সমালোচনার কড়া জবাব দিলেন সাবিলা

জ্যারেড লেটোর সঙ্গে লাইভে বাংলাদেশ নিয়ে আলাপে সমালোচনার কড়া জবাব দিলেন সাবিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
জ্যারেড লেটোর সঙ্গে লাইভে বাংলাদেশ নিয়ে আলাপে সমালোচনার কড়া জবাব দিলেন সাবিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিও। সেখানে লাইভে আড্ডা দিয়েছেন অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা, সংগীতশিল্পী জ্যারেড লেটো এবং বাংলাদেশের ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ সাবিলা নূর। লেটো ‘সুসাইড স্কোয়াড’-এ জোকার চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এছাড়া ‘ডালাস বায়ার ক্লাব’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা সহ-অভিনেতা বিভাগে জিতে নেন অভিনয়জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি অস্কার। কোয়ারেন্টিনের দিনে নিজের বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছেন লেটো। লাইভে এসেছিলেন। ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটাতে। একসময় যুক্ত হন 'ভক্ত' সাবিলা নূর। তাঁদের কথোপকথন অনেকটা এরকম:

লেটো: হাই, কেমন আছো?
সাবিলা: আমি ভালো আছি। আপনি?
লেটো: তুমি কোথায় থাকো?
সাবিলা: বাংলাদেশ। আপনি সম্ভবত এই দেশের নামও শোনেননি। ঠিক বলছি না?
লেটো: বাংলাদেশ! তুমি আমাকে এত বোকা ভাবছ! সবাই বাংলাদেশকে চেনে। এটা অনেক বড় একটা দেশ।
সাবিলা: না, অনেকে ভাবে এটা ভারতের একটা অংশ। অনেকেই চেনে না।
লেটো: সবাই চেনে। এটা তোমার সমস্যা,আমার না। আমি চিনি, আমি ভালোবাসি। সবাই বাংলাদেশকে ভালোবাসে।
সাবিলা: কিন্তু এটা মোটেই বড় দেশ না।
লেটো: অবশ্যই বড় দেশ। আয়ারল্যান্ড, ভুটান, বার্মা (মিয়ানমার) থেকে বড়। আমি জানি, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অনেক মিল আছে। তোমরা ডাল খাও। নান খাও।
সাবিলা: হ্যাঁ, আমরা বলি ছোলা...

অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা, সংগীতশিল্পী জ্যারেড লেটো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা, সংগীতশিল্পী জ্যারেড লেটো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

নিজের দেশ নিয়ে সাবিলার এমন হীনম্মন্যতা ও অসম্মানজনক আচরণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। টেলিভিশনেরই অনেক নির্মাতা ও শিল্পী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করেন, শিল্পীর কাছ থেকে নিজের দেশ প্রসঙ্গে পরিপক্ব আচরণ আসাটাই কাম্য।

অন্যদিকে জ্যারেড লেটোর সঙ্গে কথা বলতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশি তারকা সাবিলা নূর। প্রথম আলোকে রোববার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, '‌ক্লাস সেভেন থেকে আমি জ্যারেড লেটোর ভক্ত। কথা বলতে পেরেছি বলে অবশ্যই খুব ভালো লেগেছে এবং আমি খানিকটা অবাকও হয়েছি।'

জ্যারেড লেটোর সঙ্গে কথা বলে সাবিলা যতটা না আনন্দিত, তার চেয়ে অনেক বেশি সমালোচিত হয়েছেন। সমালোচনা হয়েছে বাংলাদেশকে উপস্থাপনের ধরনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছেন, নিজের দেশকে সাবিলা যেভাবে জ্যারেড লেটোর কাছে তুলে ধরেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। এমন কথা শোনার পর ভীষণ অবাক হয়েছেন সাবিলা। এই ধরনের মন্তব্যকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের 'মুদ্রার ওপর পিঠ' অর্থাৎ নেতিবাচক দিক মনে করছেন তিনি।

