বছরে ১০ দিন পুরো পৃথিবী লকডাউন করে দিতে হবে

জাহীদ হাসান, ছেলে জারীফ ও মেয়ে পুষ্পিতা। ছবি: সংগৃহীত
জাহীদ হাসান, ছেলে জারীফ ও মেয়ে পুষ্পিতা। ছবি: সংগৃহীত
>করোনায় সব থেমে আছে। কাজ নেই কারোরই। বাসায় বসে সময় কাটাচ্ছেন অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক জাহিদ হাসান। কথা প্রসঙ্গে জানালেন কীভাবে সময় কাটছে, মনের অবস্থা কেমন, করোনা পরবর্তী কেমন সময় প্রত্যাশা করেন।

কবে থেকে ঘরে বসে সময় কাটছে?

চার সপ্তাহ ধরে বাসায় আছি। স্ত্রী মৌ, দুই সন্তান পুষ্পিতা ও জারীফ অবশ্য আরও আগে থেকে ঘরে।

শুটিংয়ের কারণেই কি দেরি করে ঘরে ঢুকলেন?
একদমই তাই। গত ১৮ মার্চ পর্যন্ত শুটিং ছিল। ‘জরুরি ডিভোর্স’ নামের একটি নাটকের শুটিং করেছি। এটি ‘জরুরি বিবাহ’ নাটকের সিক্যুয়েল।

পয়লা বৈশাখ গেল, সামনে ঈদ, নিশ্চয় লম্বা শিডিউল ছিল?
একদমই তাই, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত টানা শুটিংয়ের শিডিউল ছিল। ২৫ এপ্রিল দুই সন্তানকে নিয়ে মৌ কানাডা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। পরে আমারও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সব উলটপালট করে দিল।

করোনা নিয়ে অনেকের অনেকরকম উপলব্ধি। আপনার উপলব্ধি কী?
আমরা যাঁরা এখন পৃথিবীতে আছি, তারা কিন্তু শুনেছি, এর আগেও পৃথিবীতে নানা মহামারি এসেছে। এবার নিজ চোখে দেখলাম। কেউ বলছে, প্রকৃতির বিচার। ধনী, গরিব, সুন্দর-অসুন্দর যত যা আছে, সবাইকে কিন্তু থামিয়ে দিয়েছে করোনা। আমার দৃষ্টিতে করোনা আমাদের আগামী প্রজন্মকে একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতেই এমনটা হচ্ছে। প্রত্যেকটা ধর্মে উপোসের রীতি আছে। এই সময়টায় সবকিছু থেমে আছে, এটা হয়তো পৃথিবীর ফ্যাস্টিং। সে তার মতো করে কাজটি করছে। তা না হলে নিয়ম করে ১০০ বছর পর পর এমন মহামারি কেন আসবে।

কেউ তো আবার বলে পৃথিবীতে মানবজাতি প্রকৃতির ওপর অনেক টর্চার করেছে, তাই হয়তো ...
আমরা অনেকে বুঝতে চাই না, গাছপালা, সাপ, ব্যাঙ যত পশুপাখি, সবই পৃথিবীর সুন্দর সমন্বয়ের জন্য। এটা ঠিক, আমরা অবাধে গাছ কেটেছি, নদী ভরাট করেছি, পরিবেশ দূষণ করেছি, অকারণে রাস্তায় হর্ন বাজিয়েই চলছি। এই যে এত এত দূষণ হচ্ছে, এটারও তো একটা প্রভাব থাকবে।

জাহীদ হাসান ও মৌ। ছবি: সংগৃহীত
জাহীদ হাসান ও মৌ। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে এখন কোনো হানাহানির খবর নাই। সবাই করোনা মোকাবিলা নিয়ে ভাবছেন। সবাই একটা জায়গায় মিলিত হয়েছেন, এটাও তো খারাপ না, কী বলেন?
করোনা ভয় দিয়েছে, ভালোবাসা মানুষকে একত্রিত করেছে। মানুষ তো সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা প্রায়ই বলি, লোক দেখি, মানুষ দেখি না। মানুষ দেখলেও মনুষ্যত্ব দেখি না। করোনার এই সময়ে সবাই সবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানবিকতা তো আছে দেখছি। এসবে আমি অনেক খুশি। অনেকে দেখছি যে যার মতো করে সহযোগিতা করছেন। আবার কেউ কেউ লোক-দেখানো কাজও করছে।

করোনা কি তাহলে কোনো শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন?
করোনা চরম শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। এই শিক্ষাটা আমরা যেন ভুলে না যাই। করোনা যে শিক্ষাটা দিয়ে যাচ্ছে, তা যেন সব সময় আমরা মেনে চলি। নিয়মিত হাত ধোব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকব, মানবতা দেখাব, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যাব। অহেতুক মানুষকে হয়রানি কিংবা বিপদে ফেলে কোনো লাভ নেই সেটাও উপলব্ধি করতে হবে। মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, এই উদাহরণ যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলেই ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে।

