তিন দেশের তিন থ্রিলার

‘দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইস’, ‘দ্য কিপার অব লস্ট কজেস’ ও ‘এলে’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
‘দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইস’, ‘দ্য কিপার অব লস্ট কজেস’ ও ‘এলে’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

কোন কোন দেশ ভালো থ্রিলার ঘরানার সিনেমা বানায়? আপনি হয়তো বলবেন দক্ষিণ কোরিয়ার কথা। আবার স্প্যানিশ থ্রিলারের ভক্তও কম নেই। এমনকি ডেনমার্কের পরিচালকদের থ্রিলার বানানোর বিশেষ খ্যাতি আছে। আজ না হয় এ রকম কিছু ভিনদেশি থ্রিলারের কথা বলি।

‘দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইস’ ২০০৯ সালের সিনেমা। আমার খুব প্রিয় আর্জেন্টাইন এক থ্রিলার। ভাষাটা স্প্যানিশ। সুতরাং সাবটাইটেল লাগবেই। গল্পটা এ রকম—বেনজামিন একটি উপন্যাস লিখতে চায়, কিন্তু শুরুটা কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। পরামর্শ নিতে গেল আইরিনের কাছে। আইরিন একজন জাজ। ২৫ বছর আগে নির্মমভাবে খুন হয়েছিল লিলিয়ানা নামের একটি মেয়ে। একজন ফেডারেল এজেন্ট হিসেবে সেই খুনের তদন্ত করেছিল বেনজামিন, আর তখন তার ঊর্ধ্বতন পদে ছিল আইরিন। খুনি ধরাও পড়েছিল। ঘটনা আসলে সেখান থেকেই শুরু। ভয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল বেনজামিনকে। ২৫ বছর পর সেই ঘটনা নিয়েই লেখা হবে উপন্যাস। নতুন করে খুঁজতে শুরু করল বেনজামিন। শেষটায় কিন্তু বিশাল চমক।

যাঁরা সত্তরের দশকের লাতিন আমেরিকার রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন এবং আশির দশকের সামরিক শাসনের ইতিহাস জানেন, তাঁদের বিশেষ ভালো লাগবে এই সিনেমা। অসাধারণ এই সিনেমা ২০০৯ সালে বিদেশি ভাষার সেরা সিনেমার অস্কার পায়।

‘দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইস’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইস’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

এবার একটি সতর্কবার্তা। সিনেমাটা এতই ভালো যে এর একটা হলিউড ভার্সন তৈরি করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। জুলিয়া রবার্টস ও নিকোল কিডম্যান থাকলেও আমার পরামর্শ হলো সময় নষ্ট না করাই ভালো। যেমন দেখবেন না কোরিয়ার বিখ্যাত থ্রিলার ‘ওল্ড বয়’ ও বেলজিয়ামের আরেক বিখ্যাত থ্রিলার ‘লফট’-এর হলিউড ভার্সন। বরং এখনো না দেখলে মূল সিনেমাগুলোই দেখে নিতে পারেন।

বহু বিখ্যাত ড্যানিশ থ্রিলারের মধ্যে ‘পুশার’-এর তিনটি পর্বই দেখে নিতে পারেন। তবে আমার বেশি পছন্দ ‘দ্য কিপার অব লস্ট কজেস’। কার্ল একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তারই ভুলে এক অভিযানে নিহত হয় এক সহকর্মী আর চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় তারই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কার্লকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নতুন এক বিভাগে। সমাধান হয়নি এমন সব কেস নথিভুক্ত করার কাজ। সঙ্গে দেওয়া হলো একজনকে, আসাদ। উঠতি রাজনীতিবিদ অল্পবয়সী এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে পাঁচ বছর আগে। সন্দেহ হলো কার্লের। নেমে পড়ল তদন্তে। কিন্তু কেউ সহযোগিতা করছে না। দমল না কার্ল। এতই জমজমাট থ্রিলার যে এর আরও দুটি পর্ব আছে। এই সুযোগে তা–ও দেখে নিতে পারেন। যেমন ‘দ্য অ্যাবসেন্ট ওয়ান’ এবং ‘আ কন্সপিরেসি অব ফেইথ’।

‘দ্য কিপার অব লস্ট কজেস’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘দ্য কিপার অব লস্ট কজেস’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

থ্রিলার ভক্তদের মধ্যে খুবই আছেন যাঁরা মাইকেল ডগলাস ও শ্যারন স্টোনের বেসিক ইনস্টিংক্ট দেখেননি। এর পরিচালক কিন্তু একজন ডাচ, পল ভারহোভেন। ‘এলে’ তাঁর বানানো আরেক থ্রিলার। এর ভাষা ফ্রেঞ্চ। সাইকোলজিক্যাল এই থ্রিলারের মূল চরিত্র মিশেল, একাই থাকে। এক ভিডিও গেম কোম্পানির মালিক। একজন ছেলে আছে, কিন্তু তেমন কোনো কাজ করে না। বান্ধবীকে নিয়ে থাকে, মিশেলই সব খরচ দেয়। একদিন মুখোশ পরে এক আগন্তুক ধর্ষণ করল মিশেলকে। পুলিশকে কিছু জানাল না মিশেল, বরং নিজেই খুঁজতে লাগল। সন্দেহের তালিকায় বেশ কয়েকজন। আর অপরাধীকে খুঁজতে গিয়ে মিশেল নিজেই জড়িয়ে গেল অদ্ভুত এক সম্পর্কে। ইসাবেলা হুপার্টের অভিনয়ের জন্যই তো দেখা যায়।

সবশেষ সতর্কতা। ‘বেসিক ইনস্টিংক্ট’-এর কথা বলেছিলাম। এর একটা দ্বিতীয় পর্ব আছে। পরিচালক ভিন্ন, তবে শ্যারন স্টোন আছেন। শ্যারন স্টোন থাকলেও যে সময় নষ্ট হয়, ‘বেসিক ইন্সটিংক্ট টু’ এর বড় উদাহরণ।