বিনোদনজগতে করোনার হানা

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার প্রায় ৭০ ভাগ কাজ বাতিল হয়ে গেছে। জয়া আহসান দুটি সিনেমার শুটিং বাতিল করে এখন জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান ঘোষণা দিয়েছেন, আপাতত শুটিং ও কনসার্ট স্থগিত। করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্বের বিনোদন অঙ্গনে। চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত, মঞ্চ—প্রতিটি ক্ষেত্রই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশ ও দেশের বাইরের বিনোদন অঙ্গনে করোনার প্রভাব নিয়ে এবারের আয়োজন। 
১ / ৮
মাস্কের আড়ালে দেশ ও বিদেশের তারকা: ১. বলিউড অভিনেত্রী পূজা হেজ, ২. হলিউড অভিনেত্রী গিনেথ প্যালট্রো, ৩. অভিনেতা আরিফিন শুভ, ৪. অভিনেত্রী নাবিলা ও বর রিম, ৫. বলিউড অভিনেতা অনিল কাপুর

চলচ্চিত্র

বিশ্ব তোলপাড় কোভিড–১৯ নামের এক ভাইরাসে। চায়ের কাপে ঝড় তুলছে যে নাম, সেটি আর কিছু নয়, করোনা। বিশ্ব বিনোদনেও পড়েছে করোনার কালো ছায়া। চলচ্চিত্র, সংগীত ও নাটকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাই করোনাকে বলছেন বিনোদনদুনিয়ার নতুন খলনায়ক। দেশে দেশে উৎসব বাতিল হচ্ছে, শুটিং বন্ধ হচ্ছে, পিছিয়ে যাচ্ছে ছবির মুক্তি। যে ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে, মুখ থুবড়ে পড়ছে বক্স অফিসে। জানা যাক, বাংলাদেশের বিনোদনমাধ্যমগুলো কীভাবে প্রভাবিত হয়েছে এ করোনাভাইরাসের প্রভাবে। লিখেছেন জিনাত শারমিন ও শফিক আল মামুন

২ / ৮
অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন ছবির মহরতে পরীমনি ও সিয়াম আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন ছবির মহরতে পরীমনি ও সিয়াম আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

পিছিয়ে গেল মুক্তি

করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণার পর থেকেই দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো প্রায় দর্শকশূন্য হতে শুরু করে। ১৬ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির একাংশ থেকে ঘোষণা আসে, ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব সিনেমা হল। এর ফলে চলতি মাসে মুক্তির তালিকায় থাকা ছবির মুক্তি পিছিয়ে যায়। অবশ্য এর আগে ১৩ মার্চ মুক্তির কথা ছিল উনপঞ্চাশ বাতাস ছবিটির। কিন্তু করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারির রূপ ধারণ করায় মুক্তি পায়নি ছবিটি। এরপর ২০ মার্চ মুক্তির অপেক্ষায় থাকা শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২ ও বান্ধব ছবি দুটির মুক্তির দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া নীল মুকুট ছবির মুক্তিও ২৭ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাড়িতেই থাকছেন জয়া

৩ / ৮
শুটিং পিছিয়েছে। তাই ঢাকায় নিজ বাড়িতে সময় কাটছে জয়া আহসানের
শুটিং পিছিয়েছে। তাই ঢাকায় নিজ বাড়িতে সময় কাটছে জয়া আহসানের

ভারতের বাঙালি পরিচালক মানস মুকুল পালের নতুন ছবির শুটিংয়ে জয়া আহসানের যোগ দেওয়ার কথা ছিল ৩১ মার্চ থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে ভারত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে প্রবেশ বন্ধ থাকায় শুটিং বাতিল করতে হয়েছে জয়াকে। একই সময়ে কলকাতায় কৌশিক গাঙ্গুলির অর্ধাঙ্গিনী ছবির ডাবিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকাতেই অবস্থান করার কারণে সেটাও পিছিয়ে গেছে। এমনকি ঢাকাতেও আপাতত জনসমাগত এড়ানোর জন্য জয়া আহসান বেশির ভাগ সময় নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে থাকলে কাজগুলো হয়তো করতে পারতাম। কিন্তু যখন করোনার পরিস্থিতি বৈশ্বিক মহামারির দিকে চলে গেল, এমন সময় দেশ ও পরিবারের থেকে দূরে থাকতে পারলাম না।’

হতাশ নুসরাত ফারিয়া

৪ / ৮
পিছিয়েছে ফারিয়া–অপূর্বর যদি, কিন্তু, তবুও ছবির শুটিং
পিছিয়েছে ফারিয়া–অপূর্বর যদি, কিন্তু, তবুও ছবির শুটিং