করোনা নিশ্চয়ই পৃথিবী থেকে একদিন বিদায় নেবে। এরপরের পৃথিবী নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
যে অবস্থা হয়েছে, কে বাঁচব, কে বাঁচব না, কেউ বুঝতে পারছি না। আমি যদি বেঁচে থাকি, সবাইকে এই সময়টার কথা বারবার মনে করতে বলব। পুরো পৃথিবীর কাছে আমি খুব সামান্য একজন মানুষ, আমার কথাটা হাস্যকর মনে হতে পারে, তারপরও বলতে চাই। পৃথিবীর নীতি নির্ধারকেরা মিলে আলোচনা করে ঘড়ির কাটা ধরে বছরের ৫ থেকে ১০ দিন পুরো পৃথিবী লকডাউন করে দিতে হবে। এই লকডাউন হবে পৃথিবীর সৌন্দর্যের জন্য। এর ফলাফল আমরা ভোগ করতে পারব।

কেন এমন মনে করছেন? এতে তো অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়।
ক্ষতির চিন্তা করে লাভ নেই। পুরো পৃথিবী যে এখন দিনের পর দিন বন্ধ হয়ে আছে, তাতে ক্ষতি হচ্ছে না? এই ক্ষতির তুলনায় ওসব কিছুই না। কিছুটা ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে, পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হবে। আমাদের ভালোর জন্য এটা করতে হবে। জেনে বুঝেই করতে হবে। পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত করার জন্যও সেটা দরকার। একটা পরিবারে এত কাজ, তা এভাবে ঘরে না থাকলে বুঝতে পারতাম না। এখন তো নিজেকেই সবকিছু করতে হচ্ছে।

জাহীদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জাহীদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত

সবাই সবাইকে সহযোগিতা করার কথা বলছিলেন। এই সহযোগিতার নামে লোক-দেখানোও হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।
লোক দেখানো জিনিসটা একদিন না একদিন ধরা পড়বে। আমি খাবারের প্যাকেট বানালাম, তারপর দেওয়ার সময় ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম, ফেসবুকে লাইভ দিলাম, এডিট করে আবার ইউটিউবে দিলাম, এসব মোটেও উচিত না। কেউ একজন হয়তো অভাবের তাড়নায় কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে সহযোগিতা নিচ্ছে, অথচ তাঁর ছবি কিংবা ভিডিও আমরা প্রকাশ তরে দিচ্ছি, এসব কেমন সহযোগিতা! সহযোগিতা করার বিষয়টি নিয়ে ধর্মেও স্পষ্ট বলা আছে, ডান হাতে দান করলে, বাঁ হাতও যেন না জানে। কাউকে সহযোগিতা করলে সম্মানের সঙ্গে করা উচিত। কোনোভাবেই সহযোগিতা করা মানুষটিকে যেন খাটো না করা হয়। বিষয়টা এমন না যে, সহযোগিতা করে আপনি বিশাল বড় কিছু হয়ে গেছেন। যে সত্যিকারের সহযোগিতাকারী, তিনি গোপনে সেটা করেন। কাউকে মন থেকে সহযোগিতা করলে, আনন্দ পাওয়া যায়। সহযোগিতার নাম করে ফেসবুকে লাইভ দেওয়া, পত্রপত্রিকায় কাভারেজ চাওয়া, এসবে পুণ্যের চেয়ে উল্টো পাপ হবে।

ঘরে যেহেতু আছেন, নিশ্চয়ই রান্নাবান্নাও করছেন। কী রান্না করলেন এ কদিনে?
বাসায় এখন কাজে সহযোগিতা করার কেউ নাই। পরিবারের সবাই সবার কাজ করছি। আমি নিয়মিত রান্না করি। রান্না করতে খুব ভালোবাসিও। খিচুড়ি, গরুর মাংস, মাছ, সবজি, ডাল প্রতিদিনই রান্না করছি। আমি করি একটা, মৌ করে আরেকটা। আমার মেয়েও বিকেলে নাশতার সময় কেক বা পাস্তা বানায়। জারিফও দেখা যায় পাউরুটি দিয়ে কিছু একটা বানাচ্ছে। এই সময়টায় আমাদের পরিবারের সবার রান্নার প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে।

করোনা ভাইরাস নাটকের জগতের জন্যও একটা বড় ধাক্কা। কি বলেন?
অনেক বড় ধাক্কা, এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা মুশকিল। আমরা বড় একটা সেশন জটে পড়ে গেছি। সার্বিকভাবে চেষ্টা করতে হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে চ্যানেল ও এজেন্সিসহ নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে বসতে হবে। সংকট কাটিয়ে ওঠার উপায় বের করতে হবে।