একটু অন্য ব্যাপার-স্যাপারের সিনেমা

জুলি ক্রিস্টি ও ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের ‘ডোন্ট লুক নাও’ সিনেমাটিকে বলা হয় মডার্ন ক্ল্যাসিক । ছবি: সংগৃহীত
জুলি ক্রিস্টি ও ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের ‘ডোন্ট লুক নাও’ সিনেমাটিকে বলা হয় মডার্ন ক্ল্যাসিক । ছবি: সংগৃহীত

আমির খান, রানি ও কারিনা কাপুরের তালাশ দেখেছেন নিশ্চয়ই। মজার কথা হচ্ছে, এই সিনেমা মুক্তির প্রায় ৩০ বছর আগে প্রায় একই ধরনের গল্প নিয়ে ব্রিটিশ পরিচালক নিকোলাস রোয়েগ বানিয়েছিলেন ‘ডোন্ট লুক নাও’। জুলি ক্রিস্টি ও ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের এই সিনেমাকে বলা হয় মডার্ন ক্ল্যাসিক। সেরা ব্রিটিশ মুভির একটি হিসেবে ধরা হয় এটিকে। এটি গথিক ঘরানার মুভি। অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার ও রোমান্স মিললে সেটি হয় গথিক ঘরানা।

গল্প বলার ধরনটা হিচককের মতো অনেকটা। সাদারল্যান্ড ও জুলি দম্পতির মেয়ে মারা যায় পানিতে ডুবে। এর কিছুদিন পর তারা যায় ইতালিতে, কাজে। সেখানে পরিচয় হয় দুই বোনের সঙ্গে। তাদের একজন আবার অন্ধ। অন্ধ বোনটি জানায় তাদের সেই মেয়ে তার মাধ্যমে যোগাযোগ করছে। মেয়েটি বলছে যে সাদারল্যান্ডের সামনে মহাবিপদ, সে যেন দ্রুত ইতালি ছেড়ে চলে যায়।

নানা কারণ বিখ্যাত এই সিনেমা। বিশেষ করে এর একটি দৃশ্যের জন্য এখনো আলোচনা বেশি। ২০১১ সালে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক পিটার বার্ট একটি বই লিখে বলেছিলেন, তিনি অনেক কিছুর সাক্ষী। এ নিয়ে আরও কিছু জানতে হলে গুগলের শরণাপন্ন হতে পারেন।

কিছু কিছু সিনেমা থাকে, যার প্রভাব নানাভাবে থেকেই যায়। ছবি: সংগৃহীত
কিছু কিছু সিনেমা থাকে, যার প্রভাব নানাভাবে থেকেই যায়। ছবি: সংগৃহীত

কিছু কিছু সিনেমা থাকে, যার প্রভাব নানাভাবে থেকেই যায়। উদাহরণ হিসেবে ‘ইন ব্রুজেস’-এর কথা বলা যায়। ব্রুজেস বেলজিয়ামের একটা জায়গা, সেখানে আত্মগোপনে আসে দুই হিটম্যান রে (কলিন ফারেল) ও কেন (ব্রেন্ডার গ্লেশন)। তারা অপেক্ষা করছে পরবর্তী আদেশের। হ্যারি (র‌্যালফ ফিনেস) তাদের বস। একদিন হ্যারি ফোন করে কেনকে আদেশ দেয় রেকে মেরে ফেলতে। শুরু হয় নতুন গল্প। থ্রিলার হিসেবে দারুণ এই সিনেমাকে ফিল্ম-উইদিন-আ-ফিল্ম বলা যায়। কেননা এর মধ্যে অনেকগুলো সিনেমার উল্লেখ আছে। তবে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত অপেক্ষা করলে মনে হবে আসলে এটিও ডোন্ট লুক নাও থেকেই অনুপ্রাণিত।

একটু–আধটু অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারের প্রতি আগ্রহ থাকলে হ্যারিসন ফোর্ড ও মিশেল পেইফারের ‘হোয়াট লাইজ বিনেথ’ দেখে ফেলতে পারেন। অধ্যাপক ড. নর্মান স্পেন্সার একজন বিজ্ঞানী। স্ত্রী ক্লারা ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আর প্রতিবেশী হলো মেরি আর ওয়ারেন। ক্লারার মনে নানা সন্দেহ প্রতিবেশীকে নিয়ে। একদিন মেরিকেও আর দেখা গেল না। ক্লারার সন্দেহ ওয়ারেনই হত্যা করেছে মেরিকে। কিন্তু ক্লারার জীবনে ঘটতে থাকে নানা রহস্যময় ঘটনা। বাথটাব নিজে থেকেই ভরে যায়, আয়নার লেখা থাকে ‘ইউ নো’ কথাটি। এর মধ্যেই আবার দৃশ্যপটে ঢুকে পড়ে ম্যাডিসন, অধ্যাপক নর্মানের ছাত্রী।

অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারের সিনেমা ‘হোয়াট লাইজ বিনেথ’। ছবি: সংগৃহীত
অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারের সিনেমা ‘হোয়াট লাইজ বিনেথ’। ছবি: সংগৃহীত

সারা কারনোচান নামের এক ডকুমেন্টারি পরিচালক চিকিৎসা করতে আসা এক বয়স্ক দম্পতির অভিজ্ঞতার আলোকে এই সিনেমার গল্পটি তৈরি করেছিলেন। পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর পরিচালক বন্ধু রবার্ট জেমেরিকের কাছে পাঠিয়ে দেন। জেমেরিক তখন টম হ্যাংকসকে নিয়ে কাস্ট অ্যাওয়ে সিনেমার শুটিং করছিলেন। টম হ্যাংকসের ওজন কমানো ও দাঁড়ি বড় করার জন্য শুটিং বন্ধ রাখতে হয়। এই ফাঁকে বানান হোয়াট লাইজ বিনেথ সিনেমাটি। থ্রিলার হিসেবেও চমৎকার এক সিনেমা।

‘ইন ব্রুজেস’ সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘ইন ব্রুজেস’ সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিচালক নাইট শ্যামালন তুমুল হইচই ফেলে দিয়েছিলেন দ্য সিক্সথ সেন্স সিনেমাটি করে। সমালোচকদের যেমন পছন্দ হয়েছিল, বক্স অফিসও মুখ ফেরায়নি। আবার পুরস্কারের তালিকাও কম দীর্ঘ নয়। একজন শিশু মনোবিদ ম্যালকম ক্রো (ব্রুস উইলিস)। কোল সিয়ার একজন কিশোর, মৃতদের সঙ্গে কথা বলতে পারে বলে সে বিশ্বাস করে। ম্যালকম তার চিকিৎসার ভার নেয়। দ্য সিক্স সেন্সের বিপুল সাফল্যের পরে নাইট শ্যামালন আরও অনেক সিনেমা করলেও এটিকে আর ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।