সব সময় কাজের মধ্যে থাকাটা নুসরাত ফারিয়ার নেশা। ছুটি নিয়েও বেশি দিন অবসরে থাকতে পারেন না। কিন্তু এখন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি পেয়ে হতাশার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে তাঁর। নুসরাত ফারিয়া বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমার প্রায় ৭০ ভাগ শুটিং–ডাবিং ও অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গেছে। বেশির ভাগ কাজ ছিল ভারতের কলকাতায়, মুম্বাইয়ে। এখন কিছু্ই হচ্ছে না। সময়টা আতঙ্কের, সাবধানে থাকার। তাই বাড়িতেই আছি।’ 

ক্ষতিগ্রস্ত হলমালিক ও প্রযোজক

করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগত এড়াতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন হলমালিক ও প্রযোজকেরা। বন্ধের আগে প্রেক্ষাগৃহে শাকিব খান অভিনীত শাহেনশাহ ও বীর ছবি দুটি চলছিল, কিছু প্রেক্ষাগৃহে ছিল ভারত থেকে আমদানি করা জয়া আহসান অভিনীত ছবি রবিবার। জানা গেছে, করোনার কারণে প্রায় কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে শাকিব খানের ছবি শাহেনশাহকে। ছবির প্রযোজক সেলিম খান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে ২ কোটি টাকা বাজেটের ছবি থেকে অর্ধেক টাকাও তুলতে পারব না।’

মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘শাকিব খানের ছবি চললে কিছুটা ব্যবসা হয়। ভেবেছিলাম বীর ও শাহেনশাহ থেকে ভালো আয় হবে, যা দিয়ে বছর চলা যাবে। এখন তো প্রেক্ষাগৃহই বন্ধ হয়ে গেল।’ টঙ্গীর চম্পাকলি হলের কর্মকর্তা তিমির হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে মনে হচ্ছে সব তছনছ হয়ে গেল।’

শুটিং বন্ধ, আটকে গেছে সম্পাদনার কাজ

করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনেক ছবির শুটিং আটকে গেছে। আটকে গেছে দেশের বাইরে গিয়ে চলচ্চিত্র সম্পাদনা ও শুটিং–পরবর্তী কাজ। ১১ মার্চ ঢাকার বাইরে অপারেশন সুন্দরবন ছবির শুটিং শেষ হয়। ঢাকায় চার দিনের জন্য শুটিং হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা–আতঙ্কের মধ্যে কাজ করতে পারছেন না ছবির পরিচালক দীপংকর দীপন। থেমে গেছে শিহাব শাহীন পরিচালিত নুসরাত ফারিয়া ও অপূর্ব অভিনীত ছবি যদি, কিন্তু, তবুওর কাজ। একইভাবে সাফি উদ্দিন সাফির সিক্রেট এজেন্ট ছবির গানের শুটিংও আটকে গেছে। একই সমস্যায় পড়েছেন পরাণ ছবির পরিচালক রায়হান রাফিও। তিনি বলেন, ‘পরাণ ছবির সেন্সর কপি কলকাতায় আছে। ভারত সফরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেই কপি আনতে যেতে পারছি না। সবই আটকে গেছে।’

এর মধ্যেও চলছে শুটিং

কিছু চলচ্চিত্রের কাজ বেশ সতর্ক অবস্থায় চালিয়ে যাচ্ছেন নির্মাতারা। অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন, আদমসহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং এখন চলছে। অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন ছবির শুটিং শুরু হয় ১৪ মার্চ। এর পরিচালক আবু রায়হান বলেন, ‘আমরা লঞ্চে শুটিং করছি। দুজন ডাক্তার ফোনে সব সময় থাকছেন। এ ছাড়া মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ নিরাপত্তার বিভিন্ন ব্যবস্থা এখানে আছে।’

ফারুকীর জীবনই আটকে গেছে! 

করোনার প্রভাবে আপনার কোন কাজটি আটকে গেল? মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কাছ থেকে সরস উত্তর এল, ‘জীবনই আটকে গেছে। আর কাজ তো আটকে গেছেই।’ ফারুকী জানালেন, মার্চ মাসের শেষে নো ল্যান্ডস ম্যান–এর পোস্টপ্রোডাকশনের কাজে যাওয়ার কথা ছিল দুটো দেশে।

কচ্ছপের মতো চলছে সিনেমা

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ইকোর সম্পাদনা চলছে ফ্রান্সে, ফিচার ফিল্ম আমার কলোনির পোস্টপ্রোডাকশনের কাজ চলছে ভারতে। ট্রি অব নলেজ–এর শব্দ সম্পাদনার কাজে এই মার্চে যাওয়ার কথা ছিল ভারতে। তিনটা ছবিরই অন্যতম প্রযোজক আরিফুর রহমান জানালেন, তাঁদের সব কাজের গতি কমে গেছে। প্রামাণ্যচিত্র প্যারাডাইস–এর শেষ অংশের শুটিং হওয়ার কথা ছিল মার্চ ও এপ্রিলে। সেসবের কী হবে জানেন না এই প্রযোজক। কারণ, পরিচালক বিজন ইমতিয়াজ যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। আরিফ-বিজন প্রযোজিত আফগানিস্তানের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রোকাইয়া নির্বাচিত হয়েছিল ফ্রিবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। সেটিও ইতিমধ্যে বাতিল হয়েছে। পাঠানো হয়েছিল কয়েকটি উৎসবে। সেগুলোও পিছিয়েছে! 

