হোম কোয়ারেন্টিনে অঞ্জন, প্রসেনজিৎ ও সৃজিতেরা

হোম কোয়ারেন্টিনে অঞ্জন দত্ত, সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার
হোম কোয়ারেন্টিনে অঞ্জন দত্ত, সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার

গত সোমবার অস্ট্রেলিয়া থেকে কলকাতায় ফিরেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা অঞ্জন দত্ত। পরদিন মঙ্গলবার ছিল ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। সেদিন রাতে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের এক দাওয়াতে অংশগ্রহণ করেন অঞ্জন দত্ত। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন আড্ডায়ও অংশ নেন। বিদেশ ফিরে এমন অবাধ বিচরণের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। একপর্যায়ে নিজেই ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে যান তিনি।

এদিকে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেই ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন ভারতীয় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেরাই এ তথ্য দিয়েছেন।

সংগীতশিল্পী ও চিত্রপরিচালক অঞ্জন দত্ত ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ হাইকমিশনের আমন্ত্রণে অনেক রাতে কয়েক মিনিটের জন্য গিয়েছিলেন। বিমানবন্দরে তিনি ও তাঁর গানের দলের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এরপরও তিনি আর গানের দলের সবাই আগামী ১৪ দিন নিজেদের গৃহবন্দী রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অঞ্জন দত্ত। ছবি: ফেসবুক থেকে
অঞ্জন দত্ত। ছবি: ফেসবুক থেকে

বিদেশ থেকে ফিরেই জনসমাগমে যাওয়া নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে অঞ্জন দত্ত বলেন, ‘সেদিন আমি কোনো লোকের সঙ্গে হাত মেলাইনি। যখন সেখানে যাই তখন ভিড় ছিল না। যাঁরা ছিলেন তাঁদের সঙ্গে দূর থেকে দেখা করেছি। খাইওনি। জাস্ট হাই বলে চলে এসেছি। আর যাওয়ার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়েছি। আমি কিন্তু যথেষ্ট রেসপনসিবল নাগরিক। তাই এখন সেলফ কোয়ারেন্টিনে।’

নিজেকে দায়িত্বপূর্ণ নাগরিক হিসেবে দাবি করে এই পরিচালক জানান, তিনি তাঁর সব শো বাতিল করেছেন। আর ১৪ দিনের আগে যেহেতু কোনো টেস্ট হবে না, সে ক্ষেত্রে গৃহবন্দী হয়ে থাকা ছাড়া তাঁর আর কিছু করার নেই।

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের জেরে ভারত সরকার অনুরোধ করেছিল বিদেশে থাকা সব মানুষকে দেশে ফিরে আসার জন্য। কারণ, ১৮ মার্চ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য থেকে কোনো ভারতীয় বা বিদেশি ভারতে ফিরতে পারবেন না—এমনটাই জানানো হয়েছিল নির্দেশে।

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা সবাই ভালোভাবে এসে গিয়েছি। যেহেতু বাইরে থেকে আসছি তাই বাড়ি ফিরে ৭ দিনের জন্য বাকি সবার থেকে নিজেকে আলাদ রাখব। আমার ছেলেও লন্ডন থেকে ফিরে এসেছে। এখন কথা হয়নি ওর সঙ্গে, তবু সবাই ভালো আছে। সরকার যা যা বিধি–নিষেধ দিয়েছে, তা মেনে চলার চেষ্টা করছি।’

দক্ষিণ আফ্রিকাতেও জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। সেখান থেকে ফিরে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় জানান, আফ্রিকার জোহানেসবার্গে আর এক দিনের শুটিং বাকি ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট শিডিউলের আগে শেষ করা গেছে ‘কাকাবাবু’র শুটিং। সৃজিত বলেন, ‘শুটিংটা শেষ করেই এলাম, এটা ভালো খবর। বিদেশ থেকে এসেছি, তাই নিজে ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকব। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনেই সব নিয়ম পালন করব।’

আফ্রিকায় সৃজিত মুখোপাধ্যায় । ছবি: ফেসবুক থেকে
আফ্রিকায় সৃজিত মুখোপাধ্যায় । ছবি: ফেসবুক থেকে

সৃজিত জানান, এ ছবির বেশির ভাগই শুট হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’ গল্প অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে এবারের ‘কাকাবাবু’ সিরিজ।

এর আগের দিন লন্ডনে শুটিং ফেলে হঠাৎ করে দেশে ফিরেছেন অভিনেত্রী ও সাংসদ মিমি চক্রবর্তী এবং অভিনেতা জিৎ। বিমানবন্দরে নেমেই কর্তৃপক্ষের করোনা-সংক্রান্ত সব ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের দুজনকে। সব পরীক্ষায় পাস করেই তাঁরা বিমানবন্দর ছেড়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে উভয়েই জানিয়েছেন, সরকারি নিয়ম মেনে ১৪ দিনের জন্য তাঁরা বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মঙ্গলবার কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তারকা ও সাংসদ মিমি চক্রবর্তী বলেন, ‘যেহেতু ব্রিটেন থেকে আসছি, তাই বাড়ি ফিরে সাত দিনের জন্য নিজেকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখব। মা-বাবাকেও ফোন করে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতে বারণ করেছি। আমার বাবার বয়স ৬০ বছরের ওপরে।’

ইতিমধ্যে নিরাপত্তার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে টেলিপাড়ার শুটিং। বুধবার থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত টালিগঞ্জের সব শুটিং বন্ধ থাকবে। ভারতে করোনার থাবা ক্রমেই বাড়ছে। বুধবার সকালে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬৯।