'আমাকে দুটি ফুলটাইম চাকরি করতে হচ্ছে'

মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

‘অপারেশন ব্লিটজ’ ও ‘অপারেশন সার্চলাইট’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘একাত্তর’। এই সিরিজে সাংবাদিক রুহি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। বৃহস্পতিবার থেকে হইচই প্ল্যাটফর্মে প্রচার শুরু হয়েছে এই ওয়েব সিরিজের। কাজটিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে গত বুধবার বিকেলে ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে কথা বললেন তিনি।

ওয়েব সিরিজ ‘একাত্তর’ নিয়ে বলুন...
পাকিস্তানের একাধিক সামরিক কর্মকর্তার বইতে ‘অপারেশন ব্লিটজ’ নামে একটি সামরিক পরিকল্পনার উল্লেখ আছে। কিন্তু কোনো কারণে বাতিল হয়ে যায় এই পরিকল্পনা। শেষ পর্যন্ত অপারেশন ব্লিটজ বাতিল করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। ইতিহাসের সেই সব অধ্যায় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ওয়েব সিরিজ ‘একাত্তর’। গল্পটি নতুন কোনো গল্প নয়।

শুটিং কোথায় করেছেন?
পরিচালক, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে কলাকুশলী—সবই আমাদের দেশের। পুরো শুটিংও করেছি এখানেই। আট পর্বে ওয়েব সিরিজটি শেষ হবে।

‘একাত্তর’ ধারাবাহিকে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমার কাছে এটি ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। এই ওয়েব সিরিজে আমি পাকিস্তানি একজন মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। তার ওপর আমি একজন সাংবাদিকও। পুরো সিরিজে ইংরেজি আর উর্দুতে সংলাপ বলতে হয়েছে। এ ধরনের চরিত্রে প্রথমবার কাজ করেছি। আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল, আবার মজারও ছিল। পরিচালকের সহযোগিতায় সংলাপ নিয়ে অনেক মহড়া করতে হয়েছে। আমি হিন্দি কিছুটা বলতে পারলেও উর্দু একেবারেই পারি না। অনেক প্র্যাকটিস করেছি। অনেক সময় গুগল ট্রান্সলেটরের সহযোগিতাও নিয়েছি। আমি আসলেও জানি না, কোনো ভুলত্রুটি হয়েছে কি না। আমার সংলাপে যদি কোনো ভুলত্রুটি থাকে সবাইকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।

স্বামী সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
স্বামী সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এত দিন সাংবাদিকের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। এবার সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কি এই অভিজ্ঞতা কোনো কাজে এসেছে?
এটা ঠিক, পেশার কারণে আমাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। অনেকের সঙ্গে আমার পরিচয়ও আছে। বন্ধুদের কেউ কেউ সাংবাদিক। আমি একটা বিষয় দেখেছি, সাংবাদিকেরা সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান। এটা সাংবাদিকদের খুব সহজাত চরিত্র। সাংবাদিকদের সাহসী হতে হয়। আশপাশের সাংবাদিকের কাছ থেকে যা দেখেছি, এই চরিত্রে তা আছে।

পুরো পৃথিবী করোনা আতঙ্কে থমকে আছে। আপনিও ঘরে ঢুকে গেছেন...
করোনার দিনে বাসায় থেকে আরও বেশি কাজ করতে হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক কিন্তু করোনা সচেতনতায় অনেক বেশি কাজ করছে। সে কারণে আমাদের আসলে ২৪/৭ কাজ করতে হচ্ছে। অফিসের কাজে আমার লাইবেরিয়া ও তানজানিয়া যাওয়ার কথা ছিল। করোনার জন্য বাতিল হয়ে গেছে।

আপনার স্বামী সৃজিত তো আফ্রিকায় ছিলেন...
ছবির কাজে সৃজিতকে আফ্রিকা যেতে হয়। ফিরে এসে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছে। ভেবেছিলাম, আমার যেহেতু অফিসের কাজে বাইরে যাওয়া বাতিল হয়েছে, তাই ভারতে স্বামীর সঙ্গে কাটানো যাবে। এরই মধ্যে ভারতকে লকডাউন করা হয়েছে। সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। নিয়মিত কথা হচ্ছে। ভিডিও কলে কথা বলছি। আমি কী করছি, সে কী করছে জানতে পারছি। আয়রা কী করছে খোঁজ নিচ্ছে। সারা দিনই কথাবার্তা হচ্ছে।