নাটক

নাটক ও সিনেমার প্রযোজনার মতো দলগত কাজ বরাবরই জনসমাগমের মধ্যেই হয়। একটি শুটিংবাড়িতে ২০ থেকে ২৫ জন শিল্পী ও কুশলীকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। কিন্তু লোকে লোকারণ্য এসব শুটিংবাড়ির কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কতটুকু সচেতন? করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে তারকারা কতটা সচেতন লিখেছেন মনজুরুল আলম।

নতুন ঘোষণা

দেশের প্রায় ২২টি িবজ্ঞাপনচিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গতকাল ঘোষণা দিয়েছে, কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাসের বিস্তার কমাতে ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের শুটিং বন্ধ রাখা হবে। ১ এপ্রিল শুটিং শুরু করার ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

শুটিং বন্ধ রাখার কথা ভাবছেন মোশাররফ 

৫ / ৮
মোশাররফ করিম। ছবি: আনন্দ
মোশাররফ করিম। ছবি: আনন্দ

করোনাভাইরাস নিয়ে বিনোদনজগতের বাংলাদেশি তারকারাও বেশ চিন্তিত ও সচেতন। বেশির ভাগ তারকা ভিড় থেকে দূরে থাকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। অনেকেই বন্ধ করেছেন শুটিং। এর প্রভাব পড়েছে আসন্ন স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে নির্মিতব্য নাটক ও টেলিছবিগুলোয়। কিছুটা আতঙ্কিত হলেও তারকারা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের ও নিজের আশপাশের মানুষকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকেই আপাতত শুটিং বাতিল করেছেন, আর যাঁরা কাজ করছেন সেটে অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শুটিংবাড়ি ঘুরে জানা গেছে, সেখানে করোনা প্রতিরোধে আলাদা কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। তাই ব্যক্তিসচেতনতাই এখন নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায়।

ঈদের একটি সাত পর্বের ধারাবাহিক ও তিনটি একক নাটকের শুটিংয়ের জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল অভিনেতা মোশাররফ করিমের। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাসের কারণে সেই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এসেছেন তিনি। ডিকশনারি ছবির শুটিং শেষে কলকাতা থেকে ফিরে আপাতত কোনো শুটিং করছেন না মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘একটু সময় নিতে চাই। কিছু নাটকের শিডিউল আগে থেকে দেওয়া আছে, সেগুলো করব। নতুন করে শিডিউল দেওয়া নিয়ে সতর্ক অবস্থায় আছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সামনে আমাদের এখানকার অবস্থার ওপর ভিত্তি করে হয়তো শুটিং কিছুদিন বন্ধও রাখতে পারি।’

মাস্ক পরা নিশো, সাবিলার শুটিং বাতিল

৬ / ৮
শুটিংয়ে মাস্কের আড়ালে আফরান নিশো
শুটিংয়ে মাস্কের আড়ালে আফরান নিশো

আফরান নিশোকে দেখা গেল শুটিং সেটে একেকটি দৃশ্য ধারণের পরই মুখে মাস্ক পরে ফেলছেন। থাকছেন ভিড় থেকে দূরে। তিনি বলেন, ‘একটু আতঙ্কের মধ্যে আছি। পাবলিক প্লেস যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলছি। নিজ থেকেই সচেতন আছি। মাস্ক ব্যবহার করছি। হাত মেলানো থেকে দূরে আছি, ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলার ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থানে আছি।’

অভিনেত্রী মম বলেন, ‘সাবধানতা অবলম্বন করে শুটিং করছি। নিজ থেকে যতটা পারা যায় নিরাপদ থাকার চেষ্টা করছি।’ সাবিলা নূর ও মারিয়া নূর করোনোভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে তাঁদের ঈদ নাটকের শুটিং বাতিল করেছেন। ইনস্টাগ্রামে দেখা গেছে, সাবিলা বাড়িতে থেকেই অনলাইনে পড়াশোনা করছেন। তবে আপাতত শুটিং বাতিল না করে সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে শুটিং চালিয়ে যাচ্ছেন মেহ্জাবীন চৌধুরী, সাফা কবির, টয়া, তৌসিফ মাহবুব, জোভান, তাসনিয়া ফারিন প্রমুখ।

পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেবে শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশন

