ডিপজল ভাই, জলিল ভাই কারও সাহায্য পাইলাম না

নায়িকা পূজা চেরির সঙ্গে আরজিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।
নায়িকা পূজা চেরির সঙ্গে আরজিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

‘শুনলাম ডিপজল ভাই, অনন্ত জলিল ভাই নাকি আমাগো পাশে দাঁড়াইছে, সবাইকে সাহায্য করতেছে। কই আমরা তো কিছু পাইলাম না। সারা দিন বাসায় ফোন হাতে নিয়া বসে ছিলাম, কেউ ফোন দিব। অথচ ৪-৫ দিন হয়া গেল কেউ ফোন দিল না, খবরও নিল না। ডিপজল ভাই, অনন্ত জলিল ভাই কারও সাহায্যই পাইলাম না।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন চলচ্চিত্রের এক্সট্রা চরিত্রের অভিনেত্রী আরজিনা বেগম।

প্রায় ১০ বছর ধরে মিডিয়ায় এক্সট্রা চরিত্রে অভিনয় করেন আরজিনা বেগম। সিনেমায় এই শিল্পীরা নায়ক-নায়িকাদের থেকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন। কখনো মিছিল-মিটিং করতে দেখা যায়, কখনো ক্যামেরার ফ্রেমের ভেতরেই বেশ দূর থেকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। বেশির ভাগ ছবিতে তাঁদের কোনো সংলাপ থাকে না। এই শিল্পীরা আয় করতেন দিনে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কখনো কিছুটা বেশি। করোনার কারণে শুটিং বন্ধ হয়ে তাঁদের সেই আয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের মতো অসহায় হয়ে পড়েছে আরজিনার পরিবারও। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘কত দিন হইল শুটিং বন্ধ, কাজ-কাম নাই। আবার শুনতাছি অনেক দিন বন্ধ থাকব। অহন ৬-৭ জনের সংসার নিয়া কী করুম, কিছুই বুঝে উঠতে পারতেছি না। শুটিং আরও কিছুদিন বন্ধ থাকলে জীবনই চালাইতে পারুম না। প্রতিদিন খাওয়ার জন্য এত টেনশন করা যায়? কাজ থাকলে তা–ও “দিন আনি দিন খাই”–ভাবে চলে যায়।’

বাসায় আরজিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।
বাসায় আরজিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

আগে নিয়মিত অভিনয় করলেও ছবিতে এক্সট্রা চরিত্র দিনদিন ছাঁটাই করা শুরু হলে কাজ কমতে থাকে এই শিল্পীদের। আরজিনা তখন সংসার চালানোর জন্য অভিনয়ের পাশাপাশি কস্টিউম ডিজাইনারের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আরজিনার একার আয় দিয়েই চলে পুরো পরিবার। পরিবারের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খাওয়া-দাওয়া নিয়া খুবই সমস্যায় আছি। একা পরিবার চালাই। পরিবারের সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজও নাই, টাকাও নাই। প্রতিদিন দোকান থেকে বাকিতে চাল কিনে আনছি। এই কদিনে ৬-৭ হাজার টাকা বাকি হয়ে গেছে। এত টাকা বাকি, তারপর ঘরভাড়া ২ মাসে ৯ হাজার টাকা কীভাবে শোধ করব বুঝতে পারছি না।’

পুলিশ চরিত্রে আরজিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।
পুলিশ চরিত্রে আরজিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

আরজিনা বলেন, ‘একটা মানুষের আয় দিয়ে পাঁচটা মানুষকে যত কমই খাওয়াই না কেন, কাজ না থাকলে কীভাবে খাওয়াব? এই সব নিয়ে বিশাল সমস্যায় আছি। এই সময়ে কেউ সাহায্য করতেছে না। কেউ ফোন দিচ্ছে না। কাউকে ফোন দিলে পাই না। ফোন ধরে না। ধার চাইলেও কারও কাছে পাচ্ছি না। এই অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়ারও কোনো উপায় নেই। বের হতে পারলে তা–ও কোথায় সাহায্য পাব, তার খোঁজ-খবর নেওয়া যাইত।’

‘শুটিংয়ে জুনিয়র, এক্সট্রা চরিত্রের শিল্পীদের কোনো মূল্যায়ন হয় না। অনেকে মানুষই মনে করে না। শুটিংয়ের মানুষদের অনেকে খারাপ ভাবে। তারপরও কষ্ট করে কাজ করি। সবাই যে পরিমাণ টাকা দেয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। একার জীবন হলে কষ্টে চলা যেত। সংসারে পাঁচ-ছয়জন মানুষ। মেয়েরা ছোট ছোট, মেয়ে-জামাই সঙ্গে থাকে। সবাইকে কীভাবে খাইয়ে রাখব, বুঝতে পারতেছি না। এই মুহূর্তে জীবন চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকাটা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে,’ বলেন আরজিনা।