোনামহীনের সঙ্গে ২০ বছরের গানের সংসার ছেড়ে নতুন আরেকটি সংসার গড়েছেন তানযীর তুহিন। প্রতিষ্ঠা করেছেন আভাস। এই ব্যান্ডের বয়স এরই মধ্যে দুই বছর হয়ে গেছে। পাঁচ সদস্যের এই সংসার থেকে শ্রোতারা পেয়েছেন তিনটি গান—মানুষ ১, আভাস ও বাস্তব।

২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঘোষণা দেন আভাস গড়ার। দলটি প্রথম কনসার্ট করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুহিন বলেন, ‘ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার যে ব্যান্ড করব, এটা ভাবিনি। সময়টাও অনিশ্চিত ছিল। আদৌ মিউজিক করব কি না, এটা নিয়েও দোটানায় ছিলাম। তবে নতুন করে দল গড়ার সবচেয়ে বড় উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিল আভাসের গিটারিস্ট সুমন। ওর মাধ্যমে আমরা সবাই এক হয়েছি। শেখ রাজু, শাওন, রিংকুসহ সবাইকে ম্যাচিউরডও মনে হয়েছে। ভাবলাম, সবার সঙ্গে আমার সংগীতের ভ্রমণটা দারুণ হবে। এরপর নেমে পড়লাম।’ যাত্রা শুরু করেই দুর্বার গতিতে ছুটছে আভাস। নিয়মিত গানের ভিডিওর বাইরে ১০টি গানের অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করতে যাচ্ছে দলটি। ভিডিও চিত্র বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্ল্যাটফর্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। তথ্যগুলো জানালেন তুহিন। এই গানগুলো নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যান্ডটির। মানুষের আভাস নামের এই অ্যালবামের গানগুলোর কথা আহ্বান করা হয়েছে ভক্তদের কাছ থেকেই। ‘মানুষের লেখা গান, গাইবে আভাস’—এমন স্লোগান নিয়ে ১ মার্চ থেকে গানের কথা খোঁজা শুরু করেছে আভাস।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আর্বোভাইরাস

আসছে, আসবে আর্বোভাইরাস

হাইব্রিড রক ঘরনার ব্যান্ড হিসেবে আর্বোভাইরাস তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। বাস্তবজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো উঠে আসে তাদের গানের কথায়। যেকোনো কনসার্টে মঞ্চ কাঁপিয়ে তোলায় আর্বোভাইরাস অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গত বছর জিপি মিউজিক থেকে প্রকাশ হওয়া তাদের এক্সটেন্ডেড প্লে (ইপি) অতঃপর–এর তিনটি গানের মিউজিক ভিডিও বের করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। প্রথম গান ‘আমি আমারই মতো’র ভিডিও বেরিয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। এটি লিখেছেন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সুফি।

চলতি মাসের শেষ নাগাদ দলটি প্রকাশ করবে দ্বিতীয় গান ‘সত্য গাথা’র ভিডিও। তবে তৃতীয় গানের, অর্থাৎ ‘নিঃসঙ্গ গ্রহ’র ভিডিওটি মুক্তির দিনক্ষণ এখনো ঠিক করা হয়নি। তৃতীয় গানের ভিডিও নিয়ে দলটির গিটারিস্ট রঞ্জন বলেন, কল্পবিজ্ঞান ও নাগরিক জীবনের সম্পর্কের মিশেলে এটি লেখা। গানগুলোর মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে আর্বোভাইরাসের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নেমেসিস

গতি ফিরেছে নেমেসিসে

এ সময়ের অন্যতম সফল অলটারনেটিভ রক ব্যান্ড নেমেসিস। তরুণ শ্রোতাদের প্রভাবিত করার জন্য নেমেসিসের জুড়ি নেই। যেখানেই নেমেসিস গাইতে যায়, তরুণেরা ছোটেন সেখানেই। গায়ের টি–শার্ট থেকে শুরু করে কাঁধের ব্যাগ, পানির বোতলেও প্রিয় ব্যান্ড নেমেসিসের লোগো এঁকে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ওঠেন ভক্তরা।

দুই দশকের পথচলায় ব্যান্ডটির অ্যালবাম বেরিয়েছে মোট তিনটি। প্রতিটি অ্যালবামই দারুণ সাড়া ফেলেছিল রক শ্রোতাদের মনে। বছর দেড়েক ধরে ব্যান্ডটির অবিচ্ছেদ্য অংশ ড্রামার ডিওর অসুস্থ থাকায় কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল নেমেসিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম। তবে সম্প্রতি আবার গতি ফিরেছে দলটির। ৮ মার্চ নেমেসিস তাদের গণজোয়ার অ্যালবামের ‘আবার দেখা হবে’ গানটির ভিডিও প্রকাশ করেছে। জোহাদ বলেন, তিন বছর পর মিউজিক ভিডিও প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো শ্রোতাদের এই বার্তাই দেওয়া যে ২০২০ সালে আবার দেখা হবে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মেঘদল

আসছে ‘অ্যালুমিনিয়ামের ডানা’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পড়ুয়া কয়েকজন বন্ধু। আড্ডা দিতেন আজিজ সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে বসে। পাতালে বসে আড্ডা দিতে দিতেই তাঁরা মেঘদলে নাম লেখান। গড়ে ওঠে বাংলাদেশের অন্যতম থিওরিটিক্যাল রক ব্যান্ড মেঘদল। ব্যান্ডটি তাদের গানে রূপক কথার মধ্য দিয়ে ভক্তদের মনের আঙিনায় ঠাঁই করে নিয়েছে। এই দলের প্রথম অ্যালবাম ছিল মেঘদল, মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। এই দলের দ্বিতীয় অ্যালবাম অ্যালুমিনিয়ামের ডানার গান ‘এসো আমার শহরে’ প্রকাশের বছর দেড়েক পর সম্প্রতি এল আরও দুটি গান—‘না বলা’ ও ‘মায়া সাইকেল’। নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে এই গানগুলো প্রকাশ করেছে মেঘদল। ‘মায়া সাইকেল’ গানটি মেঘদলের গাওয়া প্রথম দ্বৈত গান, গেয়েছেন শোয়েব ও শিবু। শিবু জানান, ‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’ গানটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গানটি গেয়েছেন তাঁরা, তবে তাঁদের গানটির প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।             

‘এসো আমার শহরে’ গানটিতে দেখা যায় এক ব্যক্তিকে। ‘মায়া সাইকেল’–এর ভিডিওতেও রয়েছে প্রথম গানটির রেশ। মায়া সাইকেলে এই সময়ের এক ব্যক্তির ছুটে চলার বিমূর্ত মুহূর্তগুলো উঠে এসেছে ছোট ছোট আবহের মধ্য দিয়ে।

মেঘদলের বর্তমান লাইনআপে আছেন শিবু (ভোকাল), সুমন (ভোকাল), কিবরিয়া (বেস), রনি (কি–বোর্ড), আমজাদ (ড্রামস), শোয়েব (গিটার) ও সৌরভ (বাঁশি)। এই বছরের শেষের দিকে মেঘদল শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেবে তাদের দ্বিতীয় অ্যালবামটি।