স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়ছে রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের পুবাইলের শুটিং বাড়িগুলোয়। সেখানে রাত–দিন ভিড় লেগেই আছে। সেই শুটিং বাড়িগুলো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কতটা সতর্ক জানতে চাইলে বাংলাদেশ শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম বলেন, ‘বাড়ির নিরাপত্তার জন্য এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ নেইনি। আমরা করোনা পরিস্থিতি কত দূর যায়, বুঝে উঠতে পারছি না। নিজেরাও ভয়ের মধ্যে আছি। প্রতি শিফটের শুটিংয়ে ন্যূনতম ৩০–৪০ জনের একটা টিম তো থাকেই। সবার জন্য কী ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটাই ভাবছি।’ 

ঢাকার উত্তরায় শুটিংবাড়ি রয়েছে প্রায় ১০টি। পুবাইলে আছে প্রায় ২০টি। বেশির ভাগ শুটিং হাউসের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত শুটিং হাউসগুলোয় ব্যস্ততা বেশি থাকে। যাঁরা এই শুটিংবাড়িগুলো চালান, তাঁদের একমাত্র আয়ের পথ এটাই। উত্তরার মন্দিরা শুটিং হাউসের মালিক মিন্টু মিয়া বলেন, ‘শুটিংবাড়ি নিরাপদ রাখতে আমরা কিছু ব্যবস্থার কথা ভেবেছি। আমাদের চাওয়া শুটিং হাউস যেন বন্ধ না হয়। তাহলে আমাদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে যাবে। অনেকে বেকার হয়ে যাবে।’ 

সংগীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গানের জগৎও ক্ষতিগ্রস্ত। কনসার্ট বাতিল হয়েছে, বাতিল হয়েছে শিল্পীদের বিদেশ সফর। আয়োজকদেরও আর্থিক ক্ষতি লাখ–কোটির কোটা ছুঁয়েছে। সেই লোকসানের হিসাব–নিকাশ ও শিল্পীদের সতর্ক অবস্থানের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

৭ / ৮
মমতাজ গানের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। ছবি: আনন্দ
মমতাজ গানের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। ছবি: আনন্দ

করোনা প্রভাব ফেলছে গানেও

করোনাভাইরাসের কারণে বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সংগীতাঙ্গন। করোনাভাইরাসের কারণে ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত সব ধরনের কনসার্ট বাতিল করেছেন মমতাজ। তিনি বাড়িতেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। সাংসদ হিসেবে নিজের নির্বাচনী এলাকার খোঁজখবর রাখছেন। চারটি কনসার্ট বাতিল করেছেন ইমরান। সতর্কতা মেনে চলতেই বাইরে খুব বেশি বের হচ্ছেন না। একই কারণে কোনো কনসার্টে অংশ নিচ্ছেন না কনা, ন্যান্​সি, আরমান আলিফ। এশিয়াটিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান সমন্বয়কারী ফারুক হোসেন বলেন, ‘কনসার্ট মানেই জনসমাগম। যার মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাস। পূর্বসচেতনতা হিসেবে আমরা প্রায় ১৪টির মতো কনসার্ট বাতিল করেছি।’

লোকসান কোটি কোটি টাকা

কথা হচ্ছিল ব্লুজ কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরহাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০–২৫ দিন ধরে এক এক করে তাঁদের সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের চুক্তি বাতিল হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে তাঁরা যে অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করছিলেন, এখন সবই প্রায় বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বলতে পারি, গত তিন দিন আমাদের প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার মতো চুক্তি বাতিল হয়েছে। আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানেরই এমন অবস্থা, আরও বড় অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা এর চেয়ে বেশি খারাপ।’ সামনের দিনগুলোয় এই ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কোন দিকে যাবে, তা নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। 

হোম কোয়ারেন্টিনে তাহসান 

৮ / ৮
জনসমাগম এড়াতে নাটকের শুটিং ও কনসার্ট বাতিল করেছেন তাহসান। ছবি: আনন্দ
জনসমাগম এড়াতে নাটকের শুটিং ও কনসার্ট বাতিল করেছেন তাহসান। ছবি: আনন্দ

সংগীতশিল্পী তাহসান সম্প্রতি বাতিল করেছেন তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় একাধিক কনসার্ট। ১ ও ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে ও আগামী ১১ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় একটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেটা করোনাভাইরাসের কারণে বাতিল করেছেন এই তারকা। আপাতত জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। বাতিল করেছেন ঈদ উপলক্ষে নির্মাণ হতে যাওয়া দুটি নাটকের শুটিংও। তাহসান বলেন, ‘এই সমস্যা এখন বৈশ্বিক। বুদ্ধিমান মানুষেরা বলছেন হোম কোয়ারেন্টিন জরুরি। তাই এ মুহূর্তে অযথাই বাইরে বের হচ্ছি না। আগামী বেশ কিছুদিন সব রকম কাজ থেকে দূরে আছি।’