এই সময় রোগীদের সহমর্মিতা দেখানো উচিত

শাহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
শাহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
>করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অভিনয়শিল্পী শাহেদ আলীর মেজ মামা আমিনুর রশীদ। অসুস্থ অবস্থায় তাঁর সেবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি ও তাঁর ছোট বোন আফরোজা লাবণী। অনুপ্রেরণা হিসেবে পাশে ছিলেন অভিনয়শিল্পী স্ত্রী দীপা খন্দকার। গতকাল শনিবার দুপুরে কথা হয় মায়ের বাসায় আইসোলেশনে থাকা শাহেদ আলীর সঙ্গে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আপনার মামা মারা গেলেন। তাঁর সেবা করতে ভয় হয়নি?
প্রথমে জানতাম না মামা করোনায় আক্রান্ত। নিউমোনিয়া নিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। নিউমোনিয়া ও করোনার উপসর্গ একই হওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ভর্তি হওয়ার পরদিনই তিনি মারা যান। পরে জানতে পারি, মামা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

তারপর?
আমি মানসিকভাবে ভীষণ শক্ত ছিলাম। ছোট বোনটা একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল। তাকে আমি সাহস দিয়েছি। আমার বোনটা মামার সবচেয়ে কাছের ছিল। অসুস্থ মামাকে হাতে ধরে শোয়ানো থেকে শুরু করে সবকিছু সে করেছে। করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর আমি বলেছি, এসব কোনো ব্যাপার না। তোমার যদি করোনা পজিটিভও হয়, কিছুই হবে না। শুধু মানসিকভাবে শক্ত থাকো, অবশ্যই কাটিয়ে উঠবে। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে অনেকে এই রোগ থেকে বেঁচে উঠছেন। অন্য সমস্যা থাকায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকে মারা গেছেন। মনোবল শক্ত রাখো, মনের জোরটাই বড়।

করোনার এই সময়ে স্বাভাবিক রোগীর মতো করে তাঁর পাশে থাকতে পারলেন কী ভেবে?
সতর্কতা অবলম্বন করে এই সময় রোগীদের সহমর্মিতা দেখানো উচিত। বিপদে সবার পাশে দাঁড়ানো উচিত। হয়তো মামার কারণে আমাদের আবেগ কাজ করেছিল। তাঁর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল আমাদের। কৃতজ্ঞতাও ছিল। ভেবেছি, আমার কোনো বিপদ হলে এভাবে সহমর্মিতা দেখিয়ে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন। আমরা তো আগে–পিছে কিছু ভাবিনি। দুজনে শুধু ভেবেছি, করোনার এই সংকটে আমাদের সবচেয়ে বেশি অসুস্থ মামা ও তাঁর পরিবারের পাশে থাকা দরকার। মামার সন্তানেরা ছোট, মামিকে যৌথ পরিবার সামলাতে হয়, তাই আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে।

শাহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
শাহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালের অভিজ্ঞতা কেমন?
মানুষের মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ শেষ। মানুষ আর মানুষ নেই। করোনা–আতঙ্কে মানুষ অন্য প্রাণী হয়ে গেছে। মানুষ এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ভয় বাড়াচ্ছে। এখানে তো ভয়ের কিছু নেই। করোনা আজ আছে, কাল চলে যাবে। কিন্তু আমরা যে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার একটা চর্চায় চলে যাচ্ছি, এটা আমাদের মানবিকতা কেড়ে নেবে, সমাজকে নষ্ট করে দেবে। এটাকে জয় করতেই হবে।

আপনার স্ত্রী দীপা খন্দকার কী বলেছিলেন?
আমার মানসিক শক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দীপা। মামার অসুস্থতায় সাহস দিয়েছে, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বলেছে, মামার পাশে থেকো।

আপনি এখন আইসোলেশনে?
আমি ও আমার বোন দুজনই ছয় দিন ধরে আইসোলেশনে। দুজনেরই পরীক্ষা হয়েছে। মামার পরিবারের সবার কোভিড-১৯ টেস্ট হয়েছে। সবার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আমাদের বাসার উল্টো দিকে মা থাকেন, আমি সেখানে। আমার যা কিছু লাগছে, প্রতিদিন দীপাই দিচ্ছে। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হচ্ছে।

শাহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
শাহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত

কী করছেন?
বই পড়ছি, প্রার্থনা করছি। সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে। সময় খুব ভালোভাবে কেটে যাচ্ছে।

করোনা শেষ হলে প্রথম কী করবেন?
পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর কোনো জায়গায় বেড়াতে যাব। কয়েকটা দিন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকব। একই সঙ্গে বাবা, মামাসহ মুরব্বিদের কবর জিয়ারত করব। তখন যদি কেউ অসুবিধায় থাকেন, সাধ্যমতো তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।