সমস্ত সমালোচনার জবাব দিয়ে সাবিলা বলেন, 'আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের আচরণগুলো কতটা ভয়ংকর ও আক্রমণাত্মক হয়ে যাচ্ছে। পান থেকে চুন খসলেই এতই অসহনশীল হয়ে যাচ্ছি, যে কাউকে ভয়ংকর অপরাধীর তকমা দিয়ে দিচ্ছি। সাধারণ মানুষ ভাবে, আমরা সবাই (তারকারা) রোবটের মত নির্ভুল জীবনযাপন করি। সবাই এতই পারফেক্ট যে, কোনো মানবিক উচ্ছ্বাস প্রকাশেও আমরা দাঁড়ি কমা সেমিকোলন মেপে কথা বলি।'

সাবিলা নূর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সাবিলা নূর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

সাবিলা এও বলেন, 'আমাদের আবেগ থাকতে নেই, আনন্দ প্রকাশের সহজ স্বাভাবিক অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ নেই। আমার জীবনে রোবটিক হতে চাইনি। একটি মানবিক জীবনই আমার ভালো লাগে। যেখানে আমি প্রিয় কোন কিছুর সামনে আবেগের প্রকাশে জটিলতা চাই না, আনন্দ প্রকাশে কৃপণতা করতে চাই না। উচ্ছ্বাস আসলে শত সহস্র হিসেব করে প্রকাশ করতে চাই না, সহজ স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে চাই প্রিয় মানুষের সঙ্গে। তবে পেশাগত, অফিশিয়াল ক্ষেত্রে আমি সবচেয়ে বেশি হিসেব করে সঠিক কাজ করি। কথা বলি, প্রতিটি অক্ষর মেপে- আমার শিক্ষা, জ্ঞান দিয়ে চিন্তা করে।'

সাবিলা বলেন, ‌ আমার কাজ দেখে অনেক ভক্ত যখন কথা বলতে আসেন, তখন অনেক অদ্ভুত আচরণও করেন। অনেক সময় অনেকটা বেশিই করে ফেলেন ছবি তুলতে গিয়ে। কিন্তু তাদের তো আমি কখনোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানি করি না। কারণ আমরা বুঝি যে এটা সে আবেগ থেকে করে ফেলেছে। কোন অপরাধ করার প্রবণতা থেকে নয়। আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ এক একজনের একেক রকম। আবেগ দিয়েই আবেগ মাপা উচিত। তাহলেই আমরা মানবিক হতে পারব, সহনশীল হতে পারব।'

বাংলাদেশ নিয়ে সাবিলার বক্তব্য: আমি আমার বাংলাদেশকে একটু বেশিই ভালোবাসি। তা না হলে হয়তো আমেরিকাতেই থেকে যেতাম। এখানে ফিরে আসতাম না। নিজের দেশের প্রতি শ্রদ্ধা আছে বলেই বাংলাদেশের জন্য কাজ করি। আর বাংলাদেশ নিয়ে গর্ববোধ করি। বাংলাদেশেকে নিয়ে যেন বাইরের মানুষ যেন ভুল কিছু না জানে। পৃথিবীর সবাই যেন বাংলাদেশের সাফল্যকে জানে, সেটাই মনে প্রাণে চাই। ইচ্ছাকৃত কোন ভুল কথা অবশ্যই বলব না, এটুকু বোঝার জন্য অনেক বেশি শিক্ষিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই, একটু সহজ স্বাভাবিক মানবিক উচ্ছ্বাস প্রকাশের দৃষ্টিকোণ দেখলেই বোঝার কথা। তবে এ জন্য ইচ্ছাকৃত ব্যক্তিগত আক্রমণ, গালিগালাজ আর হয়রানি করা কিন্তু অপরাধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিটি লাইক, মন্তব্য, শেয়ার আমাদের শিক্ষা আর পারিবারিক পরিচয়কেই প্রকাশ করে। কাউকে কষ্ট দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটুক।'