ছোটদের ভালো কিছু সিনেমা

‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’, ‘আ হোয়াইট বেলুন’, ‘হয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস’ ছবির পোস্টার।
‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’, ‘আ হোয়াইট বেলুন’, ‘হয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস’ ছবির পোস্টার।

১৯৪২ সালের একদিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। নাৎসিরা দখল নিয়েছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম। ইহুদি নিধন বাড়ছে, প্রতিদিন। একটা সময় তাদের হয়ে যেতে হয় অন্তরীণ। আনা তাঁর ডায়েরিতে যার নাম দিয়েছে ‘গুপ্ত মহল’। সেই ভয়ংকর দিনগুলোতে ছোট্ট মেয়ে আনার পৃথিবী কেমন ছিল, তারই বর্ণনা পাওয়া যাবে ডায়েরিতে। লুকিয়ে থাকতে থাকতে একঘেয়ে হয়ে পড়েছিল দিনগুলো। ডায়েরিতে উঠে আসা আনার অনুভূতিকে ছোট করে বললে এভাবে বলা যায়, ‘খুব একা লাগছে’।

দুর্যোগ, মহামারি কিংবা বড় সমস্যায় উঠে আসে বড়দের পৃথিবীর নানা খবর। কিন্তু ছোটদেরও যে একটা পৃথিবী আছে। সেখানে তাদেরই রাজত্ব। তাদেরও একা লাগে। তার হদিস কি বড়রা পায়?

এই দেখুন না। ইরানের ছোট্ট ছেলে আলী। বোন জাহরার এক জোড়া জুতা সেলাই করতে নিয়ে গেল বাজারে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবর্জনা ভেবে নিয়ে গেল সেই জুতা। এখন জাহরাকে কী বলবে আলী? কী বলবে তার গরিব বাবা–মাকে? তারা চেপে যায় ব্যাপারটি। আলীর জুতা দিয়েই চলে দুজনের স্কুলে আসা–যাওয়া। একটি পরিবারের মধ্যে ভাই–বোনের ভেতর গড়ে ওঠে আরেকটি পরিবার। যে পরিবারের সদস্য কেবল ছোটরা। পড়ার ঘরে হোমওয়ার্কের খাতায় লিখেই তারা জানায় তাদের পৃথিবীর খবরাখবর। একদিন আলী জাহরাকে জানায়, স্কুলের বার্ষিক ম্যারাথনে দ্বিতীয় হতে পারলে সে পাবে এক জোড়া নতুন জুতা। এই কথায় আনন্দ ধরে না জাহরার মনেও। কিন্তু আলী ম্যারাথনে হয়ে যায় প্রথম। জুতাটা পাওয়া হলো না আর।

‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের মনের পৃথিবী নিয়ে এই অনবদ্য সিনেমা মাজিদ মাজিদির। ‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’ কিংবা ‘আসমানী শিশু’ নামের এই ছবি পুরো পৃথিবীতে আলোড়ন তোলে। ছবিটিকে তুলনা করা হয় ভিত্তরিও ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস–এর সঙ্গে। ইরান এই ছবি দিয়ে প্রথমবার অস্কার মনোনয়নে নাম লেখায়, সালটা ১৯৯৮। কিন্তু সে বছর সেরা বিদেশি ভাষার ছবির পুরস্কারটি ছিনিয়ে নেয় আরেক অসাধারণ ছবি রোব্যার্তো বেনিনি পরিচালিত ও অভিনীত ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’। বলে রাখা ভালো, এই ছবিও যুদ্ধদিনের আরেক শিশুর মনের পৃথিবী নিয়ে তৈরি।

‘আ হোয়াইট বেলুন’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘আ হোয়াইট বেলুন’ ছবির দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

রুপালি পর্দায় শিশুদের পৃথিবী গড়তে ইরানি নির্মাতাদের জুড়ি নেই। খুব সাদামাটা গল্পই অনবদ্য হয়ে ওঠে তাদের কথনে। জাফর পানাহির ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’ ছবির কথাই ধরুন। নওরোজের সময় গোল্ডফিশ কিনতে বের হয় ছোট্ট রাজিয়া। মা দিয়েছে ৫০০ টাকার নোট। মাছ কিনে বাকি টাকা দিতে হবে ফেরত। এদিকে টাকা পড়ে যায় ম্যানহোলের ভেতরে। এবার কীভাবে সে বাকি টাকা মাকে দেবে? মাছই–বা কিনবে কী করে? পানাহির এই ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার তারই গুরু ঋষি চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামি।

‘হয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস’ হোম। ছবি: সংগৃহীত
‘হয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস’ হোম। ছবি: সংগৃহীত

কিয়ারোস্তামি স্যালুলয়েডে দিগন্তজোড়া বিস্তৃত ভূমি (ল্যান্ডস্কেপ) তুলে আনার অন্যতম কারিগর। ল্যান্ডস্কেপে কিয়ারোস্তামির চর্চিত ছবির মধ্যে শোনা যায় ‘টেস্ট অব চেরি’ কিংবা ‘দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস’-এর নাম। কিন্তু শিশুদের মনের পৃথিবীর ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেছেন যে সিনেমায়, তার কথা একটু কমই শোনা গেছে। ‘হয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম’ কিংবা ‘আ ওয়েডিং স্যুট’ ছবি দুটিতে কিয়ারোস্তামি খুবই সাদামাটা গল্পে বলেছেন শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক যাত্রা। এই ছবি দুটির গল্প আপাতত না বলি। কারণ, কিয়ারোস্তামির ছবিতে গল্প নয়, বিষয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পৃথিবীজুড়ে এখন চলছে মহামারি। বড়দের সঙ্গে হোম কোয়ারেন্টিন কিংবা অন্তরীণ অবস্থায় আনা ফ্রাঙ্করাও। তাদের মনের নাগাল পাচ্ছি কি? না পেলে এই ছবিগুলো হতে পারে কোয়ারেন্টিনের সঙ্গী। কথা দিচ্ছি, শিশুদের মনের পৃথিবীতে ঢুঁ মারার পথ তাতে কিছুটা সহজ হবে।