রুটি, মুড়ি, কলা খেয়ে থাকতে হচ্ছে

মেকআপ সহকারী সাইফুল ইসলামের সেলফিতে নায়িকা মাহিয়া মাহি। ছবি: সংগৃহীত
মেকআপ সহকারী সাইফুল ইসলামের সেলফিতে নায়িকা মাহিয়া মাহি। ছবি: সংগৃহীত

‘ভাই, শুটিং নাই, তা বাড়ির লোক বুঝতাছে না। বাড়ি থেকে টাকা চাইতাছে। কোনো টাকা পাঠাইতে পারতাছি না। ছোট ছেলের জন্য দুধ কিনতে হবে, টাকা চাইতাছে। অহন কী করমু ভাই, বুঝতাছি না। আমার নিজেরই বাড়ি যাবার ভাড়ার টাকা নাই। দুঃখে কান্না আসতাছে। কেউ সাহায্য করতেছে না।’ একজন আলোক সহকারী রুবেল হোসেনের কথা এটি।

শুটিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের ভাগ্য। শুটিং শেষে পাওয়া মজুরি দিয়ে সংসার চালান তাঁরা। করোনাভাইরাসের কারণে শুটিং এখন বন্ধ। থেমে গেছে স্বল্প আয়ের এই সব মানুষের স্বাভাবিক জীবন। শুটিংয়ে ক্যামেরার পেছনে কাজ করা আলোক সহযোগী, রূপসজ্জাকারী, প্রডাকশন বয়, চিত্রগ্রহণ সহকারী, ট্রলিচালকসহ ব্যবস্থাপনার কাজে জড়িত দৈনিক মজুরির মানুষেরা এখন পড়েছেন সমস্যায়। শুটিং না থাকার কারণে থমকে গেছে তাঁদের আয়ের চাকা।

তানজিন তিশার সঙ্গে প্রডাকশন বয় মেরাজ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
তানজিন তিশার সঙ্গে প্রডাকশন বয় মেরাজ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

আলোক সহকারী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘ভাই করোনাভাইরাস আমাদের জীবন একবারে থামায়া দিছে। কাজ নাই, মাথায় হাত দিয়ে ঘরে বসে আছি। খাবার খাচ্ছি কম কম। আজ আবার শুনলাম ১১ এপ্রিল পর্যন্ত শুটিং বন্ধ থাকবে, এটা শোনার পর আরও চিন্তা বাইড়া গেছে। অন্য কাজও করতে পারতেছি না, সবই বন্ধ।’

প্রায় আট–নয় বছর ধরে রূপসজ্জাকারী হিসেবে কাজ করেন পেয়ার আহমেদ। তিনি নিজ জেলা বগুড়া থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের কোনো ধরাবাঁধা বেতন নেই। দিন এনে দিন চলতাম। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ ভাবে, আমরা বিনোদন জগতে কাজ করি, আমাদের অনেক টাকা। কিন্ত কেউ জানে না, আমার সাত–আটজনের পরিবার নিয়ে এখন কতটা আর্থিক সংকটে আছি। আমার বাড়ি ভাড়া দেওয়ার টাকা নাই, চাল–ডাল কেনার টাকা পর্যন্ত নাই। কাউকে কিছু বলতে পারছি না। বাড়ি থেকে লজ্জায় বের হতে পারি না। কারও কাছে টাকাও চাইতে পারি না। কাজ বন্ধ হয়ে এখন জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

পূর্ণিমার সঙ্গে হাসিব মোল্লা নামের একজন প্রডাকশন সহকারী। ছবি সংগৃহীত
পূর্ণিমার সঙ্গে হাসিব মোল্লা নামের একজন প্রডাকশন সহকারী। ছবি সংগৃহীত

প্রডাকশন সহকারী হিসাবে আট বছর কাজ করেন একরাম হোসেন। ঢাকায় থাকলে খাবারের চিন্তা করতে হবে, তাই শুটিং বন্ধ হলে তিনি গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী চলে যান। তিনি বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি ভাই। কাজ নাই। খায়া না–খায়া দিন যাচ্ছে। প্রতিদিন ঢাকায় খবর নিচ্ছি, কেউ কাজ করবে কি না।’

সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন সাগর হোসেন। তিনি বলেন, ‘একটা নাটকে শুটিং করে ৫০০ থেকে হাজার টাকা পাইতাম। মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে চলি। যা আয় হতো, সবই খরচ হয়ে যেত। এখন করোনার কারণে ঘরে রুটি, মুড়ি, কলা খেয়ে থাকতে হচ্ছে। কেউ সহযোগিতাও করছে না। বাড়ি যাবারও কোনো উপায় নেই।’

তাহসান খানের সঙ্গে সাদ্দাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
তাহসান খানের সঙ্গে সাদ্দাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

শুটিংয়ে ট্রলি চালান মোহাম্মদ শুকুর মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো কোনো অর্থ–সম্পদ নাই। বাজারঘাটে চলতে সমস্যা হয়। তিন দিন ধরে আমার পরিবার চালাতে সমস্যা হচ্ছে। শুটিং না শুরু হলে কোনো কূলকিনারা দেখতে পাচ্ছি না। সংসারে এমনিতেই অভাব, তার ওপর বেকার।’

দর্শকেরা ছোট ও বড় পর্দায় যে গল্প দেখে আনন্দিত হন, তা তৈরির পেছনে এই মানুষগুলোর ঘাম ঝরে প্রতিনিয়ত। কিন্তু তাদের এই অবস্থায় এগিয়ে আসছে না কেউ খুব একটা। স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলো ভালো নেই। মিরাজ হোসেন, হাসিব মিয়া, বাবলু, আকাশের মতো অনেকেই অপেক্ষা করছেন, কবে শুরু হবে শুটিং।