'করোনাভাইরাস দাওয়াত দিয়ে ঘরে আনছি'

ফেরদৌস। ছবি–সংগৃহীত
ফেরদৌস। ছবি–সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার কিন্তু বেশি না। মারা যাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ব্যক্তিরা। যাঁদের আরও রোগ আছে এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল। এ কারণে আমি বলছি, যারা লকডাউনের পরও বাইরে যাচ্ছি, তারাই বাইরে থেকে করোনাভাইরাস দাওয়াত দিয়ে ঘরে আনছি।’ কথাগুলো চিত্রনায়ক ফেরদৌসের।

‘হঠাৎ বৃষ্টি’খ্যাত চিত্রনায়ক ফেরদৌস জানান, করোনাভাইরাস কিন্তু দরজা ধাক্কা দিয়ে কারও ঘরে ঢুকছে না। যাঁরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁরাই করোনাকে দাওয়াত দিয়ে ঘরে আনছেন। তবে যাঁদের নিতান্তই বাইরে যেতে হচ্ছে, তাঁরা যেন ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে জীবাণুমুক্ত করে নেন। বাসায় ঢোকার পর বাথরুমে গিয়ে ভালোমতো গোসল করে নিন। পরনের কাপড়চোপড় ধুয়ে নিন। আর প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাইরে না যান।

অন্য অনেকের মতো ফেরদৌস করোনাভাইরাস নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। নিজের দেশের মানুষ এখনো করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে না পারাটাই তাঁর উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ। বিশ্বব্যাপী সবাইকে যেখানে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় লোকজন ঘুরে বেড়ানোর খবর জানতে পেরে চিন্তিত এই নায়ক। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে প্রায়ই দেখতাম, সবাই ফেসবুকিং করছে। এখন অনন্ত ১০টা দিন তোমরা ঘরে বসে ফেসবুকিং করো না। একই সঙ্গে টেলিভিশন দেখো। বই পড়ো। যার যেটাতে আনন্দ সেটাই করো। আরেকটা বিষয়, চেষ্টা করো নিজেদের হারিয়ে যাওয়া অভ্যাস ফিরিয়ে আনার। পরিবারের মধ্যে মা–বাবা, ভাইবোন সবার সঙ্গে বসে গল্প করো। আত্মীয়–পরিজন ও বন্ধুদের ফোনে খোঁজ নাও। আমি মনে করি, আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে যদি এই ব্যাপারগুলো ১০-১৫ দিন ঘরে বসে করতে পারি, তাহলে হয়তো করোনা পরিস্থিতি একটা স্থিতিশীলতার মধ্যে আসবে। তা নাহলে যেভাবে সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে, চারদিকে বাজেভাবে ছড়িয়ে পড়বে।’

ফেরদৌস জানান, করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার অনেক কম হলেও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যাঁরা বাইরে আড্ডা দিচ্ছেন, তাঁদের কারণে ঘরে থাকা বয়োবৃদ্ধরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। কিন্তু সবাইকে এটাও বুঝতে হবে, এই সময়ে করোনায় একজন জ্যেষ্ঠ লোক মারা গেলে, তাঁকে কবর দেওয়ার মতো লোকও পাওয়া যাবে না। সবাই কিন্তু একটা শঙ্কার মধ্যে আছে। শিক্ষিত ব্যক্তিদেরই অনেকেই তা বুঝতে পারছেন না। সাধারণ মানুষের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। সাধারণ মানুষকে আরও সাবধান হতে হবে। আমাদের সবার বোধেরও তো উন্মেষ ঘটাতে হবে।

ফেরদৌস বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বিদেশ থেকে অনেকেই বাংলাদেশে এসেছেন। আমরা সবাই জানি, প্রবাসে তাঁরা সবাই অনেক কষ্ট করেন। এই প্রবাসীরা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখেন। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে প্রবাসীদের মাধ্যমে। আপনাদের সবার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। কথা হচ্ছে, আপনারা সবাই কষ্ট করে দেশে এসেছেন পরিবার–পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে। কিন্তু আপনাদের তো বাজারে গিয়ে আড্ডা মারার কোনো দরকার নেই। কারণ, সময়টা যে স্বাভাবিক সময় না। এই সময়ে ঘরে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। তবেই করোনাভাইরাস খুব একটা ছড়াতে পারবে না।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ১০ দিন ধরে বাসায় সময় কাটাচ্ছেন ফেরদৌস। মায়ের সঙ্গে গল্প করে যেমন সময় কাটছে, তেমনি দুই মেয়েকেও অফুরন্ত সময় দিচ্ছেন। ফেরদৌস বলেন, ‘২০ বছরের অভিনয়জীবনে অনেক দেশে গিয়েছি। অনেক সিনেমা আর বই কিনে এনেছি। কাজের কারণে এগুলো পড়ার কিংবা দেখার সময় খুব একটা পাইনি। এখন সিনেমাগুলো দেখছি আর বই পড়ছি। কারণ, এমন সময় তো আগে পাইনি।’