আপনি আফ্রিকার যেখানে কাজ করতেন সেখানে কী অবস্থা?
করোনাভাইরাস সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন একটা ভাইরাস যার কোনো ওষুধ নেই, টিকাও নেই। একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ। নিজেকে প্রটেক্ট করে রাখা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবাই বলছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। করোনা থেকে বাঁচার আর কোনো বিকল্প নেই। আমি আফ্রিকার যেসব দেশে কাজ করেছি, তার মধ্যে তানজানিয়ায় একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত পাওয়া গেছে। সঙ্গে সঙ্গে সব লকডাউন করে দিয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জনসংখ্যা বেশি। তাই আমাদের নিজেদের সচেতনতা বেশি জরুরি। সচেতন হয়ে নিজেদের বাড়িতে থাকতে হবে।

ঘরে বসে কাজ করছেন ও মেয়েকে পড়াচ্ছেন মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ঘরে বসে কাজ করছেন ও মেয়েকে পড়াচ্ছেন মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আমাদের দেশে জনসমাগম আজও (বুধবার) দেখা গেছে...
সারা পৃথিবীতেই কিন্তু জনসমাগমের ব্যাপারটি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পৃথিবীর বড় বড় চিকিৎসকেরা সচেতনতার জন্য ভিডিও বানাচ্ছেন। একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা। সাধারণ মানুষকে এটা বোঝাতে হবে। আমাদের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ শিক্ষিত না। তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। সবাইকে সবার অবস্থান থেকে বোঝাতে হবে। আমাদের যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, করোনা যদি জটিল আকার ধারণ করে, সামাল দেওয়া বেশ কষ্টকর হবে। বিশাল পরিমাণে আক্রান্ত হবে, মৃত্যুহারও হবে অনেক—সেটা খুবই ভয়ংকর।

পয়লা বৈশাখ ও ঈদের জন্য নাটক আর টেলিছবির শুটিং করেছেন কি?
বাংলা নববর্ষ আর ঈদের কোনো নাটক কিংবা টেলিছবির কাজ করার সুযোগ হয়নি। আমার মনে হয়, অন্য অনেকেই করতে পারেননি। যাঁরা অনেক আগে শুটিং করেছেন সেটা ভিন্ন কথা। আমরা জানি না, সামনে কবে কাজ শুরু করতে পারব।

ঘরে সময় কাটাচ্ছেন কীভাবে?
বলতে গেলে এখন আমাকে দুটি ফুলটাইম চাকরি করতে হচ্ছে। একটা অফিসের, আরেকটা বাসায় মেয়ের চাকরি। ঘুম থেকে ওঠে আমি মেয়ের ব্রেকফাস্ট তৈরি করে ওর পড়ালেখার জন্য প্রস্তুতি নিই। এরপরও আছে খাওয়ানো, গোসল করানোর কাজ। বাসা আর অফিসের কাজ করে কুলাতে পারছি না।

যাঁরা ঘরের মধ্যে আছেন, তাঁদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?
নারী-পুরুষ যাঁরাই বাসায় আছেন, সবার একটা রুটিন করা উচিত। হঠাৎ করে সবাই যেহেতু ঘরবন্দী, হতাশ লাগতে পারে। আমি বলব, বই পড়তে পারেন, সিনেমা দেখতে পারেন, গানও শুনতে পারেন। আমার ভাই গিটার বাজায়, আমার বোন গল্পের বই পড়ছে, সিনেমা দেখছে। আমরা সাধারণত এ ধরনের কাজের সুযোগ পাই না। সবাই এত ব্যস্ত থাকি, সময়ও পাই না। তাই এসব করে সময় কাটিয়ে দিতে পারি। একই সঙ্গে যার যার অবস্থান থেকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজ করতে পারি। বাড়িতে বসে থাকলে ব্যায়ামটাও যেন করি। ব্যায়ামে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়। তাই আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসক, পুলিশ, আর্মি, সাংবাদিকসহ যাঁরা এই দুর্যোগের মধ্যে কাজ করছেন, তাঁরাও সাবধানে থাকবেন, প্লিজ।