ফেসবুক, ইউটিউবে হচ্ছে এবারের বর্ষবরণ

ফেসবুক, ইউটিউবে হচ্ছে এবারের বর্ষবরণ
ফেসবুক, ইউটিউবে হচ্ছে এবারের বর্ষবরণ

নতুন ভোর নিয়ে নতুন বছর ঠিকই আসবে। কিন্তু মেলা জমবে না বটতলা-হাটখোলা। সবাই জড়ো হয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার অনুমোদন এবার পাওয়া যায়নি। কবিগুরুর অভয়বাণী বুকে নিয়ে তাই ঘরে বসেই এবার গাইতে হবে, ‘নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়...।’

এ বছর উৎসব নয়, দেওয়া হয়েছে দুর্যোগ প্রতিরোধের ডাক। বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে বড় আয়োজন বৈশাখের প্রথম প্রহরে গানে গানে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের সেই আয়োজন এ বছর করছে না ছায়ানট। ১৯৬৭ সালে শুরু হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ সাল ছাড়া এ উৎসব কখনোই বন্ধ হয়নি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাঙালির সবচেয়ে বড় এ উৎসব হবে বিটিভি ও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে গান সম্প্রচারের মাধ্যমে। সকাল সাতটা থেকে সেখানে শোনানো হবে কিছু স্বদেশপ্রেম ও জাগরণের গান।

ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সরাসরি গান করতে পারব না। কিন্তু ঘরবন্দী মানুষের জন্য টেলিভিশনে থাকবে উৎসবের গান। গত তিন বছর রমনার বটমূলে আমরা যে গানগুলো করেছি, সেগুলোর ধারণ করা অংশের সংকলন নিয়ে একটি নতুন অনুষ্ঠান দেখা যাবে সেখানে। নতুন সংযুক্তি হিসেবে থাকবে সংগঠনের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের শুভেচ্ছা বক্তব্য। এখন সময় দুর্যোগ প্রতিরোধের। সংকটকালে সবার ভেতরে একটা শক্তিও দরকার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে টেলিভিশনে গান সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ঘর থেকে ফেসবুক লাইভে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: ফেসবুক থেকে
ঘর থেকে ফেসবুক লাইভে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: ফেসবুক থেকে

‘অভিনয়শিল্পী সংঘ, বৈশাখী তরঙ্গ-১৪২৭’ স্লোগান সামনে রেখে ‘বৈশাখী তরঙ্গ’ নামে অনলাইনভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। এটি সরাসরি শিল্পীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আজ বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলবে তারকাদের অনুষ্ঠান। ছোট পর্দার বিভিন্ন তারকার অভিনয়, গান, গল্প, নাচ, রান্নাসহ মজার ঘটনা দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো অনুষ্ঠান। করোনা-সতর্কতার এই সময়ে ঘরে থাকা দর্শকদের বিনোদন দিতেই এ আয়োজন।

সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘এখন অনলাইনের যুগ। আমাদের দীর্ঘদিন দেখা হচ্ছে না। কার কেমন সময় কাটছে, কে কী করছেন, সেটা নিয়েই বছরের নতুন দিনে এ আয়োজন। এখানেই ঘরে থেকে দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করবেন তারকারা।’

জাহিদ হাসান, ফজলুর রহমান বাবু, তৌকীর আহমেদ, আহসান হাবীব নাসিম, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, মৌ, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মম, তাহসান খান, রাহুল আনন্দ, আনিসুর রহমান মিলন, স্বাগতা, জামিল, নাদিয়া আহমেদ, শামীমা তুষ্টি, মিশু সাব্বির, সিয়াম আহমেদসহ দেশের প্রায় ৫০ জন প্রথিতযশা শিল্পী এতে অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠান কমিটির সমন্বয়কারী রওনক হাসান। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে থাকবেন সাজু খাদেম।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বললেন এবার সুরের ধারা তেমন কিছুই করছে না। ছবি: সংগৃহীত
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বললেন এবার সুরের ধারা তেমন কিছুই করছে না। ছবি: সংগৃহীত

সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দ ব্যানারে বিভিন্ন শাখার সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে দিনভর নববর্ষ পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘এক সুরে বাজে একলা বাজানো শাঁখ, জীবনের জয়গানে আমাদের বৈশাখ’ স্লোগান নিয়ে নানা ধরনের আয়োজনে নববর্ষ উদ্যাপন শুরু হয়েছে সকাল ১০টায়, শেষ হবে রাত ১১টায়। সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দের ফেসবুক পেজে লাইভে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হবে। আয়োজনে থাকছে গান, নাচ, পাপেট, আবৃত্তি, ওরি গামি, আড্ডা ইত্যাদি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় থাকবেন সামিনা লুৎফা ও মোহাম্মদ আলী হায়দার, সেলিনা শেলী ও মাসুম রেজা এবং রুমা মোদক ও অনিরুদ্ধ কুমার ধর। আয়োজনে অংশগ্রহণ করছেন আফজাল হোসেন, তারিক আনাম খান, মোহাম্মদ বারী, বন্যা মির্জা, মৌটুসি বিশ্বাস, দেবলীনা সুর, জ্যোতি সিনহা, সামিনা হোসেন প্রমুখ।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বললেন এবার সুরের ধারা তেমন কিছুই করছে না। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আমি একটা অনুষ্ঠান করেছি, আজ এটি দেখানো হবে। এই অনুষ্ঠানে সুরের ধারার বাইরের শিল্পীরাও আছেন। তিনি বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং ছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই আমরা কাজটা করেছি। ৫০ মিনিটের এই অনুষ্ঠানের নাম ‌‘এসো হে বৈশাখ’। চ্যানেল আইয়েরও অনুষ্ঠান করলাম।

ঘর থেকে ফেসবুক লাইভে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সকাল ১০টা থেকে নিজেদের ফেসবুক পেজে তারা গান, আবৃত্তি, যন্ত্রসংগীত ও নাচ করবে। ঢাকার শিল্পীদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা ও বিদেশি শাখার শিল্পীদেরও পরিবেশনা শুরু হয়েছে।

সাংস্কৃতিক সংগঠন সাধনার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ইভেন্ট পেজে সকাল ১০টা থেকে দেখানো হচ্ছে বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘বাক্সবন্দী বৈশাখ’। সেখানে আছে নাচ, গান, আবৃত্তি ও পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে বার্তা। সাধনার শিল্পীরা ছাড়াও এ প্রযোজনায় অংশ নিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, অভিনয়শিল্পী নাজনীন চুমকি, সংগীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিল, সেঠ পান্ডুরাঙ্গা, আরাশ, রাহা ও সৈয়দ রাশেদ ইমাম তন্ময়।

থিয়েটার পত্রিকা ক্ষ্যাপার পয়লা বৈশাখের আয়োজনে ফেসবুক লাইভ সম্প্রচারে সকাল ৯টায় কলকাতার জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী ও উপস্থাপিকা রিনি বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। ছবি: ফেসবুক থেকে
থিয়েটার পত্রিকা ক্ষ্যাপার পয়লা বৈশাখের আয়োজনে ফেসবুক লাইভ সম্প্রচারে সকাল ৯টায় কলকাতার জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী ও উপস্থাপিকা রিনি বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। ছবি: ফেসবুক থেকে

থিয়েটার পত্রিকা ক্ষ্যাপার পয়লা বৈশাখে রয়েছে ধারাবাহিক ৫টি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার। সকাল ৯টায় কলকাতার জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী ও উপস্থাপিকা রিনি বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তি-আড্ডায়। বেলা ১২টায় পাপেট শো পরিবেশন করেছে শিশুশিল্পী চন্দ্রবিন্দু তোতা ও তার আবোলতাবোল পাপেট থিয়েটার, বিকেল ৪টায় আবৃত্তি-আড্ডায় অংশ নেবেন দেশের নন্দিত আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার এবং সবশেষে রাত ১১টায় উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও শিমূল ইউসুফ।
ক্ষ্যাপার ফেসবুক লাইভ সম্প্রচারের দায়িত্বে রয়েছেন পাভেল রহমান, অপু মেহেদী, প্রসেনজিত রায়, মাহফুজ সুমন, শাহনাজ জাহান ও শাকিল মাহমুদ।
এই আয়োজন লাইভ দেখা যাবে www.facebook.com/Khepa'র এই লিংকে।

এ ছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠান সকাল সাড়ে আটটা থেকে সব টেলিভিশনে একযোগে সম্প্রচার করা হবে।