করোনায় ইউটিউবে কমেছে ,অন্য স্ট্রিমিংয়ে দর্শক বেড়েছে

কণ্ঠ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
কণ্ঠ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ঘরে বসে তাঁরা উপভোগ করছেন অনলাইনে থাকা বিনোদনের বিচিত্র সব ভিডিও কনটেন্ট। সেসব কনটেন্ট উপস্থাপনায় এগিয়ে রয়েছে নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স, বায়োস্কোপ, বঙ্গ, হইচই, জি-ফাইভের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো। অন্যদিকে নতুন মানসম্পন্ন কনটেন্ট না থাকায় কমতে শুরু করেছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের দর্শক।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর পথ এখন বাড়িতে থাকা। সচেতন মানুষেরা নিজ ও আশপাশের নিরাপত্তার জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত এ অবসরে তাঁদের সঙ্গী হয়ে উঠেছে অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো। গত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বের বড় বড় ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সাইটে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে দর্শকের চাপ। একই সঙ্গে দর্শক বেড়েছে দেশি প্ল্যাটফর্মগুলোতেও, যা চার-পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ।

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়েলসনের এক প্রতিবেদন বলছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই স্ট্রিমিং সাইট নেটফ্লিক্সের ১৩ শতাংশ দর্শক বেড়েছে। একই অবস্থা ভারতেও। সেখানে দেশজুড়ে চালু আছে প্রায় ৩০টি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। নেটফ্লিক্স, হটস্টার, আমাজন প্রাইম ভিডিওর মতো বড় সাইটগুলোর দর্শক ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

কাঠবিড়ালির পোস্টার । ছবি: সংগৃহীত
কাঠবিড়ালির পোস্টার । ছবি: সংগৃহীত

বদলেছে বাংলাদেশের চিত্রও। এখানে বায়োস্কোপ, বঙ্গ, হইচই, আইফ্লিক্স ও জি-ফাইভের বাংলা কনটেন্টের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে দর্শকের। গ্রামীণফোনের স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপে দেখানো হয় বাংলা খবর। এক সপ্তাহ হলো সেখানে দর্শক বেড়েছে। পাশাপাশি দেশি নাটক-সিনেমা তো আছেই। গ্রামীণফোনের ডিজিটাল কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজির প্রধান জাকী আদনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বায়োস্কোপে দেশি টিভি চ্যানেলগুলো বিনা মূল্যে দেখা যায়। সেখানে গত কয়েক দিনে প্রচুর দর্শকের উপস্থিতি আমরা লক্ষ করেছি।’

হইচইয়ের বাংলাদেশ অংশের বিজনেস লিড সাকিব আর খান জানান, আগে থেকেই নতুন সব প্রযোজনা মুক্তির পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। এই সময়ে যেহেতু অনেকেই বাড়িতে থাকছেন, তাই প্রচুর নতুন দর্শক পাচ্ছেন তাঁরা। সাকিব বলেন, ‘গত এক-দেড় সপ্তাহে হইচইয়ে দর্শক বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ।’ তাঁদের ধারণা, এ প্ল্যাটফর্মে চাপ আরও বাড়বে।

দেশি কনটেন্টের পাশাপাশি বিদেশি প্রযোজনা নিয়েও কাজ করে আইফ্লিক্স। শিগগির বেশ কিছু আলোচিত বিদেশি সিরিজ অবমুক্ত করবে তারা। এই প্ল্যাটফর্মের মার্কেটিং কমিউনিকেশন ম্যানেজার ওয়াসিফ খান বলেন, ‘আলোচিত কিছু কোরীয় ছবি আমরা মুক্তির পরিকল্পনা করেছিলাম। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিরিজগুলোর মুক্তি এগিয়ে এনেছি।’

প্রীতি ওয়েব ফিল্মের দৃশ্যে পরীমনী । ছবি: সংগৃহীত
প্রীতি ওয়েব ফিল্মের দৃশ্যে পরীমনী । ছবি: সংগৃহীত

গত বছর বাংলাদেশের বাজারে ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করেছে ভারতীয় জি নেটওয়ার্কের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি-ফাইভ। গত এক সপ্তাহে তাদেরও লক্ষণীয় মাত্রায় দর্শক বেড়েছে। জি-ফাইভ গ্লোবালের চিফ বিজনেস অফিসার অর্চনা আনন্দ জানান, শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার বিস্তার রোধে ঘরে থাকা দর্শকেরা অনলাইন প্রযোজনানির্ভর হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ করে তাঁদের সাবস্ক্রাইবার বেড়ে গেছে।

দেশি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বঙ্গর হেড অব কনটেন্ট ভাস্কর আবেদীন জানান, সপ্তাহে নিয়মিত একটি করে নতুন নাটক তাঁরা বিনা মূল্যে মুক্তি দেন, সেটা অব্যাহত আছে। তাঁদের এই নিয়মিত আয়োজনেই তাঁরা সাড়া পাচ্ছেন আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

অন্যদিকে ইউটিউবে দর্শক হারাচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেলগুলো। অনুপম মুভিজের ইউটিউবে ১৬ লাখের ওপরে গ্রাহক। অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়ার কর্ণধার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করোনা-আতঙ্কে মানুষ ইউটিউবে ঢুকছেন কম। সংবাদে তাঁদের মনোযোগ। আমাদের চ্যানেলে দর্শক কমেছে। আগের মতো রমরমা অবস্থা নেই।’ সঙ্গীতার কর্ণধার সেলিম খান জানান, প্রায় ৩৬ লাখ গ্রাহক থাকলেও তাঁদের ভিউ একেবারেই কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছ থেকে জানা যায়, তুলনামূলকভাবে নাটক-সিনেমার দর্শক কমছে। তবে মিউজিক ভিডিও এবং অডিওর দর্শক কমছে আরও বেশি। কারণ হিসেবে তাঁরা দেখছেন নতুন কনটেন্টের অভাবকে। করোনার কারণে প্রডাকশন কমেছে। নতুন কনটেন্ট উন্মুক্ত হচ্ছে কম। ফলে দর্শকও পাওয়া যাচ্ছে কম।