জয়ার হাতে ভাত-মুরগি খাচ্ছে এলাকার কুকুর

জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে
জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে

‘আপনি নাকি নিজের হাতে রেঁধে–বেড়ে পথকুকুরদের খাওয়াচ্ছেন?’

‘কে বলল এসব? প্লিজ, এসব নিয়ে নিউজ হোক, আমি তা চাই না। এটা আমার একান্ত ভালোবাসার কাজ। প্রচারের কোনো বিষয় এটা নয়।’

বিষয়টা নিয়ে কথা বলানোর জন্য জয়া আহসানকে রাজি করাতে কিঞ্চিৎ বেগই পেতে হল। ১১ দিন আগের কথা। হোম কোয়ারেন্টিনের দ্বিতীয় রাতে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন জয়া। এলাকার কুকুরগুলো কাঁদছে। তাই শুনে জয়ার ‘সবচেয়ে লক্ষ্মী বোন’' ক্লিও (পোষা কুকুর) হয়ে উঠল অস্থির। ওদের মৈত্রী তো অসাধারণ। পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রিজ থেকে মুরগি বের করলেন জয়া। মাংস-ভাত রেঁধে উঠলেন রিক্সায়। ঘুরে ঘুরে খাওয়ালেন প্রায় ৪০-৫০টি কুকুরকে (জয়া অবশ্য বললেন, ‘৪০-৫০ জন’)।

এলাকায় হোটেল–রেস্তোরাঁর কপাট বন্ধ। উচ্ছিষ্ট খাবার ‘নেই’ হয়ে গেছে। তাই হঠাৎই অভুক্ত হয়ে পড়েছে কুকুরগুলো। এবার খেল পেটপুরে, একেবারে নায়িকার হাতে। আজ পর্যন্ত ১০ দিন এভাবেই চলছে।

প্রথম দিন কুকুরদের খাবার দিতে পিয়ে দেখতে পেলেন পাড়ার দু–তিনজন অভুক্ত মানসিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক খালি প্লেট আর খালি পেট নিয়ে নির্বিকার বসে আছেন রাস্তায়। মাকে বললেন, একটু বেশি করে চাল দিতে। সেই ভাত–তরকারি প্যাকেটে ভরে নিজেই খাওয়ালেন ওদের। জয়া প্রাণী অন্ত প্রাণ। তারপর থেকে প্রতিদিন এভাবেই চলছে।

কুকুরকে খাওয়াচ্ছেন জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে
কুকুরকে খাওয়াচ্ছেন জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় ওঠেন জয়া। নিজের হাতে কুকুরদের জন্য রান্না করেন। সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘড়ির কাটা বেলা ২টা পার করলে রিক্সা নিয়ে বের হন পথে। শুরুতে যে বাটিগুলোতে কুকুরের খাবার পানি রাখতেন, সেসব চুরি হয়ে যেত। তাই কালো মার্কার দিয়ে লিখে দিয়েছেন, ‘কুকুরের খাবার পানি। হাত দেবেন না’। সেটা কাজে দিয়েছে।

অন্য কাউকে দিয়েও তো খাবার পাঠাতে পারেন। ‘কাকে বলব এই সময়ে? যাঁকে বলব, তাঁর জীবনই তো ঝুঁকিতে ফেলা। তাই নিজেই গ্লাভস আর মাস্ক পরে বের হই।’

এ সময়ে কিছু কথা লিখে সবাইকে জানাতে অনুরোধ করেন জয়া। কী সেই কথা? শোনা যাক জয়ার মুখেই। ‘আমরা আত্মগর্ব করে বলি, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু প্রাণী আর পরিবেশের প্রতি আমাদের নিষ্ঠুরতা সীমাহীন। আমরা বন উজাড় করছি। বহু প্রাণী বিলুপ্ত করেছি। কিন্তু পৃথিবীর জন্য তো সৃষ্টির এই বৈচিত্র্যের প্রয়োজন আছে। মানুষ তো প্রকৃতিরই সন্তান। এ বোধোদয় আমাদের কবে হবে?’ বলতে বলতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল জয়ার কণ্ঠ।

জয়া বললেন, ‘বিড়াল বা কুকুর থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এমন তথ্য তো আসেনি। লকডাউনের সময় ইতালিতে পোষা কুকুরকে পথে হাঁটাতে একজন করে মানুষকে বেরোনোর ছাড় দেওয়া হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগে ঢাকায় এক বিদেশী নাগরিকের পোষা কুকুরকে খুঁটিতে বেঁধে পিটিয়ে মারা হলো।’ এসবে খুব দুঃখ পৌঁছায় জয়ায় হৃদয়ে। তিনি বললেন, ‘প্রাণীদের প্রতি আমাদের আচরণ অসম্ভব রূঢ়। লোকালয় ছাড়া কুকুর বাঁচতে পারে না। আমাদের কিছুটা খাবার বা খাবারের উচ্ছিষ্টটুকু বাইরে রেখে দিলে ওরাও কিছুটা খেতে পায়।’

আর কী করছেন তিনি এখন—সিনেমা দেখছেন, বই পড়ছেন, ব্যয়াম করছেন? উত্তরে জানালেন, এসব কিছুই করছেন না জয়া। কোয়ারেন্টিনের শুরুর দিনগুলোতে অনেক সিনেমা দেখেছেন। বই পড়েছেন। এখন নাকি এসব কিছুতেই আর মন বসছে না তাঁর। কেমন অস্থির লাগছে।

তবে এ বিপদ নিশ্চয়ই কাটবে। তখন আবার সব গুছিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফেরার আশায় দিন গুনছেন জয়।