হাজার কোটির লোকসান

>করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। দিন দিন বাড়ছে সংক্রমণের হার, বাড়ছে মৃত্যু। এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে হলিউডেও। ব্যবসায় মার খাওয়ার আশঙ্কায় পিছিয়ে যাচ্ছে নতুন চলচ্চিত্রের মুক্তি। অন্যদিকে জনসমাগম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বাতিল করে দিতে হচ্ছে সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠানের নির্মাণকাজ। কনসার্ট, থিয়েটার থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র উৎসব বা পুরস্কার বিতরণী—হয় বাতিল, না হয় পিছিয়ে যাচ্ছে সব। 
করোনায় ক্ষতির কবলে পড়েছে ডিজনির ছবি মুলান
করোনায় ক্ষতির কবলে পড়েছে ডিজনির ছবি মুলান

ছবির মুক্তিতে ভয়

এখন পর্যন্ত গোটা দশেক চলচ্চিত্রের মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। জেমস বন্ডভক্তরা ১০ এপ্রিলে দেখতে পারছেন না নো টাইম টু ডাই। এটি মুক্তি পাবে এখন চলতি বছরের শেষে। ২০২০-এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল ডিজনির ছবি মুলান। ২৭ মার্চ ছবিটি মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। তা তো বাতিল হয়েছেই, সেই সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে আসার নতুন তারিখও অনিশ্চিত। মার্চেই মুক্তির কথা ছিল আ কোয়ায়েট প্লেস পার্ট টু, তা–ও বাতিল হয়ে গেছে। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস–এর নবম কিস্তির মুক্তি পিছিয়েছে ১১ মাসের জন্য। এ ছাড়া দ্য লাভবার্ডস, ব্লু স্টোরি, দ্য নিউ মিউট্যান্টস, অ্যান্টলারস—এই ছবিগুলোর মুক্তিও করোনার কারণে বাতিল করা হয়েছে। মাই স্পাই, পিটার র​্যাবিট টু ও দ্য সিক্রেট গার্ডেন ছবির মুক্তি পিছিয়ে গেছে কয়েক মাস। 

নির্মাণেও বিপদ

ইউরোপ বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে একের পর এক ছবির শুটিং বাতিল হচ্ছে। ফলে মুক্তির মিছিলে থাকা ছবিগুলোর প্রেক্ষাগৃহে আসার দিনক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এমন তালিকায় আছে লিটল মারমেইড, নাইটমেয়ার অ্যালে, হোম অ্যালোন, শ্রাংক–এর মতো বহুল প্রতীক্ষিত ছবিগুলো। করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স তাদের যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সব প্রযোজনার নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ইতালিতে গুটিয়ে ফেলা হয়েছে মিশন ইম্পসিবল ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন ছবির শুটিং। ওদিকে মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলো তাদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোর নির্মাণও আপাতত স্থগিত করে দিয়েছে অথবা পিছিয়েছে।

১১ মাসের জন্য ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ছবির মুক্তি পিছিয়েছে
১১ মাসের জন্য ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ছবির মুক্তি পিছিয়েছে

ক্ষতি কার?

এককথায়, ক্ষতি সবার। দর্শক থেকে শুরু করে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক—অর্থাৎ হলিউডের চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত সবাই ক্ষতির মুখোমুখি হবেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে। যেমন নো টাইম টু ডাই ছবির মুক্তি পিছিয়ে দিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এমজিএমের মরার দশা! বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুক্তি পেছানোয় তাদের ৩ থেকে ৫ কোটি ডলার ক্ষতি গুনতে হয়েছে। একই অবস্থা মুক্তির আট দিন আগে তারিখ বদলানো আ কোয়ায়েট প্লেস পার্ট টু–এর। এই প্রযোজকের পকেট থেকে খসে গেছে ১ কোটি থেকে ৩ কোটি ডলার। ওদিকে শুটিং বাতিল করায় ডিজনি বা মার্ভেলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ ডলার। 

এক হিসাবে দেখা গেছে, গত বছর হলিউডি ছবিগুলো মোট ৪ হাজার ২৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা করেছিল। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকেই আয় করেছিল ৩ হাজার ৮০ কোটি ডলার। চীন হয়ে উঠেছিল হলিউডের ছবির দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এই দুই বাজারই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চীন এরই মধ্যে সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দিয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশেও চলছে মন্দা। ফলে হলকেন্দ্রিক ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে বৈশ্বিক বক্স অফিস শুধু করোনাভাইরাসের কারণেই ন্যূনতম ৭০০ কোটি ডলার রাজস্ব হারিয়েছে। যদি মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসও এভাবে কাটে, তবে আরও ১ হাজার ডলার রাজস্ব হারাতে হবে। সব মিলিয়ে মে মাস নাগাদ এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে। আর করোনার পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তো কথাই নেই। 

মিডিয়া বিশ্লেষক হাল ভোফল বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন বিনোদন খাত। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ এখন আর প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সময় কাটাতে চাইছে না। শিল্পীরাও শুটিং সেটে মানুষের ভিড়ে অনিরাপদ বোধ করছেন।

ভাইরাস-প্রুফ নেটফ্লিক্স

মন্দার এই বাজারে একমাত্র অনলাইন স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স আছে সুবিধাজনক অবস্থানে। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ দিন দিন ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় চাহিদা বাড়ছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের। শেয়ারবাজারেও নেটফ্লিক্সের অবস্থা অন্যদের তুলনায় ভালো। তবে নেটফ্লিক্সের লোকসান হচ্ছে অন্যদিক থেকে। করোনার কারণে নতুন প্রযোজনা তৈরি করতে পারছে না নেটফ্লিক্স। অথচ কন্টেন্ট তৈরিতে এ বছর ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার খরচ করতে চেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি, কিন্তু ঘরে বসে থাকতে হলে তা কীভাবে হবে? ফলে নেটফ্লিক্সের সার্বিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। 

 হলিউডের যে তারকারা করোনায় আক্রান্ত—

১. টম হ্যাংকস ও রিটা উইলসন: বিপদমুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন।

২. ইদ্রিস অ্যালবা: কোয়ারেন্টিনে আছেন এই ব্রিটিশ অভিনেতা

৩. ওলগা কুরিল্যাংকো: ক্যাসিনো রয়্যাল ছবির এই বন্ড গার্লও করোনায় আক্রান্ত

৪. ক্রিস্টোফার হিভিউ: গেম অব থ্রোনস–এর এই অভিনেতা আছেন কোয়ারেন্টিনে

 তথ্যসূত্র: ফোর্বস, বিবিসি, হলিউড রিপোর্টার, ইন্ডিওয়্যার, গার্ডিয়ান ও ভ্যারাইটি